বিনোদন ডেস্ক:
আজ ৬ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আয়োজন কান চলচ্চিত্র উৎসব। চলবে ১৭ জুলাই পর্যন্ত। এটি হতে যাচ্ছে উৎসবের ৭৪তম আসর। এই উৎসবের জন্যই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে সাড়ে ৯০০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহরটির পরিচিতি বিশ্বজুড়ে। সাগরপাড়ের কাছে পালে দে ফেস্টিভাল ভবন হলো উৎসবটির প্রাণকেন্দ্র। এখানকার লালগালিচা সবার হৃদয়কে শিহরিত করে।
এবারের উৎসবে অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পেয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। আঁ সার্তে রিগা বিভাগে রয়েছে এটি। বাংলাদেশী কোনো ছবির এটাই সবচেয়ে বৃহৎ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
কান উৎসব নিয়ে বরাবরই বাংলাদেশের দর্শক ও পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল কাজ করে। কান উৎসবে পরলোকগত তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ফিপরেস্কি জিতে গৌরব বয়ে এনেছিলো ২০০২ সালে। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ আরো দারুণ কিছু উপহার এনে দেবে, এই প্রত্যাশায় বাংলাদেশ।
উৎসবের মূল ভবন প্যালে ডে ফেস্টিভ্যালের দরজা গত বছরও খোলা ছিল। তবে ছিল না কোনো উৎসবের আমেজ। যে লালগালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে মিলনায়তনে ঢুকতেন তারকা ও নির্মাতারা, সেখানে হেঁটেছিল ছিন্নমূল মানুষজন। এখনো সেখানে লেগে আছে করোনা রোগী ও চিকিৎসকদের স্পর্শ। উৎসবের এ জায়গার চারপাশ ঘিরে ছিল স্বজনদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা।
করোনার কারণে এবার উৎসব শুরুর প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই ফ্রান্সে পৌঁছান আমন্ত্রিত নির্মাতা, প্রযোজক, কলাকুশলী, সাংবাদিক ও ১৭০ দেশের সাড়ে ১২ হাজার চলচ্চিত্র পেশাদার ব্যক্তি। সবাইকেই ১০ দিন বাধ্যতামূলক সঙ্গনিরোধে থাকতে হয়। তারা উৎসবে যোগ দিবেন।
উৎসব পরিচালক থিঁয়েরি ফ্রেমো এই অতিথিদের সুরক্ষা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, উৎসব প্রাঙ্গণে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। আর কোভিড পরীক্ষা করতে হবে প্রতিদিন। চুম্বনের মাধ্যমে পরস্পরকে সম্ভাষণের যে রেওয়াজ আছে, ৭৪তম উৎসবে সেটা নিষিদ্ধ! আজ উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে দেখানো হবে ফ্রান্সের বিখ্যাত পরিচালক লিও কারা পরিচালিত অ্যানেট। এটি লিওর ১৪তম সিনেমা।
তার বানানো সাতটি সিনেমা এ পর্যন্ত কানে প্রদর্শিত হয়েছে। আগেও দুবার স্বর্ণপামের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এ ছাড়া এবারের উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় পল ভারহোভেন, জ্যাক ওদিয়া, ওয়েস অ্যান্ডারসন, ফ্রঁসোয়া ওজোঁ, আপিচাতপং বিরাসেথাকুল, আসগর ফারহাদি, নানি মরেত্তি, শন পেনসহ জাঁদরেল সব নির্মাতার সিনেমার উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে। উৎসবে ২৪টি সিনেমা স্বর্ণপামের জন্য প্রতিযোগিতা করবে। মার্কিন অভিনেত্রী জোডি ফস্টারকে এ বছর সম্মানসূচক পাম দ’র দেওয়া হবে।
এর বাইরে আউট অব কমপিটিশন, মিডনাইট স্ক্রিনিং, স্পেশাল স্ক্রিনিং, আ সার্তে রিগা ও কান প্রিমিয়ারে দেখানো হবে আরও সিনেমা। এবার প্রথমবারের মতো যোগ হয়েছে কান প্রিমিয়ার বিভাগ। এ শাখায় ১০টি সিনেমা দেখানো হবে। সিনেমা ফর ক্লাইমেট শাখায় দেখানো হবে সাতটি সিনেমা।
২০২০ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসব ঘোষণা করেছিল, প্রতিযোগিতা বিভাগসহ সব শাখায় নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে সমান করা হবে। এ বছর বিভিন্ন শাখায় জায়গা করে নিয়েছেন ২০ জন নারী নির্মাতা। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৪। তবে মূল শাখায় ২৪ জন নির্মাতার মধ্যে ৪ জন নারী নির্মাতার সিনেমা নির্বাচিত হয়েছে। তবে আ সার্তে রিগাসহ অন্যান্য শাখায় নারী-পুরুষের বৈষম্য এবার অনেক কম। এবারের জুরি বাছাইও প্রশংসিত হয়েছে। আট জুরির পাঁচজনই নারী।
এই আটজন ছিলেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও পাঁচটি মহাদেশ থেকে আসা মানুষ। এ বছর প্রধান জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মার্কিন পরিচালক স্পাইক লি।
বাংলাদেশের জন্যও এবারের উৎসব বিশেষ। আগামীকাল বুধবার প্যালে ডে ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশের এ ছবি। এ বছর উৎসবে জমা পড়েছিল ২ হাজার ৩০০ সিনেমা। ৩ জুন ঘোষণা করা হয় উৎসবে অংশ নেওয়া ৬৩টি চলচ্চিত্রের নাম।