বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ অপরাহ্ন

আগামী মাসেই বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম

আগামী মাসেই বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম

স্বদেশ ডেস্ক:

ভর্তুকির চাপ সামলাতে শিগগিরই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় সরকার। এই বৃদ্ধির কাজটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে হতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, তিন মাসে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। এর আগে একই সময়ে ভর্তুকি দেয়া হয় এর অর্ধেক। অর্থাৎ ১৫০০ কোটি টাকা। গত নভেম্বর-জানুয়ারি সময়কালে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা অর্থ বিভাগ থেকে ছাড় করা হয়েছে। এবারই প্রথম চলতি অর্থবছর (২০২২-২০২৩) বাজেট থেকে এই অর্থ প্রদান করা হয়। এ নিয়ে গত ১২ মাসে (ফেব্রুয়ারি ’২১ থেকে জানুয়ারি ’২২) পর্যন্ত বিদ্যুতে ভর্তুকি অর্থ ছাড় করা হয়েছে ১৫ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এই অর্থের অধিকাংশ দেয়া হয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে। মূলত ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে এই অর্থ দেয়া হয়। অর্থ বিভাগ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে আরো তিন হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ভর্তুকির পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারপরও এই সীমায় ভর্তুকি বেঁধে রাখা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস অয়েলের দাম ৩০০ ভাগ বেড়েছে। আর এই ফার্নেস অয়েলই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত দামে ফার্নেস অয়েল কেনা হলেও সরকার কম দামে তা বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে বিক্রি করছে। অন্যদিকে, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকিও সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। একই সাথে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে তাদের পিছনেও ভর্তুকির একটি বিশাল ব্যয় করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ভর্তুকির চাপ সামলাতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম শতকরা ৫ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তবে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়বে। কারণ বিপণন কোম্পানিগুলো বাড়তি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করবে তা হয় না। গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১১৬ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ পর্যায়ে গ্রাহক পর্যায়ে বেড়েছে ৯০ ভাগ। বর্তমানে পাইকারি বিদ্যুতের দাম কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫ টাকা ১৭ পয়সা। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে আরো ৩ টাকা ৩৯ পয়সা। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে বাংলাদেশ নতুন সঙ্কটে পড়েছে। এর জন্য প্রধানত সঠিক পরিকল্পনা না নেয়াকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, দেশে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে ১৫২টি। সাধারণভাবে অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে আছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশে ৫৭ ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্রভাড়া দেয়া হয়। তবে এখন এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে দেশে দিনে-রাতে মিলিয়ে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে এই লোডশেডিং অবস্থা গ্রামে আরো খারাপ। দিনে-রাতে মিলিয়ে গ্রামে অনেক জায়গায় ১৫-১৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর ও ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ ভর্তুকির অর্থ ছাড় করার জন্য অর্থ বিভাগের কাছে ৫ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে নভেম্বর মাসের জন্য চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। ডিসেম্বরের জন্য ১ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা এবং জানুয়ারি মাসের জন্য চাওয়া হয়েছে ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রতি তিন মাস অন্তর বিউবো ভর্তুকির অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে। গত ১১ বছরের বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি তাদের এক প্রতিবেদনে গত রোববার উল্লেখ করেছে, সরকার প্রতিবছর যে ভর্তুকি প্রদান করে তার বেশির ভাগই দেয়া হয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। প্রতিবছর তা বেড়ে চলেছে। যেমন- ২০১৬-২০১৭ সালে মোট ভর্তুকির ৫৩ শতাংশ দেয়া হতো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ভর্তুকির ৮০ ভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে এই খাতে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877