স্বদেশ ডেস্ক: ঈদ উৎসবে নাটক, টেলিছবি ও চলচ্চিত্র বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। বরাবরের মতো এবারও অসংখ্য নাটক নির্মিত হয়েছে। ঘুরেফিরে নাটকগুলোতে একই মুখ দেখা গেছে এবারও। চাহিদার শীর্ষে থাকা তারকাদের নিয়েই সবাই কাজ করতে আগ্রহী হন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদেও একই ঘটনা ঘটেছে। একজন তারকা কটি নাটকে অভিনয় করতে পারেন? এমন প্রশ্ন মিডিয়ার অনেকেরই।
আর একেকটি নাটকে কত পারিশ্রমিক নিচ্ছেন তারা? এ প্রশ্নের সদুত্তর কেউ দিতে পারেন না। এমনকি যে তারকা ৩০টি নাটকে অভিনয় করছেন তিনিও জানেন না আসলে পারিশ্রমিক কত নিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, অধিকাংশ নির্মাতা চুক্তিপত্র ছাড়াই তারকাদের নিয়ে কাজ করছেন। অভিনয়শিল্পী সংঘ চুক্তিপত্রের উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু সেটা সফল হতে পারেনি।
তাই চাহিদার শীর্ষে থাকা মোশাররফ করিম থেকে শুরু করে জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাকিয়া বারী মম, আফরান নিশো, মেহজাবিন চৌধুরী, অপর্ণা ঘোষ, তৌসিফ মাহবুব, ফারহান আহমেদ জোভান, তানজিন তিশাদের অসংখ্য নাটক দেখা গেছে টিভিতে। এর বাইরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও অসংখ্য নাটক, টিভি সিরিজ নির্মিত হয়েছে ঈদে। সব হিসাব কষলে শীর্ষ তারকারা পারিশ্রমিক হিসেবে অনেক অর্থই নিজের পকেটে ভরেছেন। তবে পারফেক্ট হিসাব পাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি।
এবার ঈদুল আজহায় প্রচারিত নাটকগুলোর হিসাব কষে জানা যায়, পুরুষ অভিনয়শিল্পীদের তালিকায় এগিয়ে আছেন আফরান নিশো। টেলিভিশন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে তিনি অভিনয় করেছেন প্রায় ৩৭টি নাটকে। নাটকপ্রতি গড়ে তার পারিশ্রমিক ৬০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এবার ঈদে তিনি আয় করেছেন ২২ লাখ ২০ হাজার।
এর পরের অবস্থানে আছেন জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। তিনি অভিনয় করেছেন ১৯টি নাটকে। সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক ৮০ হাজার টাকা হিসেবে, তিনি সর্বমোট আয় করেছেন ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। নারী শিল্পী হিসেবে এগিয়ে আছেন মেহজাবিন চৌধুরী। তিনি অভিনয় করেছেন ২৪টি নাটকে। নাটকপ্রতি ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে তিনি আয় করেছেন ১২ লাখ টাকা। নারীদের মধ্যে তানজিন তিশা অভিনয় করেছেন ২৩টি নাটকে। ৩৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে তিনি আয় করেছেন ৮ লাখ ৫ হাজার টাকা।
নাটকের সংখ্যা হিসাবে দ্বিতীয় আর আয়ের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে আছেন তৌসিফ মাহবুব। তিনি অভিনয় করেছেন ৩৪টি নাটকে। নাটকপ্রতি ৩৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে তিনি আয় করেছেন ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, অপূর্ব, তাহসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা দর্শক চাহিদায় এগিয়ে থাকলেও আয়ের তালিকায় পিছিয়ে রয়েছেন।
এদিকে একাধিক নির্মাতার সঙ্গে কথা বলে শিল্পীদের পারিশ্রমিক ও নাটকের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে একাধিক অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের পারিশ্রমিকের কোনো সুনির্দিষ্ট অঙ্ক নেই। নির্মাতা, সম্পর্ক ও সময়ের ওপর ভিত্তি করে তারা তাদের পারিশ্রমিক চূড়ান্ত করে থাকেন। ভালো নির্মাতা বা সম্পর্কের খাতিরে কখনো কখনো তারা পারিশ্রমিক কম নিয়ে থাকেন। আবার উৎসবের সময় যখন কাজের চাপ বেড়ে যায়, তখন তারাও তাদের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দেন।
তারকারা কাজ করেন পারিশ্রমিক নেবেন- এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু নিজের শিডিউল এতটাই ব্যস্ত রাখেন। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ঈদ এলেই কাজ বেড়ে যায়। আবার পারিশ্রমিকও বেড়ে যায়। পাশাপাশি নাটকের মানও কমে যায়। তাই সংখ্যার দিক দিয়ে নয়, মানের দিকে নজর দেওয়া উচিত। কারণ নাটকের গল্প একই মনে হয়। লোকেশনও ঘুরেফিরে একই। অভিনয়শিল্পীও একই। শুধু পরিচালকের নাম পরিবর্তন। এমন অনেক নাটকই এবার চোখে পড়েছে। পাশাপাশি ভালো কিছু কাজও দেখা গেছে। তিশা-মোশাররফ করিম কয়েকটি নাটকে খুব ভালো অভিনয় করেছেন। একটি নাটকে তিশাকে মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়ের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করতে দেখা গেছে। জাহিদ হাসান তার স্বভাবসুলভ অভিনয় দিয়ে এখনো মাতিয়ে রেখেছেন টিভি চ্যানেল। অপূর্বর অভিনয় এখন একেবারেই একঘেয়েমি মনে হচ্ছে। আফরান নিশো তো অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছেন। চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়ও চোখে লেগে থাকে। এসব অভিনেতা ঈদ এলে পারিশ্রমিক একটু বেশি নিতেই পারেন। আসলে পারিশ্রমিক নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। ভালো নাটক দেখতে চাই। নাটকের সঙ্গে থাকতে চাই।