স্বদেশ ডেস্ক:
সকল ভেদাভেদ ভুলে সম্মিলিত ভাবে হেফাজতে ইসলামের হাতকে শক্তিশালী করতে দেশের সকল আলেম-ওলামা ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির নবনির্বাচিত আমির জামিয়া ইসলামিয়া বাবুনগরের মহাপরিচালক আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে আমার ভাগিনা, আমিরে হেফাজত শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ.-এর ইন্তেকালের পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বর্তমান মজলিসে শূরা ও কার্যকরী পরিষদের পরামর্শে আমিরের পদশূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে রাত ১১.২৫ মিনিটে তার জানাজার পূর্ব মুহূর্তে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূরুল ইসলাম সাহেবের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের হাল ধরার জন্য বর্তমান আমির হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আমার পক্ষে এত মহৎ দায়িত্ব আদায় করা খুবই কঠিন। কারণ আমি অনেক অসুস্থ। তারপরও যেহেতু নাম ঘোষণা হয়ে গেছে। তাই আমি যথাসম্ভব আল্লাহর রহমতে দায়িত্ব পালন করা এবং আপনাদের সবার সুপরামর্শে এই ঈমানী সংগঠনকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পুরা চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। তবে আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করছি। বিশেষ করে ভবিষ্যতে হেফাজতে ইসলামের হাল ধরার জন্য আল্লাহ তাআলা যেন সৎ, মুখলিস ও যোগ্য নেতৃত্বের ব্যবস্থা করে দেন, এই জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের আকীদা-বিশ্বাস, ঈমান-আমল, দ্বীনি চিন্তা-চেতনা ও ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষার এই আন্দোলন এবং দল-মত নির্বিশেষে সকল মুসলিম জনসাধারণের আস্থা ও ভক্তির আধার, সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’কে ধরে রাখা, বরং ধীরে ধীরে একে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঘোষিত হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সুন্দরভাবে চেষ্টা করা আমাদের সবার কর্তব্য ও ঈমানী দায়িত্ব। আমাদের কিছু লোকেরা চলে গেছেন বলে হেফাজতে ইসলাম চলে যাবে এটা হওয়া উচিত নয়। মূলত মানুষ পৃথিবীতে আসে ক্ষণিকের জন্য। কেউ এখানে চিরস্থায়ী হয় না। একদিন সবাইকে চলে যেতে হয়। তাই যতক্ষণ আমাদের প্রাণ আছে ততক্ষণ আমাদেরকে ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে সঠিক আকীদা-বিশ্বাস, ইসলামী চিন্তা-চেতনা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মেহনত চালিয়ে যেতে হবে। আমি আশা করি, সবাই মিলেমিশে কুরআন-সুন্নাহ মতে সালাফের পদ্ধতি ও আকাবিরের উসূল মেনে কাজ করলে খুব শিগগিরই আমরা হেফাজতে ইসলামকে পুনর্বহাল করতে সক্ষম হব। বরং সময়ের সাথে সাথে একে আরো ত্বরান্বিত করতে এবং সমুন্নত রাখতে পারব ইনশাআল্লাহ।’
‘তাই আসুন! সবাই এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি এবং হেফাজতে ইসলামের মতো একটি সর্বস্তরের মুসলিম জনতার সংগঠন থেকে দেশ ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করি, যাতে করে মানুষ তাদের দ্বীন-ঈমান ও আমল-আখলাকের ব্যাপারে স্বস্তি ফিরে পায়,’ বলেন তিনি।
হেফাজত আমির বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের সকল তৌহিদী জনতার কাছে আকুল আবেদন করছি, আপনারা সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মুরুব্বিদের পরামর্শক্রমে আগের মতো সম্মিলিত ভাবে পূর্ণ ইখলাসের সাথে কাজ করে হেফাজতে ইসলামের হাতকে মজবুত করুন। এভাবে কাজ করলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ মুসলিম জনতার প্রাণের আশা পূরণে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘আমি দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের দেশ ও জাতিকে সব ধরনের সংকট ও বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করেন। আর যেন সদ্যমরহুম আমিরে হেফাজত, শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং তার আগের আমিরে হেফাজত শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.-কে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করেন এবং আমাদের সবাইকে তার রেজামন্দির উদ্দেশ্যে দ্বীনের কাজ করার তৌফিক দান করেন।’