স্বদেশ ডেস্ক:
দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। নদীবেষ্টিত একটি থানা নিয়ে নোয়াখালী-৬ সংসদীয় আসন। এ আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ না থাকলেও জেলাপর্যায়ে যে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব রয়েছে, সাম্প্রতিককালে তার ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে হাতিয়ায়। ফলে দিন দিন বাড়ছে বিদ্বেষ; ক্রমেই তা প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। বসুরহাটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন জলবেষ্টিত দ্বীপ হাতিয়ায়।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে এখানে দুগ্রুপের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও সহিংস ঘটনা ঘটেই চলছে। এক মাসের ব্যবধানে দুই খুনের বাইরেও একাধিক মারামারি ও আধিপত্য বিস্তারের মহড়াও এরই মধ্যে দেখা গেছে। জানা গেছে, এর একটি অংশকে সমর্থন দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ আলী। তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস বর্তমান সংসদ সদস্য। তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরপন্থি বলে পরিচিত। অন্যপক্ষটি হচ্ছে- নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীপন্থি।
জানা গেছে, হাতিয়ার ১১ ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিতে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা মহামারীর জন্য ভোটগ্রহণ আপাতত স্থগিত রয়েছে। এসব ইউপির মধ্যে জাহাজমারায় একরাম সমর্থক এটিএম সিরাজউদ্দিন নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। বাকি ছয় ইউপিতে মোহাম্মদ আলী সমর্থকরা নৌকা পেয়েছেন। জাহাজমারায় বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাসুমও নির্বাচন করছেন। তিনি মোহাম্মদ আলী সমর্থক হিসেবে বিবেচিত।
এ ছাড়া নিঝুম দ্বীপে বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীক না পেয়েও নির্বাচন করছেন একরাম চৌধুরীর সমর্থনপুষ্ট হয়ে। সোনাদিয়ার বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও চরঈশ্বরের বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল হালিম আজাদও নৌকা প্রতীক না পেয়েও মাঠ ছাড়েননি; নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তাদের সহযোগিতা করছেন একরাম চৌধুরী। চরকিং, তমরুদ্দি ও বুড়িরচর ইউপিতে অবশ্য তার কোনো প্রার্থী নেই।
সম্প্রতি ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে হাতিয়ায় দুজন ইউপি সদস্য প্রার্থী খুন হন। এ দুই খুনের মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা একরাম সমর্থক বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে। তারা বলছেন, খুন করেও কেউ আটক হয় না। কারণ তাদের প্রশ্রয়দান হিসেবে রক্ষা করেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
জানা গেছে, আয়েশা ফেরদাউস সংসদ সদস্য হলেও পুরো হাতিয়ার বিষয়গুলো দেখভাল করেন তার স্বামী মোহাম্মদ আলী। সাবেক সাংসদ অধ্যাপক ওয়ালিউল্লাহর সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর বিরোধ ছিল কয়েক যুগ ধরে। কিন্তু সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে দুগ্রুপ একই ছাতার নিচে আসে। এর পর সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান যায় একপক্ষের।
এর মধ্যে সাংসদের দেবর মাহবুব মোর্শেদও আছেন যিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে ওয়ালিউল্যাহর ছেলে কেএম ওবায়দুল্লাহ বিপ্লব মেয়র নির্বাচিত হন। ওয়ালিউল্যাহর ভাতিজা মহিউদ্দিন আহমেদ চরকিং ইউপির চেয়ারম্যান। আরেক ভাতিজা আলাউদ্দিন আজাদ চরঈশ্বর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন।
জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী ও ওয়ালিউল্যাহ গ্রুপের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকাকালে ওয়ালিউল্যাহ গ্রুপের সঙ্গে একরাম চৌধুরীর ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মোহাম্মদ আলী ও ওয়ালিউল্যাহর মধ্যে সমঝোতা হয়ে যাওয়ার পর এ দুগ্রুপের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে একরাম চৌধুরীর। চৌধুরী তাই বিকল্প শক্তির সন্ধান শুরু করেন। হাতিয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তেমন কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি। সম্প্রতি যে দুটি হত্যার কা- ঘটে, সে দুটি কা-েই নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এসব খুনে জড়িতদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন একরাম চৌধুরী।
প্রায় অভিন্ন অভিযোগ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, হাতিয়াবাসী শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করে আসছিল। হঠাৎ করেই একটি উত্তেজনা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। যারা এসব সহিংসতা করছে, তাদের সরাসরি সেল্টার দিচ্ছেন একরামুল চৌধুরী। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, জেলার বড় নেতারা (একরামকে ইঙ্গিত করে) হাতিয়ায় ঢুকতে পারছেন না। নদীর ওপারে বসে ফোনে কলকাঠি নাড়ছেন। এভাবে হাতিয়াকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করলেও কাজ হবে না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।