স্বদেশ ডেস্ক:
ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৪ হাজারেরও বেশি। সরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা ৪০-এ দাঁড়িয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনে নানা পর্যায়ে কাজ করছে সরকার। সাধারণ মানুষকে ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে বারবার। মানুষও ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে উঠছে। কিন্তু প্রশাসনের হৃৎপিণ্ড বাংলাদেশ সচিবালয়ের চিত্র যেন একটু ভিন্ন।
সচিবালয়ের প্রত্যেকটি ভবনের সাধারণ টয়লেটগুলো (কমন বাথরুম) খুবই অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর। সচিবালয়ে প্রায় দেড়শ পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকলেও টয়লেটগুলোর ভেতরের অবস্থা যেন তা বলে না। এডিস নিয়ে এমন সতর্কাবস্থায়ও সচিবালয়ের টয়লেটগুলোয় রাখা ডাস্টবিনে নোংরা পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সচিবালয়ে যেসব ড্রেন আছে, সেগুলোয়ও জমা পানির মধ্যে দেখা গেছে প্রচুর মশার লার্ভা।
গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা দেছে, সচিবালয়ের উত্তর-পূর্ব কোনে প্রচুর ময়লা-আবর্জনা জমা হয়েছে। আশপাশে কর্মরত কয়েকজন জানান, এই ময়লা বহুদিনের। অথচ সেগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না। ড্রেনগুলোয় জমেছে প্রচুর ময়লা পানি, যা সরছে না। ফলে ড্রেনগুলোর ওপর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এখানে প্রায় দেড়শ পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন। তাদের কাজই হলো ড্রেন, টয়লেট ও আঙিনা পরিষ্কার করা। কিন্তু এসব কাজ নিয়মিত হচ্ছে বলে মনে হয় না। কর্তৃপক্ষও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ নিয়মিত তদারিক করছে এমনটি বলা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সচিবালয় সব সময় পরিষ্কার রাখার বিষয়ে আমরা সচেতন। মশা নিয়ন্ত্রণে একটি ফগার মেশিন আছে; ওষুধও ছিটানো হচ্ছে। নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়। এ ছাড়া ড্রেন পরিষ্কারে আমরা মাঝে মধ্যে কেরোসিন ব্যবহার করি। টয়লেটগুলো পরিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জনবল নেই। তাই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী চেয়েছি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। এই জনবল নিয়োগ হলে পরিচ্ছন্নতার কাজ আরও দ্রুতগতিতে হবে।
তবে একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমি নিজে প্রতিদিনই আমার ওয়াশরুমের কমোডের ঢাকনা ফেলে যাই। বালতি ও মগ উল্টে রেখে যাই। অথচ অভিযোগ শুনি বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী দুপুরের খাবার খেয়ে উচ্ছিষ্ট ফেলেন টয়লেটের ডাস্টবিনে। তাদের কেউ কেউ আবার জানালা দিয়েই ভবনের নিচে উচ্ছিষ্ট ফেলেন। এতে সচিবালয় আঙিনা অপরিষ্কার হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচেতন না হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কতক্ষণইবা এসব ঠিক রাখবেন। তাদের বিবেক জাগ্রত না হলে এই ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখা কষ্টকর।
বেশ কয়েকটি টয়লেট কক্ষে ঢুকে দেখা গেছে, বেসিনের পাশে রাখা ডাস্টবিনে খাবারের উচ্ছিষ্ট জমিয়ে রাখার ফলে সেখানে প্রচুর মশা-মাছি উড়ছে। উৎকট গন্ধে সেখানে দাঁড়ানোই দায়। সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের ওয়াশরুমের এমন নোংরা পরিবেশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানসিক দৈন্যের প্রকাশ বলে মনে করেন কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
গত ররিবারও সচিবালয়ের ক্লিনিকে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান মিলেছে। সাধারণ অ্যারোসোল স্প্রে করেও লার্ভাগুলো মরেনি। পরে সেগুলো কাগজ দিয়েই পিষে মারা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী এক সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।