শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৬ অপরাহ্ন

ভুগছে আমজনতাই

স্বদেশ ডেস্ক:

জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার থেকে শুরু করে মহল্লার কাঁচাবাজার- সব জায়গায় কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব। মহামারীর অজুহাতে নানা সিদ্ধান্তও চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে জনগণের ঘাড়ে। আর এসব সিদ্ধান্ত হজম করতে গিয়ে ঘাম ছুটে যাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিল সরকার। পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের প্রতিক্রিয়াও ছিল একই রকম; বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ ‘ধর্মঘট’ ডেকে বসেন তারা। এ হঠকারী সিদ্ধান্তের হঠকারী প্রতিবাদের কারণে গতকাল সড়কে বের হয়ে মহাবিপদে পড়েন লাখ লাখ সাধারণ মানুষ।

পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের দাবি, হয় ডিজেল-কেরোসিনের বাড়তি দাম প্রত্যাহার করতে হবে, নয়তো ভাড়া বাড়াতে হবে। আর ভাড়া বাড়ালে তা আমজনতার পকেট থেকেই যাবে। ভাড়া বাড়ানোর দাবি তুলেছে লঞ্চ মালিক সমিতিও। সমিতির নেতারা দ্বিগুণ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন সরকারকে।

এদিকে পরীক্ষার্থী ও জনগণের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক

পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংকালে তিনি এই আহ্বান জানান। আগামী রবিবার বিআরটিএর বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, সেখানে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাস্তবভিত্তিক মূল্য সমন্বয়ের মাধ্যমে জনগণের ওপর বাড়তি চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হবে।

রাজধানীতে গতকাল আট-দশগুণ ভাড়া গুনে ভেঙে ভেঙে ছোট ছোট বাহনে গন্তব্য পৌঁছান যাত্রীরা। অনেকের কর্মস্থলে কিংবা গন্তব্যে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল, কিন্তু পকেটের সামর্থ্য ছিল না। ফলে দীর্ঘপথ হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান তারা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা চাকরিপ্রার্থীরা। গতকাল সরকারি ১৯ দপ্তরে নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা ছিল রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীদেরও। সব মিলিয়ে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী গতকাল তীব্র ক্ষোভ নিয়ে দিন পার করেছেন।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই সড়কের ধারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন অসংখ্য মানুষ। বিআরটিসির হাতেগোনা দু-একটি ছাড়া সড়কে আর কোনো বাস নেই। সড়কে সিএনজি, লেগুনা, মোটরসাইকেল (রাইডশেয়ারিং) ও রিকশা ছিল, তবে ভাড়া ছিল মাত্রাতিরিক্ত।

গতকাল শুক্রবার সরকারি-বেসরকারি প্রায় ২৬টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। এসব পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। এদিন সকালে অনেকেই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে বের হয়েছিলেন। এ রকমই একজন চাকরিপ্রত্যাশী রাজধানীর মাতুয়াইল সাদ্দাম মার্কেট এলাকার বাসিন্দা ফারিহা আফরিন। সকাল সকাল ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষা দিতে রওনা দিয়ে বিপত্তিতে পড়তে হয় তাকে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও পূর্ব শেওরাপাড়ার হাজী আশরাফ আলী হাইস্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য কোনো বাহন পাচ্ছিলেন না। ক্ষোভ প্রকাশ করে চাকরিপ্রত্যাশী এ তরুণী বলেন, ‘যানবাহন না চললেও পরীক্ষা বাতিল হয়নি। এখন পরীক্ষা দিতে কীভাবে যাব? বাসা থেকে আগেভাগে রওনা দিলেও এক ঘণ্টা হলো গাড়ি পাচ্ছি না। সিএনজি পেলেও দ্বিগুণ ভাড়া চাচ্ছে। হয়তো আজ পরীক্ষাই দেওয়া হবে না।’

ফারিহার মতো এদিন আরও অনেক চাকরিপ্রত্যাশীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে বেগ পেতে হয়েছে। সিএনজিতে করে যাতায়াত করতে হয়েছে দুই-তিন গুণ ভাড়া দিয়ে। অনেকে উপায় না দেখে বাড়তি ভাড়ায় রিকশায় ছুটেছেন গন্তব্যে। হাসপাতালগামী রোগী, স্বজন ও জরুরি সেবার সঙ্গে সম্পৃক্তরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।

রাজধানীর বাসাবো এলাকা থেকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন মনোয়ারা বেগম। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো গাড়ি পাননি। অবশেষে সাড়ে তিনশ টাকায় রিকশা ভাড়া করে বাসাবো থেকে গ্রিন রোডে এসেছেন তিনি।

মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এমন দুর্ভোগ যে বলে শেষ করা যাবে না। বাসাবো থেকে গ্রিন রোডের সিএনজি ভাড়াই দেড়শ টাকা। রিকশায় একশ থেকে একশ বিশ। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো গাড়ি পাইনি। অবশেষে বাধ্য হয়ে সাড়ে তিনশ টাকায় রিকশায় এসেছি।’

বাসাবো বৌদ্ধমন্দির বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন মো. দুলাল হোসেন। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করে গাড়ি না পেয়ে বিরক্ত এ তরুণ বলেন, ‘ডিজেলের দাম বেড়েছে, বাস মালিকরা সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু তা না করে হঠাৎ বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কেন জিম্মি করা হচ্ছে এভাবে!’

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘করোনায় মানুষের আর্থিক অবস্থা এমনিতেই বিপযর্স্ত। এর মধ্যে ডিজেলের দাম এত বাড়ানোর ফলে নতুন করে চাপে পড়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ। ডিজেলের দাম বাড়ানো হলে পরিবহন, কৃষি খাতে উৎপাদন খরচ, পণ্যের মূল্য, শিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে এর প্রভাব পড়বে। বর্তমান পরিস্থিতিতে হঠাৎ একবারে জ্বালানির মূল্য এত বাড়ানোয় প্রভাবটা অনেক বেশি পড়বে। হঠাৎ সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপত্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এটা দীর্ঘ হলে আর্থিক ক্ষতিও বাড়বে। সুতরাং এ রকম একটা পরিস্থিতিতে ডিজেলের দাম বাড়ানোর আগে সরকারের কিছুটা চিন্তা-ভাবনা করে নেওয়া দরকার ছিল।’

গত বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে সরকার। আর এমন বৃদ্ধির ঘোষণার পর পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিবহন শ্রমিত মালিক নেতারা। তবে ধর্মঘটের সরাসরি ঘোষণা তারা দেননি। শুক্রবার সকাল থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ও ট্রাক চলাচল অঘোষিতভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রী পরিবহন সংগঠনগুলোর নেতারা তাদের অনানুষ্ঠানিক এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে পণ্য পরিবহনের একটি সংগঠন ‘ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি’। এদিকে নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ না হলেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক করবেন মালিকরা। এ দাবি আদায়ে তারাও ধর্মঘটে যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন একাধিক মালিক।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোনো মালিক বাস না চালালে তাকে বাধ্য করা হবে না। আবার কেউ চালালে তাকে বাধা দেওয়া হবে না।

এর আগে শুক্রবার থেকে রাজশাহী বিভাগে কর্মবিরতির ডাক দেয় বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এদিকে গাবতলী বাস টার্মিনালেও গতকাল দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ ছিল। এখানকার বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ ছিল। ফলে ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে যাতায়াতে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। অনেকে গাড়ি না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। কেউবা আবার বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে গন্তব্যে গেছেন।

বাস না চলায় যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছেন এসব প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসচালক। প্রাইভেটকারের পেছনে চারজন ও সামনে দুজন যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে ট্রিপ দিচ্ছেন চালকরা। জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। প্রতি ট্রিপে তারা পাচ্ছেন তিন হাজার টাকা। আবার সাত সিটের মাইক্রোবাসে ৯-১০ জন করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।

পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেওয়া মো. আজিজ উদ্দিন বলেন, ‘বাসের টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু আজ বাস বন্ধ। জরুরি প্রয়োজন তাই বেশি ভাড়া দিয়েই মাইক্রোবাসে উঠেছি।’ ফরিদপুরের নগরকান্দা যাবেন ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছোট বোনের বিয়ে। সকাল সকাল বের হয়েছি বাড়ির উদ্দেশে। কিন্তু এখন দেখি সব গাড়ি বন্ধ। এটা হতে পারে না। কোনোরকম ঘোষণা না দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যায় না।’

গাবতলী থেকে মোটরসাইকেলে করেও অনেক যাত্রী মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। এ ছাড়া লেগুনা, ইজিবাইকও চলতে দেখা গেছে। মোটরসাইকেলে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া নিতে দেখা গেছে।

এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছে রেলস্টেশনে। গতকাল সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই কয়েক ঘণ্টা কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাননি।

কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে রেলের ওপর চাপ পড়েছে। অন্যদিন এত যাত্রী হয় না।’

এদিকে গতকাল পর্যন্ত সদরঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে লঞ্চ চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সরেজমিন সদরঘাট এলাকায় দেখা গেছে, গণপরিবহন না থাকায় দুর্ভোগ নিয়েই ঘাটে আসছেন যাত্রীরা। বিকালের দিকে ভিড় বাড়তে থাকে। বরগুনা যেতে রাজধানীর মিরপুর থেকে লঞ্চঘাটে এসেছেন রবিউল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি যেতে হচ্ছে। উত্তরা থেকে ঘাটের বাস ভাড়া ৫০ টাকা। আসলাম সিএনজিতে, ১১০০ টাকায়।’

লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লঞ্চ চলাচল এখনো স্বাভাবিক। শনিবার থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে কি না তা নিয়ে আমরা কথা বলছি।’

এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে গণপরিবহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, হঠাৎ করেই গতকাল ভোর থেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। অনেকে অগ্রিম টিকিট কেটেও গাড়িতে চড়তে না পারায় পড়েছেন বিপদে। রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব বলেন, ‘হঠাৎ করে ডিজেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করলেও এর সঙ্গে সমন্বয় করে বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি সুরাহা করা হয়নি। তাই পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি চলছে। আমাদের প্রথম দাবি তেলের দাম কমানো। তবে দাম না কমানো হলেও ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এর পর সড়কে নামবে যানবাহন।’

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা থেকে জানান, গতকাল সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো গাড়িই খুলনা থেকে ছেড়ে যায়নি। তবে পরিবহন ধর্মঘটের খবর আগে থেকে না জানার কারণে অনেকেই বাস টার্মিনালে এসে ভোগান্তিতে পড়েন। খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী নুরুল ইসলাম বেবী জানান, ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে বাসভাড়া না বাড়ানোয় অনেকেরই গাড়িভাড়া উঠবে না। তাই পরিবহন মালিকরা স্বেচ্ছায় এ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। বিভাগীয় মোটর শ্রমিকরাও এ ধর্মঘটের সমর্থন জানিয়েছে।

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, বাস-ট্রাক ধর্মঘট চলায় বিপাকে পড়েছেন কুয়াকাটায় আসা হাজার হাজার পর্যটক। আর্থিক ক্ষতির মুখে আবাসিক হোটেলে মোটেলসহ পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরাও। কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল গোল্ডেন ইনের মালিক কেএম জহির খান বলেন, ‘আমার অগ্রিম তিন রুম বুকিং ছিল, যা রাতে ফোন করে ক্যানসেল করা হয় পরিবহন ধর্মঘটের কারণে। এতে আবারও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লাম।’ বরিশাল থেকে সপরিবারে ঘুরতে আসা শাকিল বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার এসেছি। আজ (শুক্রবার) চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস না ছাড়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়লাম।’

বরিশাল ব্যুরো জানায়, অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন বরিশালের লোকজনও। শহরের কিছু কিছু স্থানে থ্রি হুইলার চলাচল কর?তে দেখা গেলেও বাধা দিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। যাত্রী?দের যানবাহন থেকে নামিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠছে। এদিকে সড়কে অবরোধ থাকলেও স্বাভাবিক রয়েছে লঞ্চ চলাচল। তবে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। একই সঙ্গে পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। মো. সামসুদ্দিন না?মে এক যাত্রী জানান, বরিশাল থেকে মেহেন্দিগঞ্জের ভাড়া ৭০ টাকা, সেখানে গতকাল তাকে দিতে হয়েছে ১০০ টাকা। এভাবে বরিশাল থেকে ঢাকা, ভোলাসহ অন্যান্য নৌরুটের ভাড়াও বেশি নেওয়া হচ্ছে। লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, তেলের মূল্যবৃদ্ধি করায় প্রতিটি লঞ্চে জ্বালানি বাবদ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা খরচ বেড়েছে। তবে এখনো যে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে তা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থে?কে কম।

সিলেট ব্যুরো জানায়, শুক্রবার ছুটির দিন হলেও আকস্মিক ধর্মঘট থাকায় দূরদূরান্তের যাত্রীরা সপরিবারে এসে সিলেটের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে আটকা পড়েন। অনেকে অটোরিকশা করে যাত্রা করলেও ভাড়া গুনতে হয় কয়েকগুণ। নিম্নআয়ের মানুষজনকে কদমতলী ও কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বিকল্প হিসেবে অনেকে ট্রেনে যাত্রা করতে চাইলেও ছিল টিকিট সংকট।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, জ্বালানি তেলের দামের বৃদ্ধির প্রতিবাদে টাঙ্গাইল থেকেও সব ধরনের বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বিকল্প ব্যবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছতে হয় যাত্রীদের। এতে করে তাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877