স্বদেশ ডেস্ক:
করোনায় টানা তিন বার বিজয়ী সাংসদ মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে সিলেট-৩ (ফেঞ্চুগঞ্জ-দক্ষিণ সুরমা) আসনটি শূন্য রয়েছে। এ আসনে উপনির্বাচন আসন্ন। আওয়ামী লীগ নেতারা সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর পরই মাঠে নেমেছেন নৌকার মাঝি হওয়ার আশায়। কেউই ঘরে বসে নেই। কেন্দ্রে চালাচ্ছেন লবিং-তদবির। একই সঙ্গে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিও আসনটি তাদেরকে ছেড়ে দিতে আওয়ামী লীগের কাছে অনুরোধ জানাতে পারে বলে দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। বিএনপির নেতারা বলছেন, দল নির্বাচনে আসলে কেন্দ্র যাকে প্রার্থী দেবে, তারা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে কাজ করবেন।
একসময় সিলেট-৩ আসন ছিল জাতীয় পার্টির দুর্গ। কিন্তু সেই দিন পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত সামাদ চৌধুরী আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এ আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ ও প্রয়াত এমপি সামাদ চৌধুরীর মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা রীতিমতো একে অপরকে প্রতিপক্ষ করে রেখেছিল দীর্ঘদিন। তবে তাদের এ প্রতিযোগিতা দলীয় ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করেছিল বলে মন্তব্য নেতাদের।
দলীয় সূত্রমতে, সিলেট-৩ আসনে তফসিল ঘোষণা করা না হলেও বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন। প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরাও বসে নেই। তবে এ ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আলোচনায় আছে দলটির অর্ধডজন নেতার নাম। তাদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের টানা তিন বারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ (এর আগে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন), জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব (এর আগে দুবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন), জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য
এপিপি বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহিদ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন।
এদিকে কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত পেলে উপনির্বাচনে অংশ নিতে চায় বিএনপিও। আসনটিতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী। শফি আহমদ চৌধুরী গত নির্বাচনের পর থেকে ঢাকায় অবস্থান করলেও কাইয়ূম চৌধুরী নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাবে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক ও জেলা সদস্য সচিব উসমান আলী।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও হাবিবুর রহমান হাবিব। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তারা নির্বাচনের পর এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। হাবিবুর রহমান হাবিব এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি করোনাকালে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। এমনকি সাংসদ সামাদ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার পাশে ছিলেন হাবিব।
শাহ মুজিবুর রহমান জকন গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে তিনি পরাজিত হন। সরকারি চাকরিতে থাকায় বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী গেল নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাননি। বর্তমানে অবসরে তিনি। তিনি উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। ফারজানা প্রার্থী হলে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে নির্বাচনে কাজ করবেন- এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে দলীয় একাধিক সূত্র থেকে।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, দলের হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তার পক্ষে কাজ করব। একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী, সে ক্ষেত্রে মনোনয়ন একজন পাবেন। মনোনয়ন বঞ্চিতদের কারণে দলীয় প্রার্থীর জয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে কিনা? এমন প্রশ্নে নাসির বলেন, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যে অবস্থান নেবে দল তো তাকে ছাড় দেবে না।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান বলেন, মহাজোটের শরিকদল হিসেবে আমরা এই আসনটি আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে চাইব। কারণ এ আসনটি জাপার দুর্গ ছিল।
সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন. প্রথমত আমরা নির্বাচনে আসতে চাই না। যদি কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তা হলে আমরা কেন্দ্র ঘোষিত প্রার্থীর হয়ে কাজ করব।
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। এর পর থেকে গত নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিতরা উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় মাঠে নামেন।