রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

ঢামেকে কোভিড আইসিইউতে আগুনে আরও এক রোগীর মৃত্যু, মুমূর্ষু একজন অন্যত্র ভর্তি

ঢামেকে কোভিড আইসিইউতে আগুনে আরও এক রোগীর মৃত্যু, মুমূর্ষু একজন অন্যত্র ভর্তি

স্বদেশ ডেস্ক:

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনার জন্য নির্ধারিত নতুন ভবনের আইসিইউ ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় লাইফ সাপোর্টে থাকা মোমেনা বেগম (৪৫) নামে আরও এক রোগী মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঢামেকের আবাসিক সার্জন আরিফুল ইসলাম নবিন তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। এদিকে আইসিইউতে অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানে চিকিৎসাধীন আশরাফুল কবির নামের এক মুমূর্ষু রোগীকে এ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছেন তার স্বজনরা।

গত বুধবার সকালে কোভিড আইসিইউর ১২ নম্বর বেড থেকে সৃষ্ট আগুনের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বেলা পৌনে ১টায় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক নূর হাসান আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের দলটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দলের অন্যরা হলেন- ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক শাহজাহান শিকদার, উপসহকারী পরিচালক এসএম সানাহউল্লাহ ও দেবব্রত কুমার মণ্ডল। আলামত সংগ্রহ ছাড়াও ঘটনার সময় যারা (রোগীর স্বজন ও হাসপাতালের লোকজন) উপস্থিত ছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তদন্ত দলের প্রধান নূর হাসান আহমেদ বলেন, অগ্নিকা-ের তদন্ত চলছে। আমরা এখন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছি। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছি। এ ছাড়া বিভিন্ন লোকজনের সাক্ষ্য নিচ্ছি। আশা করছি, ১৫ দিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারব। কীভাবে আগুন লেগেছে তা প্রাথমিকভাবে ধারণা করে বলার মতো কিছু নেই। হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল কিনা তাও তদন্তের আওতায় এসেছে। তবে এখনই ঢালাওভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত প্রতিবেদনে সব তুলে ধরা হবে।

গত বুধবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে ঢামেকে করোনার জন্য ডেডিকেটেড নতুন ভবনের আইসিইউতে আগুনের সূত্রপাত। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় তিন রোগীর মৃত্যুর জন্য হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন তাদের স্বজনরা। তারা বলছেন, দুর্ঘটনাকবলিত ইউনিটে কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা ও আগুন লাগার পর স্থানান্তরের সময় অক্সিজেনের অভাবেই মুমূর্ষু ৩ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া ঢামেক হাসপাতালের পক্ষ থেকেও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেনকে প্রধান করে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হক।

আইসিইউর ইনচার্জ নার্স মাকসুদা জানান, ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় কোভিড আইসিইউতে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয় ১২ নম্বর বেডের পাশে নেজাল হাই ফ্লু মেশিন থেকে। পরে অক্সিজেনের মাধ্যমে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকা-ের পরপরই রোগীদের দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। প্রথমে রোগীদের নেওয়া হয় তৃতীয় তলার সিসিইউতে। সেখানেই চিকিৎসাধীন তিন রোগী মারা যায়। তারা সবাই আইসিইউতে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিলেন। পরে অন্য রোগীদের হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ৮ জন রোগী ছিলেন। বাকি দুজন ছিলেন নতুন ভবনের ৫০২ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার তাদের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় আইসিইউতে ছিলেন ১৪ জন রোগী। একজনকে ঘটনার পরপরই তার স্বজনরা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায়। ৪ জনের মৃত্যুর পর বর্তমানে ৯ জন রোগীকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, নতুন ভবনের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে যেসব রোগী ছিলেন তাদের স্থানান্তর করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত আইসিইউটি দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। হাসপাতালটি অনেক পুরনো। অবকাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে। অবস্থার উন্নয়নের জন্য দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের মাধ্যমে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গতকাল মারা যাওয়া মোমেনা বেগম ছাড়া অগ্নিকা- শুরু হওয়ার পর স্থানান্তরের সময় মারা যাওয়া অন্য ৩ রোগী হলেন কাজী গোলাম মোস্তফা (৬৩), আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (৪৮), কিশোরচন্দ্র রায় (৬৮)। তবে আগুনে পুড়ে কারো মৃত্যু হয়নি। এ ঘটনায় বর্তমানে ৯ রোগী ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তারা হলেন মোহাম্মদ সেলিম (৫২), মনিরুল ইসলাম (৫০), রেখা আক্তার (৩৫), এনামুল হক (৬৫), খন্দকার আব্দুর রশিদ (৬০), শাহিন আলম (৩২), সাহিদা বেগম (৫০), শহিদুল ইসলাম (৫৬) ও নজরুল ইসলাম (৬০)। এদের মধ্যে ৬ জন আইসিইউতে ও ৩ জন এইচডিইউতে ভর্তি রয়েছেন।

ঢামেকের উপপরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ জানান, অগ্নিকা-ের পর ভর্তি ১০ জনের মধ্যে মোমেনা ও খন্দকার আবদুর রশিদ গত বুধবার থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এদের মধ্যে মোমেনা চিকিৎসাধীন মারা গেছেন বৃহস্পতিবার বিকালে। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন একজন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যরা স্থিতিশীল রয়েছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877