শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০২ অপরাহ্ন

উৎকণ্ঠায় ব্যবসায়ীরা চাপে অর্থনীতি

উৎকণ্ঠায় ব্যবসায়ীরা চাপে অর্থনীতি

স্বদেশ ডেস্ক:

মহামারী করোনার প্রথম ধাক্কা সামলানোর আগে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশের অর্থনীতিতে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী- সব শ্রেণির ব্যবসায়ীর মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কঠোর লকডাউনে আবার সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। চাপে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা। চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। শিল্পকারখানা খোলা থাকলেও রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী বিদেশি ক্রেতারা পণ্য নেবেন কিনা সেখানেও রয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। কারণ রপ্তানিপণ্যের প্রধান ক্রেতা ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে আবার লকডাউন চলছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার প্রথম ধাক্কার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রয়েছে দেশ। ঠিক সেই মুহূর্তে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়েছে অর্থনীতি।

রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি আমাদের সময়কে বলেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এতে আমরা শঙ্কিত। এভাবে চলতে থাকলে বাজার শঙ্কুচিত হবে; চাহিদা কমবে। এতে রপ্তানি পণ্যের দামও কমবে। প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে টিকে থাকাও কঠিন। অনেক ক্রেতা পেমেন্ট ডেফার করছেন।ফলে রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ আসছে। এজন্য গতবছরের মতো এ বছরও সরকারের সময়োপযোগী প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতি গতিশীল রাখতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, দেশ এখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। করোনার নতুন ঢেউয়ে এই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছে। কাক্সিক্ষত সরকারি সহায়তা না পেলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন; কিন্তু এই ধাক্কা তাদের পথে বসিয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনায় দুই ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। প্রথম স্বাস্থ্য খাতের ও দ্বিতীয় অর্থনৈতিক ক্ষতি। স্বাস্থ্য খাতের ক্ষতি প্রতিদিন প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব বের করতে সময় লাগে। তাৎক্ষণিক হিসাব মেলানো যায় না। তবে সরকারের নজর রয়েছে অর্থনীতি গতিশীল রাখতে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ থেকে অর্থনীতি সচল রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয়। মানুষের জীবন বাঁচাতে করোনা সংক্রমণরোধে এখন সারাদেশ লকডাউনের মধ্যে রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে এ সময়ে প্রতিবছর অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হয়। চাঙ্গা হয় সামগ্রিক অর্থনীতি; কিন্তু গত বছর করোনার কারণে ঈদ-বাণিজ্যে ধস নামে। দেশে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় এবারও বেচাকেনায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এ অবস্থায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজের পরিসর বৃদ্ধি করে দ্রুত তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ওই সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আর্থিক প্রণোদনা ও বাস্তবায়নে পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।

করোনার চলমান দ্বিতীয় ঢেউ থেকে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দারিদ্র্য খাত সুরক্ষাসহ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ১৩ দফা সুপারিশ এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। পাশাপাশি দ্রুত প্যাকেজ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আস্থাহীনতাসহ পাঁচটি বড় বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে। সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- প্যাকেজ বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু ও বিলম্বে বাস্তবায়নের কারণ শনাক্ত, রপ্তানি খাতে নজর ও শ্রমিকদের সহায়তা প্রদান। এর আগে গত ডিসেম্বরে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণে তিন দিনের সিরিজ বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়।

দ্বিতীয় ঢেউ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আঘাত করতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নে যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলো হচ্ছে- প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি স্বাধীন (তৃতীয় পক্ষ দিয়ে) মূল্যায়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে (এসএমই) আরও সহায়তা দেওয়া, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে প্যাকেজের সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা।

এ ছাড়া প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ঋণের অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত, এসএমই খাতে প্যাকেজের অর্থ দ্রুত ছাড় ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এসএমই খাত নিয়ে আসা। একই সঙ্গে নতুন গরিব হওয়াসহ দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করতে দেশব্যাপী ওএমএস কর্মসূচি চালু, কৃষিতে আগ্রহ বাড়াতে ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থা ও প্যাকেজ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আরও সহজ করা। সেখানে আরও বলা হয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ দ্রুত ছাড় করতে হবে।

জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রণোদনার সুবিধা পৌঁছানোর বিষয়ে এবার সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণের অর্ধেকও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিতরণ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। ফলে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতটি করোনার আঘাত মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে প্যাকেজটি বাস্তবায়নে এনজিওদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কাছে সুবিধা পৌঁছানোর জন্য এনজিও ফাউন্ডেশন, এসএমই ফাউন্ডেশন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনকে (পিকেএসএফ) অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ খাতে প্রণোদনার যে অর্থ বিতরণ অবশিষ্ট রয়েছে, তা ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি এসব সংস্থার সদস্যদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। বিতরণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমে সব ব্যাংকের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে। সিএমএসএমই খাতে চলতি মূলধনে জোগান দিতে গত এপ্রিলে ঘোষিত এ প্যাকেজের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ, যার ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি দেবে। বাকি ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এ ধাক্কা যদি আরেক প্রান্তিক অব্যাহত থাকে, তা হলে এ দেশের ছোট-বড় শিল্পমালিকরা বিপাকে পড়তে পারেন। ক্ষতি মোকাবিলায় প্রণোদনার ছাড় করা অর্থের একটা অংশ অনুদান হিসেবে দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে বৃহৎ শিল্পমালিকদের জন্য দেওয়া প্রণোদনার ছাড় করা অর্থের ৫ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ অনুদানে রূপান্তর করা উচিত। এ ছাড়া কৃষি খাতে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রণোদনার অর্থ পেয়েছে, তাদেরও ৫০ শতাংশ অর্থ অনুদান হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877