স্বদেশ ডেস্ক: মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, রোহিঙ্গাদের না জানিয়ে বা তাদের সম্মতি না নিয়ে কমপক্ষে ৮ লাখ রোহিঙ্গার ওপর তৈরি করা ডাটা প্রথমে বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করেছে জাতিসংঘ। সেই ডাটা আবার মিয়ানমারের হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে তদন্ত দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে আরো বলা হয়েছে, তিন বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি, যাতে তাদেরকে একটি করে পরিচয়পত্র দিতে পারে ঢাকা। এই কার্ড থাকলে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা এবং সেবা পাবেন। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারকে দেয়া জাতিসংঘের এই ডাটা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশ তুলে দেবে এ বিষয়ে জানানো হয়নি শরণার্থীদের। তারা জানতেন এই ডাটা বাংলাদেশ সরকারের জন্য প্রয়োজন হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ক্রাইসিস এবং কনফ্লিক্ট ডিরেক্টর লামা ফাকিহ বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ডাটা সংগ্রহের চর্চা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সির জন্য নিজস্ব নীতিবিরুদ্ধ কাজ। এর ফলে শরণার্থীদেরকে আরো ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআর। এর মুখপাত্র আন্দ্রেঁজ মাহেসিক র্বাতা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, সারা বিশ্বে শরণার্থীদের ডাটা সংগ্রহ করে তা আমরা রেজিস্ট্রেশন করি। এর মধ্য দিয়ে ওই সব ডাটা সুরক্ষিত রাখার নীতি অনুসরণ করি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, শরণার্থীরা জানে না তাদের ছবি, আঙ্গুলের ছাপ ও বায়োগ্রাফিক যেসব ডাটা সংগ্রহ করা হচ্ছে তা মিয়ানমারের সঙ্গে শেয়ার করা হবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ বিষয়টি উদ্বেগজনক প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য। তারা ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতন থেকে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা একে জাতি নিধনের জন্য গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন। হিউম্যান রাইট ওয়াচ বলেছে, তারা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ বছর মার্চ মাস পর্যন্ত ২৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর এই নিবন্ধন নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এতে তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছে।
ওদিকে জাতিসংঘের এজেন্সি বলেছে, তাদের স্টাফরা রোহিঙ্গাদের কাছে অনুমতি চেয়েছেন যে, তাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য এসব ডাটা শেয়ার করা হবে। ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার জন্য স্মার্ট কার্ড প্রয়োজন হবে। শরণার্থীরা রাজি হন বা না হন এইসব তথ্য শেয়ারের কথা বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে শরণার্থীদের পূর্ণাঙ্গ আস্থায় আনা হয়েছে। কিন্তু যে ২৪ শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের একজন বলেছেন, ত্রাণ তৎপরতার বাইরে এসব ডাটা অন্য কারো সঙ্গে শেয়ার করা হবে না কখনোই, এ কথা বলা হয়েছে তাদেরকে। তাদেরকে একটি বক্স টিকেট দেয়া হয়েছে। তাতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এসব ডাটা মিয়ানারের সঙ্গে শেয়ার করতে সম্মতি আছে তাদের। কিন্তু ওই লেখাটি রয়েছে শুধু ইংরেজিতে, যা শুধু তাদের মধ্যে তিন জন পড়তে পারেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র গবেষক বেলকিস উইলি বলেছেন, আমরা যেসব রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছি, তাতে খুব দ্রæতই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এসব ডাটা শেয়ারের কোনো সম্মতি নেয়া হয়নি। এ জন্য সতর্কতার সঙ্গে একটি তদন্ত করার জন্য ইউএনএইচসিআরের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তিনি। বেলকিস উইলি বলেন, রোহিঙ্গাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে তারা ক্ষুদ্র একটি অংশকে নমুনা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তারাই তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ফলে এত বৃহৎ শরণার্থীদের ওপর এই নমুনা ক্ষেত্র ব্যবহার করে পূর্বাভাস করা কঠিন।
কিন্তু তিনি বাংলাদেশের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন। বলেছেন, বাংলাদেশ কমপক্ষে ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর ডাটা শেয়ার করেছে মিয়ানমারের কাছে। এ সংখ্যা বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় সব রোহিঙ্গার। এ বিষয়ে বেলকিস উইলিস বলেন, তাদের নমুনা ক্ষেত্র যেহেতু ছোট তাই সব রোহিঙ্গা ডাটা শেয়ারে একমত হয়েছিলেন কিনা তাও বলা মুশকিল। বাংলাদেশের দেয়া এসব ডাটা ব্যবহার করে প্রায় ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে দেশে ফেরার সবুজ সংকেত দিয়েছিল মিয়ানমার। এর মধ্যে আছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে সাক্ষাৎকার দেয়া ২১ জন শরণার্থীও। তারা সবাই বলেছেন, তাদের নাম মিয়ানমার অনুমোদন করার পরেই শুধু জানতে পেরেছেন যে, তাদের ডাটা মিয়ানমারের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদেরকে নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না মিয়ামার। তবে তারা বলেছে, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়াকে তারা স্বাগত জানায়। তবে এটা তাদের জন্য, যারা পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্বের দাবি না করে ফিরতে রাজি হন। কিন্তু ইউএনএইচসিআর বলেছে, মিয়ানমারে ফিরতে হলে সব রোহিঙ্গাকে তাদের স্বেচ্ছা সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে ফিরে যেতে হবে। বেলকিস উইলিস বলেছেন, এখন পর্যন্ত কোনো শরণার্থীকে জোর করে ফেরত পাঠায় নি বাংলাদেশ।