শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন

দুদকের দুর্বলতা: নিজেদের অসততা আগে দূর করুন

দুদকের দুর্বলতা: নিজেদের অসততা আগে দূর করুন

দেশের উন্নয়ন ও সুষ্ঠু সমাজ নির্মাণের পথে প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি, যা আমাদের সমাজরাষ্ট্রের একেবারে গভীরে প্রবেশ করেছে। শীর্ষ থেকে তৃণমূল সব জায়গায় সীমাহীন অনিয়মে বাংলাদেশ যেন পথ হারাতে বসেছে। দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক নামে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রের পরতে পরতে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি দমনে কতটা ভূমিকা রাখতে পারছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ এই প্রতিষ্ঠানেও দুর্নীতির নজির নানা সময়ে প্রকাশ পেয়েছে। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুদক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে গত বৃহস্পতিবার। আলোচনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের সুরে সেই কথাই বেজে উঠল। এ প্রতিষ্ঠানটিকে সমাজের দুর্নীতি দূর করার আগে নিজেদের সাফসুতরো করতে হবে।
বিগত এক যুগে দুর্নীতির নজিরবিহীন বিস্তার দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। দেশের ব্যাংক খাত, উন্নয়ন প্রকল্প ও সরকারের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবাজরা স্বর্গরাজ্য বানিয়ে নিয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা গেল, প্রথম হাজার কোটি টাকার অঙ্কে লোপাট হচ্ছে। এমনকি দেশের আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও দুর্নীতিবাজরা সক্রিয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিপুল অর্থ বেহাত হওয়ার ঘটনা স্মরণীয়। ব্যাংকের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে দুর্নীতিবাজদের সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছে। একজন ব্যক্তি একা ১০ হাজার কোটি টাকা দেশের আর্থিক খাত থেকে লোপাট করে পালিয়ে গেছে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দেখা গেল দুর্নীতির মহামারী। পর্দাকাণ্ড, বালিশকাণ্ড নামে বিপুল বড় দুর্নীতির ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। চেয়ার-টেবিল, চামচ কেনার নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা দেশে এই প্রথম দেখা গেল। এমন উন্নয়ন প্রকল্প পাওয়া যাবে না যেখানে সরকারি অর্থ বেহিসাবি খরচ করা হয়নি।
দেখা যাচ্ছে, এসব দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক সামান্যই আগ্রহী। এই দুর্নীতিবাজদের কাউকে ধরে বিচারের মুখোমুখি করার উদাহরণ বিরল। বরং দুদককে দেখা গেছে কারও রাজনৈতিক স্বার্থের পক্ষে কাজ করতে। সরকারের পছন্দের কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে তাদের দায়মুক্তি দেয়ার নজিরও সৃষ্টি করেছে দুদক। কিন্তু বিরোধী রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে হয়রানিমূলক কঠোরতার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে দুর্নীতি দমনের পরিবর্তে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার হয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, সংস্থার পদস্থ কিছু কর্মকর্তাও অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। চট্টগ্রামে এক উপপরিচালক ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে ধরা পড়েন। একজন পরিচালক পুলিশের সাথে ঘুষের লেনদেন করেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিজে বিষয়টি ফাঁস করে দেন। এ অবস্থায় কিভাবে আশা করা যায় দেশে দুর্নীতির দমন হবে।
আগে নিজেদের অনিয়ম-অসততা দূর করতে দুদকের প্রতি রাষ্ট্র্রপতির আহ্বান তাই যথার্থ। তবে এটাও ঠিক যে, জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ব পালনে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না। সংবিধান তাদের কর্মের শক্তি ও সীমারেখা চিহ্নিত করে দিলেও তারা মেরুদণ্ড সোজা রেখে কাজ করার প্রেরণা বা সাহস পায় না। প্রায়শ রাজনৈতিক চাপে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় বলে কানাঘুষা আছে। জাতি আশা করে, দুদক সত্যিকারার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কেবল তাহলেই দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877