স্বদেশ ডেস্ক:
ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। এরই মধ্যের যুদ্ধের ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। তবে যুদ্ধ থামার এখনও কোনও ইঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, এই যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। ফলশ্রুতিতে রাশিয়া বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইউরোপে দেখা দিয়েছে চরম গ্যাস সংকট। তাই আগামী শীত মৌসুম নিয়ে চরম আতঙ্কে তারা।
বেলজিয়ামের জ্বালানি মন্ত্রী এক সতর্কবার্তায় বলেছেন, যেভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ছে, তাতে আসন্ন শীতে তা প্রকট আকার নিতে পারে। গ্যাসের দাম কমানো না গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে আগামী পাঁচ অথবা দশটি ভয়াবহ শীতের মুখোমুখি হতে হবে।
ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসনের জেরে মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমারা যে অর্থনৈতিক লড়াই জারি অব্যাহত রেখেছে তা কোনও কাজেই আসছে না। মস্কোর বদলে উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা নিজেরাই।
অপরদিকে রুবলের মান বাড়ায় এখন আগের চেয়েও বেশি শক্তিশালী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নিষেধাজ্ঞাকে এখন ইউরোপের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করছেন তিনি। নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতির থেকে লাভই বেশি হচ্ছে রাশিয়ার। অপরদিকে তেল ও গ্যাসের অভাবে নাকাল ইউরোপ।
ইউরোপে প্রধান গ্যাস সরবরাহকারী রাশিয়া ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জবাবে ইইউ’র দেশে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে রুশ গ্যাস কোম্পানি। অথচ গত বছরেই রাশিয়া ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করেছিল ইউরোপের দেশগুলোয়। এখন বিকল্প উপায়ের সন্ধানে তারা। জার্মানি বলছে, তারা দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজছে।
বেলজিয়ামের জ্বালানি মন্ত্রী টিনে ভ্যান ডের স্ট্রেটেন টুইটারে লিখেছেন, ইউরোপের দেশগুলোর উচিত অবিলম্বে গ্যাসের দাম কমানো। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সংশোধনের প্রয়োজন। আমরা যদি এ বিষয়ে কিছু না করি, তাহলে আগামী পাঁচ অথবা দশটি শীত হবে ভয়াবহ। আমাদের অবশ্যই উৎস খুঁজতে হবে, ইউরোপী দেশগুলোর দাম কমানোর বিষয়ে কাজ করতে হবে।
জ্বালানি সংকটের জেরে চলতি সপ্তাহে ইউরোপে বিদ্যুতের দামও রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপে গ্যাস হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম একটি উৎস।
অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার বলেছেন, জ্বালানি নিয়ে এই মুহূর্তে ইউরোপে যা ঘটছে, তা আমাদের বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম অবশ্যই কমাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা পুতিনকে প্রতিদিন ইউরোপের বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করতে দিতে পারি না।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইউরোপ যখন জ্বালানির জন্য হাহাকার করছে, আর রাশিয়া তার উদ্বৃত্ত গ্যাসের মজুত পুড়িয়ে ফেলছে। ফিনল্যান্ডের সীমান্তের কাছে অবস্থিত পোর্তোভায়া নামের একটি প্ল্যান্টে দৈনিক এক কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের গ্যাস পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া পুড়িয়ে যে গ্যাস নষ্ট করছে তা আগে জার্মানিতে রফতানি করা হতো। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত মিগুয়েল বার্গার বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা কোথাও গ্যাস বিক্রি করতে পারছে না বলেই গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি, এমএসএন