স্বদেশ ডেস্ক:
দীর্ঘ প্রায় সাত মাস চিকিৎসাধীন থেকে আজ সোমবার দুপুরে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরছেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। একই সাথে তিনি জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষকও। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রওশন এরশাদ থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দীর্ঘ এই সময়ে পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা জি এম কাদের তাকে দেখতে না যাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ রওশন। অনেকটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার ঠিক আগে মুহূর্তে দুই দিনের থাইল্যান্ড সফরে গিয়ে ভাবীর সাথে দেখা করেছেন দেবর জি এম কাদের। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ক্ষুব্ধ রওশন এরশাদের রাগ তিনি ভাঙাতে পারেনি বলে জানিয়েছে জাপা সূত্র।
এ বিষয়ে গত রাতে রওশন এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহে এরশাদ (সাদ) নয়া দিগন্তকে বলেন, উনি (জি এম কাদের) তো ব্যক্তিগত সফরে এসেছিলেন। হাসপাতালে দুইবার আম্মার সাথে দেখা হয়েছে। স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর ছাড়া রাজনৈতিক কোনো কথা বার্তা হয়নি তার সাথে।
বিরোধীদলীয় নেতার সহকারী একান্ত সচিব মো: মামুন হাসান জানিয়েছেন, থাই এয়ার ওয়েজের একটি ফ্লাইটে আজ সোমবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে রওশাদ এরশাদ দেশে ফিরবেন। হজরত শাহজালাল রহ: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি এক্সিট হয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় গুলশানের বাসার উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।
এ দিকে রওশন এরশাদকে থাইল্যান্ডে দেখে গতকালই দেশে ফিরেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। দেশে ফিরে তিনি বলেছেন, রওশন এরশাদ ভালো আছেন। তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। রওশন এরশাদকে স্বাগত জানাতে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যাদের সুযোগ আছে, তাদের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জি এম কাদের বলেন, যারা সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছুক তারা যেন বিরোধীদলীয় নেতার অনুমতি সাপেক্ষে এবং বিরোধীদলীয় নেতার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে যোগাযোগ করেন। জি এম কাদেরের সাথে সফর শেষে দেশে ফিরেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ। তবে থেকে গেছেন মহাসচিব মো: মুজিবুল হক চুন্নু।
বিগত একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনে যাওয়া এবং দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে রওশন এরশাদের ভূমিকাই ছিল মুখ্য। বিগত দুই মেয়াদ থেকে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে রয়েছেন রওশন এরশাদ। জাতীয় পার্টিতে দেবর-ভাবীর মতবিরোধ দীর্ঘ দিনের। তবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যাওয়ার পর ফের রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। দুই মেরুতে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় আসনে বসা নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব দেখা যায়। যদিও শেষ পর্যন্ত জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান এবং রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসার মাধ্যমে প্রকাশ্য বিরোধ কমে আসে। রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। পার্টি চালাচ্ছেন জি এম কাদের। মাঝখানে বিগত তিন বছর রওশন ঘনিষ্ঠ অনেক সিনিয়র নেতাকেও জি এম কাদেরের সাথে দেখা যায়। তবে রওশন এরশাদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার পর তার খোঁজখবর না নেয়ার অভিযোগ ওঠে। রওশন পন্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
রওশনের পাল্লা ভারী হচ্ছে : দীর্ঘ প্রায় সাত মাস ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে আজ দেশে ফেরার খবরে তৎপর হয়ে উঠেছেন রওশনপন্থীরা। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হাল ধরছেন তিনি, এমন খবরও চাওর হয়েছে দলের মধ্যে। তাই পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বলয় ছেড়ে অনেকেই রওশন এরশাদের দলে ভিড়ছেন বলে জানা গেছে। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিরোধীনেতাকে ব্যাপক শোডাউন করে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, রওশন এরশাদকে সংবর্ধনা দিতে বিমানবন্দরে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছেন রওশন ঘনিষ্ঠ নেতারা। দীর্ঘ দিন তার সাথে থাকা সৌদি আরবের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বিরোধী নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদসহ অনেকেই সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরছেন। আমরা তাকে বরণ করে নেবো। তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি আরো শক্তিশালী হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জি এম কাদের সাহেব ম্যাডামের দীর্ঘ অসুস্থতার সময় কোনো খোঁজখবর নেননি। তারা তো মনে করেছিলেন যে, ম্যাডাম আর জীবিত ফিরবেন না। তারা খুশিই ছিলেন। যখন তিনি দেখলেন ম্যাডাম সুস্থ হয়ে দেশে ফিরছেন, তখনই থাইল্যান্ড গেলেন। রওশন এরশাদ সুস্থ হয়ে দেশে ফিরছেন। জাতীয় পার্টি এখন চাঙ্গা হবে।
এ বিষয়ে গোলাম মসীহ জানান, বিরোধী নেতা সুস্থ হয়ে আমাদের মধ্যে ফিরছেন এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নেই। দলের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে তাকে বরণ করে নেবেন। এ জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি।
জানা গেছে, এক সময়ের রওশন ঘনিষ্ঠ বর্তমান জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদের টিকাটুলি অফিসে বৈঠকে মিলিত হন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। বৈঠকে অংশ নেন দলটির আরেক কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি প্রমুখ। বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নেন, বেগম রওশন এরশাদ যেহেতু দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমান কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তাই বিমানবন্দরে নেতাকর্মী নিয়ে তারা তাকে বরণ করে নেবেন।
দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংককে নিবিড় চিকিৎসাধীন থাকলেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে মাত্র ক’দিন আগে তাকে দেখতে যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। দলের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের টানাপড়েন এ দীর্ঘ দিন তাকে দেখতে যাননি বলে অভিযোগ আছে। এমনকি ভালো করে তার খোঁজখবরই নেননি তারা। বরং দীর্ঘ দিন চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিলে তড়িঘড়ি করে বিরোধীনেতাকে দেখতে যান তারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে ম্যানেজ করতে সেখানে গিয়ে বিরোধী নেতার তোপের মুখে পড়েন তারা। ভাবীর মন গলাতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে রোববার দুপুরে দেশে ফিরেন জি এম কাদের। নেতাকর্মীদের বিমানবন্দরে গিয়ে বিরোধী নেতাকে স্বাগত জানানোর আহ্বান জানান।