স্বদেশ ডেস্ক:
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজা। গত ১০ বছর ধরে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করে সরকারি হাসপাতালে চাকরি করছিলেন তিনি। এমনকি নিয়মিত তুলছেন বেতন-ভাতা, গ্রহণ করেছেন সব ধরনের সুযোগসুবিধা, পেয়েছেন একের পর এক পদোন্নতি। গত ২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে বিষয়টি তদন্তের আবেদন করেন আরেক চিকিৎসক। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অবশেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যুগ্ম সচিব মিনা মাসুদ উজ্জামানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গতকাল সোমবার তার শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে শুনানিতে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, ডা. ফাতেমা ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং
বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ পান। ওই সময় তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে চাকরি করতেন। বিএসএমএমইউতে যোগদানের জন্য ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেন। হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচিব বরাবর করা ওই আবেদনের ডায়েরি নং ১৭৯৬। আবেদনটি ইনস্টিটিউটের তৎকালীন পরিচালক ২৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পাঠান। এরপর ডা. ফাতেমা বিএসএমএমইউতে যোগ দেন এবং পরবর্তী ছয় মাস বেতনভাতা উত্তোলন করেন। কিন্তু অদক্ষতার কারণে বিএসএমএমইউতে চাকরি স্থায়ী না হওয়ায়
তিনি বেকার হয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন ক্লিনিকে কাজ করতে থাকেন। অথচ সরকারি চাকরি ছাড়ার প্রায় দেড় বছর পর জালিয়াতি এবং তদবিরের মাধ্যমে ইস্তফার বিষয়টি গোপন করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত দেখিয়ে ২০১৩ সালের ১১ জুন সহকারী অধ্যাপক পদে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দেন। এমনকি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর থেকে যোগদান পর্যন্ত সময়ের বেতন ভাতার সব টাকাও উত্তোলন করেন তিনি। সেখানে ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট তিনি সহযোগী অধ্যাপক পদেও পদোন্নতি পান। ২০২১ সালের ২ আগস্ট অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ৩৪ জনের একটি তালিকা এসএসবিতে (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) পাঠানো হয়েছিল। যেখানে ডা. ফাতেমার নাম রয়েছে ১৪ নম্বরে।
জানা গেছে, সরকারি চাকরি ছাড়ার এক বছর পরে পদোন্নতি পান ডা. ফাতেমা। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল তাকে মেডিক্যাল অফিসার থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর আগে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি মেডিক্যাল অফিসার পদ থেকে ইস্তফা দেন। ওই সময় তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লা আল সাফী মজুমদার ডা. ফতেমার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ আমাদের সময়ের হাতে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখা জানিয়েছে সরকারি কর্মচারী (আপিল ও শৃঙ্খলা) বিধিমলা অনুসারে, একবার সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিলে সেটি আর ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল ডা. ফাতেমার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ডা. ফাতেমা ১৯৯৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৯১ থেকে ৯৬ পর্যন্ত মমেকে অধ্যয়নকালে ছাত্রদলের নেত্রী হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে ডা. ফাতেমা ১৮তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা হিসাবে ১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০২ সালে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। তৎকালীন সরকারপন্থি চিকিৎসক সংগঠনের প্রভাবশালী নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান। সে সময়কার তার একাধিক সহপাঠী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে তিনি সরকার সমর্থক চিকিৎসক সংগঠন স্বাচিপের সক্রিয় কর্মী হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন। ২০০৭ সাল থেকে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত আছেন।