শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ অপরাহ্ন

বৃহত্তর করোনা হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু

বৃহত্তর করোনা হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে দেশের বৃহত্তর করোনা হাসপাতাল ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল’র উদ্বোধন হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তিসহ সব চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সোমবার হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। সোমবার আংশিক কাজ শুরু হয়েছে, মাসের শেষ নাগাদ এর কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে। শুরুতে ২৫০ শয্যা দিয়েই হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা এটাকে পাঁচ শতাধিক শয্যায় পরিণত করব এবং এ মাসের মধ্যেই আশা করা যায় এক হাজার শয্যাই আমরা চালু করে দেব।

নাসির উদ্দিন বলেন, হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে ৫০ শয্যার আইসিইউ, ৫০ শয্যার ইমার্জেন্সি, যা অনেকটা আইসিইউর মতোই, এখানে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা, সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ সবকিছু থাকবে। এছাড়া ১৫০টি (সিঙ্গেল) রুমের আইসোলেশন ব্যবস্থা এখানে রয়েছে।

এর আগে রোববার (১৮ এপ্রিল) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন। এক হাজার শয্যার এই হাসপাতালের নাম দেয়া হয়েছে ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল’।

হাসপাতালটিতে যা যা থাকছে

একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, হাসপাতালটিতে ২১২ শয্যার অত্যাধুনিক কোভিড আইসিইউ শয্যা রয়েছে। ২৫০ কোভিড শয্যা (এইচডিইউ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা) সহ অন্যান্য ব্যবস্থা থাকছে। এখানে ৫০ শয্যার জরুরি বিভাগ ও ছয় শয্যার ট্রায়াজ বেড রয়েছে। তাছাড়া ৫৩৮ কোভিড আইসোলেটেড কক্ষ থাকছে, যেগুলোতেও সিলিন্ডার অক্সিজেন ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর থাকবে।

হাসপাতালটিতে সর্বমোট ১০০০ শয্যায় কোভিড রোগীর জরুরি চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। তাছাড়া ৫০০ কেভিএ জেনারেটর ও ১০০০ কেভিএ হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৯০ হাজার লিটার ওয়াটার রিজার্ভার থাকছে।

তিনি আরো বলেন, উদ্বোধনের পর দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু হবে। পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর সবাই বুঝতে পারবে যে কত বড় মানের একটা কিছু হলো। আমাদের কিছু জনবলও প্রয়োজন। হঠাৎ করে এত বড় হাসপাতাল সম্পূর্ণ জনবল দিয়ে চালু করাটা বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জের। সেখানে কিছুটা সময় লাগলেও খুব দ্রুতই তা পূরণ হয়ে যাবে। আমরা আশাবাদী যে কোভিড-১৯ চিকিৎসা ম্যানেজমেন্টের জন্য এখানে ভালো কিছু করতে পারব।

রোগীরা যেভাবে ভর্তি ও সেবা নেবেন

রোগীরা কীভাবে ভর্তি হবেন সে বিষয়টি জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বা উপসর্গ আছে- এমন রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেয়া হবে। তারা প্রথমে আমাদের ট্রায়াজে প্রবেশ করবেন। সেখানে দুটি জোন আছে। যাদের মৃদু উপসর্গ আছে বা হেঁটেই আসতে পারছে, চিকিৎসা নেয়ার জন্য তাদের যদি ভর্তি প্রয়োজন না হয় তবে ভর্তি করা হবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হবে। পরে এসে তিনি আবার রিপোর্ট করতে পারবেন।

ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা

ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা করোনা সংক্রমিত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আসবে তারা ট্রায়াজ-২ এ চলে যাবে। সেখানে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা আছে। ছয় বেডের একটা আইসিইউ সেট-আপ থাকবে নিচ তলাতেই। সেখানে ভেন্টিলেটরের সুযোগও থাকছে। আর তাই ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডেই ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের স্ট্যাবল হওয়ার সুযোগ আছে। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পাঠিয়ে দেয়া হবে দ্বিতীয় তলার ওয়ার্ডে। সেখানে যদি কারো অবস্থা খারাপ হয় তবে তাকে আমরা পাঠিয়ে দেব আইসিইউ বা এইচডিইউতে। আর যদি একটু স্ট্যাবল হয় বা ঝুঁকির মাত্রা কমে আসে তবে আমরা তাদের কেবিনে পাঠিয়ে দেব। এই কেবিনগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ হাই-ফ্লো নাজাল ক্যানোলা সুবিধা থাকবে। এক্ষেত্রে মনিটরের ব্যবস্থাও করা হবে খুব দ্রুত। সেখানে তারা কিছুটা স্ট্যাবল হলে তাদের ধীরে ধীরে ডিসচার্জ হওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এটাই আমাদের আপাতত স্টেপ-১ ও স্টেপ-২ পরিকল্পনা।

হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন

হাসপাতালটির পরিচালক আরো বলেন, এটা আসলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হাসপাতাল হতে যাচ্ছে। এখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন কাজ করে যাচ্ছে। আমিও কিন্তু আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের পক্ষেই এখানে কাজ করছি। আমাদের জনবল, আর্থিক সহায়তা, ওষুধসহ বিভিন্ন কিছু দিয়ে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আর্মড ফোর্সেস থেকেও চিকিৎসক, নার্সসহ সব কিছু থাকছে। ডিএনসিসি তাদের জায়গা দিয়েছে এবং একই সঙ্গে অন্যান্য কিছু সাপোর্ট দিয়ে আমাদের সাহায্য করে যাচ্ছে। মূলত এই তিনটি প্রতিষ্ঠান মিলেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে ৫০০ চিকিৎসক, ৭০০ নার্স, ৭০০ স্টাফ এবং ওষুধ, সরঞ্জামের ব্যবস্থা করছে মন্ত্রণালয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877