স্বদেশ ডেস্ক:
প্রতিবছর লাখো লোকের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। এদের মধ্যে ২৫ ভাগের মৃত্যু হয় হাসপাতালে পৌঁছার আগেই। হার্ট অ্যাটাক হয়েও অনেক সময় বেঁচে থাকতে হয় নানা অক্ষমতা আর হঠাৎ মৃত্যুর ভয় নিয়ে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, হৃদরোগে যারা মারা যায়, তাদের অধিকাংশের বয়স থাকে ৪০ থেকে ৬০-এর মধ্যে। আর এ সময়টি হলো জীবনের সুন্দরতম একটি সময়, যখন তারা পরিবার, সমাজ এবং জাতির জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রাখতে পারতেন।
একসময় মনে করা হতো শক্তিশালী ওষুধ, বাইপাস সার্জারি বা এনজিওপ্লাস্টি ছাড়া হৃদরোগ সারানোর আর কোনো উপায় নেই। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন হয়, তেমনি রোগাক্রান্ত হলে প্রয়োজন চিকিৎসার। তাই হৃদরোগের চিকিৎসা হিসেবে প্রচলিত বহুল আলোচিত দুটি পদ্ধতিÑ বাইপাস ও স্ট্যান্টিং। এ দুটিই অপারেশন, যা খুব ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় রোগীর অবস্থা বুঝে ডাক্তাররা বাইপাস সার্জারি বা স্ট্যান্টিং করার ঝুঁকি নেন না। এমন পরিস্থিতিতে কি রোগী নিজেকে ভাগ্যের হাতে সঁপে দেবেন? নিশ্চয় নয়। বেঁচে থাকার জন্য খুঁজবেন বিকল্প পথ। অপারেশন বা কাটা-ছেঁড়া ছাড়াও বিভিন্ন পদ্ধতিতে হৃদরোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। সফলতাও কম নয়।
আর্টারি একবার ব্লক হওয়া শুরু করলে বাইপাস সার্জারি কিংবা এনজিওপ্লাস্টি ছাড়া কোনো পথ নেই। চিকিৎসকদের এই রক্ষণশীল চিন্তার মর্মমূলে প্রথম আঘাত হানেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ডিন অর্নিশ। রোগ ও অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য প্রথম প্রয়োজন এই দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবনদৃষ্টির পরিবর্তনের সবচেয়ে সহজ পথ হলো হলিস্টিক পদ্ধতি। বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালেক সম্প্রতি এক মুক্ত আলোচনায় প্রদত্ত ভাষণে বলেন, হৃদরোগের অনেক আধুনিক চিকিৎসা এখন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। কিন্তু এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস অপারেশনসহ এসব চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ ছাড়া ওষুধের পেছনেও হৃদরোগীদের খরচ খুব একটা কম নয়। আর এ সব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে মেডিটেশন এবং লাইফস্টাইল ভিত্তিক বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।
হলিস্টিক পদ্ধতিতে (ডায়েট ম্যানেজমেন্ট, স্ট্রেস ফ্রি টেকনিক, মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম, নিউরোবিক, আকুপ্রেশার, চিলেশন থেরপি ও ইসিপি) চিকিৎসা হচ্ছে এখন উন্নত বিশ্বেও। হৃদরোগীর খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং নিয়মিত কিছু যোগব্যায়াম করালে রোগী সুস্থ থাকতে পারেন। এগুলো অনুসরণ করলে নতুন করে রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে না এবং ধমনির ব্লক সরিয়ে হৃৎপি-ে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চারিত হবে। এটি হলো বিকল্প পদ্ধতি, যা খুবই কার্যকর।