শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আজ বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

আজ বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার। ১৯৭৮ সালের এই দিনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে জন্ম হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটির। তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বিএনপি এমন একটি সময়ে ৪৪ বছরে পা রাখছে, যখন দলটি ‘দমন নীতি’র বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটি বৃহৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের অভ্যন্তরে নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস চলছে পুনরায় সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার। দলটির টার্গেট ২০২৩ সালের শেষে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি সেই নির্বাচন ঘিরে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা কঠিন পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্কল্প ঘোষণা করেছে। প্রত্যাশা করছে, ‘আন্দোলন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন’ আদায়ের মধ্য দিয়ে জনগণের রাজনৈতিক ভাগ্য বদলানোর।

আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে মুক্ত : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ক্ষণে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ১২-১৩ বছর ধরে একটা ফ্যাসিবাদী সরকারের রোষানলে আছি, যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। যারা এ দেশের মানুষের সব আশা-আকাক্সক্ষা ও সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এমন কোনো কাজ নেই যে তারা করছে না। এ কারণেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে, ইতিহাসের প্রয়োজনে। থযখন বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হয়েছে, তখনই এই দলটি প্রতিষ্ঠা করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের মানুষের সামনে একটা নতুন আশার আলো সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। আমরা আশা করছি, জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে মুক্ত, এটাই হচ্ছে বিএনপির মূল লক্ষ্য।

চাঙ্গা সংগঠন, আন্দোলনের প্রস্তুতি : চার দশক আগে রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় বিএনপির। দীর্ঘ এই পথপরিক্রমায় দলটি বহুবার সীমাহীন প্রতিকূল পরিস্থিতিও মোকাবেলা করেছে। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত এক-এগারো সরকারের সময়ে দলটির ওপর যে মামলা, হামলা, জেল, জুলুম শুরু হয়েছিল তার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা এখন এক লাখেরও বেশি। দলটির তথ্য অনুযায়ী, এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩৫ লাখেরও বেশি। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এদের বেশির ভাগই বিরোধী দলের নেতাকর্মী। এর বাইরে গুম হয়েছে পাঁচ শতাধিক।

ঢাকায় রাজনৈতিক ভিত শক্ত করতে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা হয়েছে। মহানগরের সব ওয়ার্ড ও থানায় পর্যায়ক্রমে নতুন কমিটি আসছে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলো সাজানোর কাজও প্রায় শেষ। জেলা-উপজেলা পর্যায়েও সাংগঠনিক গতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তৃণমূলে চলা বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে তা টের পাওয়া যাচ্ছে। বাধা উপেক্ষা করেই প্রায় সর্বত্র নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি মানুষের নজর কাড়ছে।
সাংগঠনিক প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজনৈতিক কলাকৌশল নির্ধারণের কাজেও দলটি ব্যস্ত সময় পার করছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে বিরোধী দলগুলোকে সাথে নিয়ে একটি ‘যুগপৎ আন্দোলন’ গড়ে তুলতে চায় দলটি। এই লক্ষ্যে প্রতিটি দলের সাথে আলাদা বৈঠক শেষ করেছে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত দুইটি জাতীয় নির্বাচনের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতার আলোকে এবার তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় এজেন্ডা ইতোমধ্যে নির্ধারণ করে ফেলেছে। এর মধ্যে মূল ইস্যু নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার অর্থাৎ দলটি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। একইসাথে দলটি ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ ইস্যু ছাড়া ভিন্ন কোনো ইস্যুতে আলোচনা কিংবা কোনো সংলাপে বসতেও রাজি নয়।

বিএনপি নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, আগামীতে বিএনপি ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো আলোচনায় সাড়া দেবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না আসবে।

রাজনৈতিক কলাকৌশলের পাশাপাশি রাজনীতিতে প্রভাবশালী দেশগুলোর সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বিএনপি। বিএনপির বিশ^াস, আগামী নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

প্রতিষ্ঠার পটভূমি : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠার আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করেছিলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে তিনি বিএনপি গঠন করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন প্রথম মহাসচিব।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলাই ছিল জিয়াউর রহমানের মূলমন্ত্র। এর ফলে দলটি প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যেই অভূতপূর্ব সাফল্য পায়। জিয়াউর রহমান স্বল্প সময়ের অক্লান্ত কর্মের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়েন পুরো বাংলাদেশে। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে ইসলামী মূল্যবোধের মিশ্রণ তার দলকে আরো জনপ্রিয় করে তোলে। তার ঘোষিত ১৯ দফাকে দল ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক দর্শন’ হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্যের হাতে জিয়াউর রহমান শাহাদতবরণের কিছু পর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে উত্থান ঘটে বেগম খালেদা জিয়ার।

করোনার কারণে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় রয়েছেন খালেদা জিয়া। দলটির নেতারা বলছেন, কার্যত তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমে তিনি অংশ নিতে পারছেন না। এরিই মধ্যে তাকে চিকিৎসার জন্য অনেকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন জানানো হলেও সরকার প্রতিবারই তা নাকচ করে দিয়েছে।

বাণী : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে মির্জা ফখরুল দেশের বর্তমান এই ক্রান্তিকালে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে। দেশবাসীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য আহ্বান জানান।

কর্মসূচি : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং বেলা ৩টায় দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালি এবং ২ সেপ্টেম্বর আলোচনা সভা। দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে ভোরে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। দিবসটি সামনে রেখে ইতোমধ্যে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877