স্বদেশ ডেস্ক: আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আস্থা রাখতে পারছে না বিএনপি। তাই তার মুক্তির বিষয়ে বিদেশি ‘আনুকূল্য’ পেতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা ক্ষমতাধর রাষ্ট্র এবং পার্শ¦বর্তী প্রভাবশালী দুই দেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। শিগগিরই ভারত ও চীন সফরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন তারা। এ দুই দেশেরই বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন ইস্যুতে ঢাকায় নিযুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করবেন দলের কূটনৈতিক উইংয়ের নেতারা। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য, বয়স ও তার মর্যাদা বিবেচনায় নিয়ে জামিন না পাওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক বাধাগুলো কোথায়Ñ তা তুলে ধরা হবে।
কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি আগামী সেপ্টেম্বরে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ ইস্যুতে ঢাকায় বড় সমাবেশ করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে শোকের মাস আগস্টে ডেঙ্গু সচেতনতামূলক কার্যক্রম ছাড়া দলটির অন্য কর্মসূচি থাকছে না।
ঈদের আগে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়। এ বৈঠক বিষয়ে স্থায়ী কমিটির দুই নেতা আমাদের সময়কে বলেন,
এখন থেকে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে। আন্দোলনের বিষয়ে ওই দুই নেতা মনে করেন, নির্বাচনের আগে-পরে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন হয়েছিল। এবার সরকার পরিবর্তন নয়; আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করব। আগের মতো না হলেও এর অর্ধেক আন্দোলনেই সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে বলে মনে করেন তারা।
গতকাল শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন কোনো আন্দোলন করতে পারছি না যার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বের করে নিয়ে আসতে পারব। আমরা জানি আইন-আদালতের ভূমিকা কী, তারা কী করছে, আর কী করছে না। তাই সুসংগঠিত হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাকে মুক্ত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতার মুক্তি হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর আমরা এমন কোনো আন্দোলন করতে পারিনি যে সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা মনে করেন, সরকার খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন’ ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়। তাই আপসের মাধ্যমে প্যারোলে তাকে মুক্তি দিতে চায়।
অবশ্য দলে এক নেতা আরেক নেতাকে সন্দেহ করেন। নেতারা একে অন্যকে সরকারের এজেন্ট মনে করেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও সিনিয়র নেতাদের কোনো কথা বা আশ্বাসের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, এতদিন তো দেখলাম, সিনিয়র নেতারা যেভাবে বলেছেন, সেভাবে কাজ করেছি। কিন্তু লাভ হলো না। বরং মামলার সংখ্যা বেড়েছে। এখন মনে হচ্ছে দলের কিছু সিনিয়র নেতা সরকারের ছক অনুযায়ী দল পরিচালিত করছেন।
এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, এখন স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে কথা বলতেও ভয় লাগে। মিটিংয়ের খবর দলের মধ্য থেকেই সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয় কিনাÑ এটা নিয়েই বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ঈদের আগে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দেওয়ায় তার মুক্তি নিয়ে বিএনপি চিন্তিত হয়ে পড়েছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য, বয়স ও একজন নারী বিবেচনায় হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে জামিন আবেদন করা যায় কিনাÑ এর আইনি দিক বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল ও জামিন আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। বিএনপি এ মামলায় খুব সাবধানতা অবলম্বন করছে। কারণ আপিল বিভাগে যদি বিপক্ষে রায় আসে তা হলে আইনিভাবে আর খালেদা জিয়ার জামিন সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছেন। এখন আমরা অসুস্থতার বিবেচনায় ওই বেঞ্চে বা অন্য কোনো বেঞ্চে জামিন আবেদন করব। তবে আপিল বিভাগে যে মামলাটি (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট) আপিল ও জামিন আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে, ওই মামলায় হাত দিতে চাই না। আপিল বিভাগ যদি রায় বহাল রাখে তা হলে অন্য বেঞ্চে জামিন আবেদন করে কোনো লাভ হবে না।
কূটনৈতিক পর্যায়ে বিএনপির তৎপরতা সম্পর্কে জাতীয় সংসদের সাবেক এই স্পিকার বলেন, আমি মনে করি কূটনৈতিক পর্যায়ে লবিং করে কোনো লাভ হবে না। আমরা বলব, ওরা শুনবেÑ কাজের কাজ কিছুই হবে না। আমি এতে বিশ্বাস করি না। তারপরও সবাই চেষ্টা করছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে জমির উদ্দিন বলেন, মামলার কারণে বেশিরভাগ নেতাকর্মী কারাগারে। অনেকে গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রাজধানীতে কোনো কর্মসূচিই করতে দেওয়া হয় না। তারপরও আমরা চেষ্টা করব।