বিনোদন ডেস্ক:
ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার মামলায় ক্লাবটির বহিষ্কৃত নির্বাহী সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদ গ্রেপ্তার হওয়ার স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। সোমবার রাতে তার বনানীর বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তার অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। পরীমনি বলেন, ‘অনেক শান্তি লাগছে। অপরাধী অনেক তাড়াতাড়ি গ্রেপ্তার হয়েছে। আশা করিনি। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ যারা পাশে ছিলেন। আমার আইনের ওপর আস্থা আছে। যেহেতু সবাই আমার পাশে আছে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি যাদের সঙ্গে কাজ করি সহকর্মী ও আমার ভক্তরা এভাবে পাগলের মতো ভালোবাসে জানতাম না।’
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পর টের পেলাম। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই। তবে চাইবো এই ঘটনার বিচার দ্রুত হোক। এটাই একমাত্র চাওয়া এখন। যত দিন সুবিচার পাবো না লড়াই চালিয়ে যাবো।’
গ্রেপ্তারের পর সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিন জানান, যে ঘটনা বলা হচ্ছে এসব সবই মিথ্যা। মদের বোতল নিতে বাধা দেওয়ায় তার ওপর হামলা করেন পরীমনি। নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমি কম্প্লিটলি ভিকটিম। এখানে যে ঘটনা বলা হচ্ছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। ঘটনার দিন ছিলাম। আমি ওই ক্লাবের একজন পরিচালক। আমি যখন বের হয়ে যাচ্ছি ওরা (পরীমণি ও তার বন্ধুরা) ঢোকে। তখন আমাদের সিকিউরিটি, আমাদের অফিসার, সেক্রেটারি কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তারা না থাকার কারণে তারা (পরীমণি ও তার বন্ধুরা) যখন ঢোকে তখন খুব উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছিলেন। তাদের সঙ্গে একটা ছেলে ছিল, তারা সবাই মদ্যপ অবস্থায় ক্লাবের ভেতর ঢোকে। ঢোকার পরে আমাদের বারের কাউন্টারে খুব দাবি ড্রিংকস ছিল, তারা জোর করে নেওয়ার চেষ্টা করে।’
নাসির উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কারণ ওইযে আমি বাধা দিয়েছি। তারা তো নিতে পারেনি। তারা তো মেম্বার না। আমি জাস্ট তাদের বাধা দিয়েছি, এটা (ড্রিংকস) নেওয়া যাবে না। নিতে হলে তোমাদের কোনো অ্যাকাউন্টের অ্যাগেইন্সটে নিতে হবে, কারণ এটা বিক্রি যোগ্য না। এটা সাথে করে নিয়ে যাওয়ার জিনিস না। এটা এখানে বসে খেতে হবে। বাই দিস টাইম আমাদের বার এখন ক্লোজড। এরপরই সে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। একটার পর একটা গ্লাস ভাঙতে শুরু করে। সে গালিগালাজ শুরু করে। আমাদের স্টাফরা তাকে (পরীমণি) থামানোর চেষ্টা করে। তাকে ওই ঘটনার আগ পর্যন্ত আমি চিনতাম না। ওই সময় আমি তাকে থামানোর চেষ্টা করি। তখন তার সঙ্গে যে ছেলেটা ছিল, সে এসে আমাকে চড়-থাপ্পড় দেয়। একটা গ্লাস মারে, আমার ঘাড়ে লাগে। এ অবস্থায় আমি আমার সিকিউরিটিদের নির্দেশ দেই, তারা তাদের (পরীমণিদের) উঠিয়ে নিয়ে যায়।’
নাসির বলেন, ‘বাই দিস টাইম সে অনেক ড্রিংকস করে ফেলেছিল। এটা আমাদের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখবেন (সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন) যে, সে ড্রিংকস করা অবস্থায় গাড়িতে উঠতে পারছিল না। আর এটা পরের দিনই আমাদের ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী মাস্ট বি রেকর্ডেড। আমাদের কর্মকর্তারা বিষয়টি লিখিতভাবে দিয়েছে। রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে। কিন্তু আমার সাথে তার কিছুই হয়নি।’
এসব কথা প্রত্যাখ্যান করে পরীমনি বলেন, ‘এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। কিছু বলতে হবে তাই সে এসব বলছেন।’ এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা নাসির উদ্দিনের সঙ্গে পরীমনির পরিচয় কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাসিরের সঙ্গে ওখানেই দেখা হয়েছে। ওনার নাম যে নাসির উদ্দিন আমি নামই জানি না।’
মদ নিতে বাধা দেওয়ায় আপনার সঙ্গে থাকা ছেলেগুলো মারধর করেছে এমন প্রশ্নে পরীমনি বলেন, ‘এটা তো কেমন বাচ্ছা সুলভ আচরণ হয়ে গেলো না? ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও শোনেন। এটা আপনার কান নিতে পারবে না। তারপরেও এটা, কিছু বলার নেই আমার।’
সেখানে কেন গিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেখানে ইনভাইটেও যাইনি। ওটা যে ক্লাব; আমি জানতাম না। আমাদরে সঙ্গে যে অমি ভাইয়া ছিল তার একটা কাজ ছিল। আমি বলিনি অমি ভাইয়া আমাকে প্ল্যান করে নিয়ে গেছে। সে আমাকে আগেও বলেনি ওখানে চলো।’
সেখানে গাড়ি থেকে নামার বিষয়ে অমিকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, তোমরা এখানে সিকিউরড। তখন রাত ১২টা প্রায়। ওখানে সিকিউরিটি ঢুকতে দিচ্ছিল না। পরে কাউকে ফোন করেছিল।’
নাসির উদ্দিন মাহমুদ আইজিপির বন্ধু আপনি জানেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পরীমনি বলেন, ‘ওখানে যে ছিলেন সে বারবার বলেছেন উনি (নাসির উদ্দিন) আইজিপির বন্ধু। আমার ক্যারিয়ার, নায়িকা মানুষ এসব উল্লেখ করে বলেন, আমার সঙ্গে অন্যায় হলে বিচার চাব না। একজনেরও নাম জানি না, তাই বলে কি ঘটনা পুলিশকে বলব না। ইজ্জত তো আমার হানি হয়েছে ভাই। সেটার বিচার চাওয়া কি ইজ্জত যাওয়ার ব্যাপার।’
আজকের সংবাদ সম্মেলনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচকদের তির্যক মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন ঢাকাই ছবির আলোচিত নায়িকা পরীমনি। ঢাকা বোট ক্লাবে মদের পার্টিতে কেন গিয়েছিলেন? এ বিষয়ে পরীমনি বলেন, ‘আপনাদের কি মনে হয়, আমরা পার্টি করার মুডে ছিলাম? মদ খেতে গিয়েছিলাম? একটু যদি ভাবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি নিজের ওপর হওয়া নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমরা সত্যিই সেখানে যাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলাম না। ঘরোয়া কাপড়চোপড় পরে কি যাওয়া যায়? পরে তারা বেনজীর ভাইয়ের (আইজিপি বেনজীর আহমেদ) কথা বলে। আমাদের সাথে থাকা ছোট বোনের ওয়াশরুমে যাওয়ার দরকার ছিল।’ পরীমণিরা দ্রুত ঢাকা বোট ক্লাব থেকে বের হয়ে যেতে চাইলেও অমি তাদের জোর করেই আটকে রাখছিলেন বলে জানান পরী।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি ওই রাতের ঘটনার শিকার তার ডিজাইনার বন্ধু জিমিকে ডেকে আনেন। জিমি জানান, বন্ধু অমির কথায় বিশ্বাস করেই পরীমনিরা উত্তরা বোট ক্লাবে গিয়েছিলেন। অমির অনুরোধেই ক্লাবের ভেতরে যেতে হয়েছিল তাদের। জিমির ক্ষতস্থান দেখিয়ে পরীমনি বলেন, ‘অমি তো বাধা দিতে পারত। কিন্তু সেটা না করে জিমিকে ব্লেম করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি অনেক সাহস পাচ্ছি। আরও শক্তভাবে দাঁড়াতে আমি পারব এবার। আমি সবার কাছে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ।’
আজ রাত ৮টায় সংবাদ সম্মেলনটি শুরু হয়। সেখানে সংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পরিমনি। তিনি বলেন, ‘আমি আবার কাজে ফিরতে চাই। এই ট্রমা থেকে বের হতে চাই। ওই দিনের রাতের ঘটনা আর মনে করতে চাই না। এত সাহস আপনারা যুগিয়েছেন, তাতে আমি কীভাবে ভেঙে পড়ব, আমি ভেঙে পড়ব না।’
আসামিদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে পরীমনি বলেন, ‘এখন ভরসা পাচ্ছি। স্বস্তিতে নিশ্বাস নিতে পারছি। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর দ্রুত প্রধান আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিশ্চিন্ত হলাম যে বিচার পাবো। বাকি যারা অভিযুক্ত তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।’
সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডে নাসির উদ্দিনের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দা বিভাগ (উত্তর-তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর ও উত্তরা) এবং সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার হারুন-অর-রশীদ সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
হারুন-অর-রশীদ বলেন, অভিযানকালে নাসিরের বাসা থেকে বিদেশি মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। তার বাসায় উঠতি বয়সী নারীরা এসে মদপান করতেন বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তার বাসায় ডিজে পার্টির আয়োজন ছিল বলেও জানান তিনি।