স্বদেশ ডেস্ক:
দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। আজ রোববার সকালে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের ‘কঠোরতম বিধিনিষেধের’ তৃতীয় দিনের প্রথম প্রহরে দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১০৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ১১ জন মারা গেছেন। একই সময়ে নতুন করে ৮০১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার প্রায় ৩৯ শতাংশ।
আজ রোববার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো করোনা-সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।সরকারি হিসাব অনুসারে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৭৫ হাজার ৩৬৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনায় চট্টগ্রামে মারা গেছেন মোট ৮৮৫ জন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৭৮ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নগরের ৪৬৯ জন। নগরের বাইরের বিভিন্ন উপজেলার ৩৩২ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন শহরের, অপর সাতজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে করোনায় ১০ জন ও উপসর্গ নিয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
আজ রোববার মমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকালপারসন ডা. মহিউদ্দিন খান মুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রাজশাহী
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।গত ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব রোববার সকালে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজশাহীর ৮ জন, পাবনার ৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও চুয়াডাঙ্গার ১ জন করে রয়েছেন।মৃতদের মধ্যে ১০ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন, ৪ জনের করোনার উপসর্গ ছিল।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ওয়ার্ডে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫০ জন। এনিয়ে ৫১৩ বেডের বিপরীতে মোট ভর্তি রোগী আছেন ৪১৬ জন।
খুলনা
গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনার চারটি হাসপাতালে করোনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে মারা গেছেন খুলনার বাবু খান রোডের আ. বারেক (৭২), খালিশপুর এলাকার খাদিজা বেগম (৫০), ডুমুরিয়ার নাসিমা বেগম (৪৫), বটিয়াঘাটা বাইনতলার রোকসানা (৩৫), বাগেরহাট ফকিরহাটের মারুফা বেগম (৪৫), গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন খুলনার আমতলা মোড়ের নুরুন্নাহার (৪৪), জোড়াকল বাজার এলাকার রামকৃষ্ণ সাহা (৭৫), নড়াইল দুর্গাপুর অসীম ভট্ট (৪৭), জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছে খুলনার টুটপাড়ার আব্দুস সাত্তার (৭২) এবং আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে মারা গেছেন গল্লামারী এলাকার সুফিয়া বেগম (৫৮) ও খুলনা সদরের রায়হান চৌধুরী (৪০)।
জানা যায়, খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে বর্তমান রোগী ভর্তি রয়েছে ৩৩০ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৪৩ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩৬ জন। খুলনা মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে গতকাল ৩৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে খুলনা মহানগরী ও জেলায় ৩৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া পিরোজপুরের একজন করোনা শনাক্ত হয়।
চাঁদপুর
চাঁদপুর সরকারি সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। অন্যজন করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
সদর হাসপাতালের করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, মৃত ৭ জনের মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৩ জন, মতলব দক্ষিণ উপজেলার ১ জন, শাহরাস্থি উপজেলার ১ জন ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২ জন। ৬ জন করোনায় আক্রান্ত ও ১ জন করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন। তার নমুনা টেস্টের রিপোর্ট অপেক্ষমান।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনায় ১৫ জন এবং উপসর্গ নিয়ে চারজন মারা গেছেন। একই সময়ে জেলায় ৮৪১টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৯১ শতাংশ।
গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত এই মৃত্যু ও শনাক্ত হয়।এই সময়ের মধ্যে জেলায় সুস্থ হয়েছেন ২০০ জন।
করোনা ডেডিকেটেড কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আশরাফুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি আরও জানান, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ২০০ শয্যার করোনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২২৬ জন এবং হোম আইসোলেশনে আছেন তিন হাজার ৪২৮ জন।
কুষ্টিয়ায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ১৯৯ জন এবং তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৪৮০ জন।
সাতক্ষীরা
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে ৫১০ মৃত্যু হয়েছে। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৩ জন।
আজ রোববার সকালে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. মানস কুমার মণ্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, জেলায় আজ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ১৬৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৯৬৭ জন। মোট রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১৫৯ জন।
বরিশাল বিভাগ
বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাসপাতালে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে উপসর্গ নিয়ে ১১ জন এবং করোনায় চারজন মারা গেছেন। এ সময়ে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৭৬৬ জন। আরটিপিসিআর ল্যাবে শনাক্তের হার ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
আজ রোববার বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রমণ তথ্যে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে বরিশাল জেলায় ২৭৩ জন। এ পর্যন্ত এই জেলায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৩০২ জন। ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু না হলেও মোট মারা গেছেন ১৪৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ২৮৮ জন।
পটুয়াখালী জেলায় নতুন শনাক্ত হয়েছে ১০৬ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৫৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু নিয়ে মোট মারা গেছেন ৭১ জন। সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৫৬০ জন।
ভোলায় নতুন ১০২ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৬৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু না হলেও মোট মারা গেছেন ৩০ জন। সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২০৭ জন।
পিরোজপুরে নতুন ৫৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৩০ জন। ২৪ ঘণ্টায় দুজনের মৃত্যু নিয়ে মোট মারা গেছেন ৬৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৫০৭ জন।
বরগুনায় নতুন ১১৯ জন শনাক্ত নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫০৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু না হলেও মোট মারা গেছেন ৫৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪৬৮ জন।
ঝালকাঠি জেলায় নতুন ১০৭ জন শনাক্ত নিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৪৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু নিয়ে মোট মারা গেছেন ৫৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭২৯ জন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১১ জন উপসর্গ নিয়ে এবং একজন করোনায় মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া পিরোজপুর সদর হাসপাতালে দুজন এবং পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন করোনা রোগী মারা গেছেন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের তথ্য সংরক্ষক জাকারিয়া খান স্বপন জানান, বিগত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের আইসোলেশনে ২৭ জন ভর্তি হন। এর মধ্যে উপসর্গ নিয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ৩৩০ জন চিকিৎসাধীন রোগী আছেন। যার মধ্যে ১৩৬ জনের করোনা পজিটিভ, ১৪৯ জন আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪ জনের নমুনা আরটি পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করানো হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ জন পজিটিভ ও ৫৭ জন করোনা নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছেন।