বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন

আরও ৭ জনের মৃত্যু

স্বদেশ ডেস্ক: সারাদেশের হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির গতি কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ও সারাদেশের জেলাগুলোয় ২ হাজার ৩২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। তারও আগের ২৪ ঘণ্টায় এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪২৮। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৭ জন।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় এমনিতেই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। তার পরও আসছে প্রতিনিয়ত রোগী। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে রাজধানীর চারটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদানের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে একটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি তিনটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় শয্যার অতিরিক্ত ভর্তি
করা না হলেও সরকারি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ ও শিশু বিভাগের ওয়ার্ড, বারান্দা, করিডর, সিঁড়ির গোড়া ও লিফটের সামনের জায়গায়ও ফাঁকা নেই। শুধু রোগী আর রোগীর অ্যাটেনডেন্সে ভরা। ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর তুলনায় নতুন রোগী বেশি হলে ঘটছে বিপত্তি। এ অবস্থায় অতিরিক্ত চাপ সামলানোর বিষয়টি গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কিত বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ২-এর এক্সটেনশন হিসেবে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটোর) এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভার্টিক্যাল এক্সটেনশনেও ডেঙ্গু রোগী ভর্তির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটে ডেঙ্গু প্রতিরোধে লার্ভা ধ্বংস ও এডিস মশা নিধন এবং কোরবানির বর্জ্য অপসারণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও মেয়রদের অনুরোধ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর বাইরে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও ব্যাপক আকারে ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে পড়ছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা দিতে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুম। ঢাকার ১০টি সরকারি ও ৩০টি বেসরকারি হাসপাতালসহ মোট ৪০ প্রতিষ্ঠান থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করে।
কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারাদেশে ২ হাজার ২ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ৯৪৭ জন এবং রাজধানীর বাইরের ১০৫৫ জন ভর্তি হয়। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ২৯ জন মারা গেছে। এর মধ্যে এপ্রিলে ২ জন, জুনে ৩ জন, জুলাইয়ে ১৫ জন এবং আ স্টে ৯ জন। হাসপাতালগুলোর মৃত্যুর তথ্যমতে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি; যা প্রকাশ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৬৬৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মেতে ১৯৩, জুনে ১৮৮৪, জুলাইয়ে ১৬ হাজার ২৫৩ এবং আগস্টে ১৮ হাজার ২০৭ জন। এর মধ্যে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ২৭ হাজার ৮৭৬ জন বাড়ি ফিরেছে। বাকি ৮ হাজার ৭৬৩ রোগী চিকিৎসাধীন।
কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর বাইরে ৮টি বিভাগের ৬৪ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১০৫৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৩৮, চট্টগ্রামে ২২৩, খুলনায় ১৪৯, রংপুরে ৭৫, রাজশাহীতে ১০৪, বরিশালে ১৬৭, সিলেটে ২৯ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭০ জন। রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোয় এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৮৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ৭ হাজার ৩৯৮ জন বাড়ি ফিরেছে এবং বর্তমানে ৩ হাজার ৬৮৭ জন চিকিৎসাধীন।
এদিকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গতকাল বেলা ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ডেঙ্গু সেল পরিদর্শন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শন শেষে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে মশা নিধনের বিকল্প নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে বছরব্যাপী কর্মসূচি নিতে হবে।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, জ্বর হলেই যথাসময়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দেরি করে এলে রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁঁকি বেড়ে যায়। যারা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা পরীক্ষা না করিয়ে বাড়ি যাবেন না। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ভাইরাস ধরা পড়লে বাড়ি যাবেন না। তবে রক্ত পরীক্ষার পর যাদের ডেঙ্গু ধরা পড়েনি, তারা বাড়ি যেতে পারেন। ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মগবাজারের রাশমনো হাসপাতালে মারা যায় সারা (৪) নামে এক শিশু। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যান দুই তরুণী। তারা হলেন আজমিনা আক্তার নূপুর (২৫) এবং নূরজাহান (২৬)। বৃহস্পতিবার রাতে তারা মারা যান।
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গতকাল শুক্রবার সকালে লিপি আক্তার নামে একজনের মৃত্যু হয়। এ হাসপাতালে এ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হলো। শুক্রবার ভোররাতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মজিবুর রহমান (৫০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা পৌরসভার চরকলোনি।
নাটোরের বড়াইগ্রামের সেন্ট যোশেফস স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী ছাত্র সুকান্ত রোজারিও (১৯) শুক্রবার সকালে মারা যান। ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার বনপাড়া ছাতিয়ানগাছা গ্রামের মৃত সুনীল রোজারিওর একমাত্র পুত্রসন্তান।
চাঁদপুরের হাইমচরে রফিক কবিরাজ (১৮) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রফিক হাইমচর উপজেলার ২নং আলগী উত্তর ইউনিয়নের ভিঙ্গুলিয়া গ্রামের হাফেজ কবিরাজের একমাত্র ছেলে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877