রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আলজাজিরার প্রতিবেদন: ভারতীয় ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে বাংলাদেশি রোগীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিজয় একাত্তর হল সভাপতি সজিব গ্রেফতার বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র-বোমা উদ্ধার করল সেনাবাহিনী পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন বন্ধে জোরদার হচ্ছে অভিযান আইসিউতে মুশফিক ফারহান সাবেক প্রতিমন্ত্রীর চাচাকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে পিটুনি ফ্যাসিবাদের ঘৃণাস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি তারেক রহমানের ৪ মামলা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আগামী সোমবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ১২০ দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে যেসব প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে কমিশন
দেশে করোনায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ

দেশে করোনায় মৃত্যু বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে শীতের শুরুতেই করোনায় মৃত্যুর হার বাড়ছে৷ হিসাব অনুযায়ী, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গত দুই সপ্তাহে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে৷

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে প্রস্তুতির বিষয়টি তাই আলোচনায় উঠে এসেছে৷

দেশে নতুন করে লকডাউন আরোপের কোনো ইঙ্গিত নেই৷ জানা গেছে, সরকার এবার লকডাউন ঘোষণার কোনো পরিকল্পনা করছে না৷ তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আরো কড়া নির্দেশনা দিতে পারে৷ বিশেষ করে ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে এখন যে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে তাতে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে৷

তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিজ্ঞতা হলো, এখনো বাইরে বের হওয়া লোকজনের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ মাস্ক ব্যবহার করেন না৷ জরিমানা ও মাস্ক বিতরণ করেও তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না৷ আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া এখন সব জায়গায়তেই স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে৷ তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ আছে৷ আর সময়মত করোনা ভ্যাকসিন পাওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার৷

দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ৷ এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ দেশে করোনায় এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিলো ৩০ জুন৷ সেদিন মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৪৷ এরপর সর্বনিম্ন ৭ নভেম্বর, ১৩ জন৷

তবে ৭ নভেম্বরের পর থেকে করোনায় মৃতের সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে৷ গত ১৭ নভেম্বর করোনায় ৩৯ জনের মৃত্যু হয়, যা ৭ নভেম্বর পরবর্তী সময়ে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড৷ আর সর্বশেষ ২৯ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ২৯ জন৷ নতুন শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৭৮৮ জন৷

যদি রোববার সপ্তাহের শুরু ধরা হয় তাহলে ২২ থেকে ২৮ নভেম্বর দেশে করোনা সংক্রমণের ৪৮তম সপ্তাহ চলছে৷ এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ২৩০ জনের৷ এর আগের ৪৭তম সপ্তাহে অর্থাৎ ১৫ থেকে ২১ নভেম্বর সময়ে করোনায় ১৭৭ জন মারা যায়৷ তার আগে ৪৬তম সপ্তাহে অর্থাৎ ৮ থেকে ১৪ নভেম্বর মৃত্যু হয় ১২৪ জনের৷

এই হিসাবে ৪৬তম সপ্তাহের তুলনায় ৪৮তম সপ্তাহে ১০৬জন বেশি মানুষ মারা গেছেন৷ আর ৪৭তম সপ্তাহের তুলনায় ৪৮তম সপ্তাহে ৫৩ জন বেশি মানুষ মারা গেছেন৷

দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মারা গেছেন ছয় হাজার ৬০৯ জন৷ আক্রান্ত হয়েছে চার লাখ ৬২ হাজার ৪০৭ জন৷

করোনা নিয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ও পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘করোনায় মৃত্যু বাড়লেও সংক্রমণ শতকরা ১৩ ভাগে স্থির আছে৷ মৃত্যু বাড়ার কারণ হলো করোনা রোগীর চিকিৎসা এখনো সহজলভ্য হয়নি৷ আক্রান্তরা হাসাপতালে ঠিকমত চিকিৎসা পান না৷ ঢাকার বাইরে চিকিৎসাব্যবস্থা এবং আইসিইউ না থাকায় রোগী মারা যাচ্ছেন৷ তারা ঢাকায় এসেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না৷’’

তিনি জানান, এবার পরামর্শক কমিটি লকডাউন আরোপ না করার পক্ষে মত দিয়েছে৷ কারণ, একটি দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল না হলে লকডাউনে অনেকেই আর্থিক ও খাদ্য সংকটে পড়ে৷ লকডাউনের পরিবর্তে তাই মাস্কের ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব যাতে মানুষ মেনে চলে সে ব্যাপারে আরো কাঠের হওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷ আর লকডাউন আরোপ করা হয় সংক্রমণ ঠেকাতে৷ লকডাউন মৃত্যু কমানোর জন্য নয়৷

তবে তিনি মনে করেন, দেশের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে দায়িত্বহীন কথার কারণে মানুষের মধ্যে ঢিলেমি তৈরি হয়েছে৷ এখনো কেউ কেউ বলছেন ভ্যাকসিন আসার আগ পর্যন্ত মাস্ক পরুন৷ তাহলে ভ্যাকসিন আসার পর কি মাস্ক পরতে হবে না?

এরইমধ্যে ভারতের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে একটি চুক্তি করেছে৷ ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করবে৷ আর গ্যাভি থেকে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ৷

তবে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিন পাওয়া গেলেই তা এনে লাভ হবে না৷ বিবেচনায় রাখতে হবে দাম এবং সংরক্ষণের তাপমাত্রা৷ সরকার বলছে, নাগরিকদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে বিনামূল্যে৷ আর এজন্য একটা গাইডলাইনও তৈরি করা হয়েছে৷

কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘যেসব বিষয় প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই নিশ্চিত করতে বলেছেন তা এখনো হয়নি৷ সরকারি হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেনজোন হয়নি৷ আইসিইউর সংখ্যা বাড়েনি৷ ফলে চিকিৎসাব্যবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি৷ আর মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারে সচেতনাতামূলক কর্মসূচিও নেয়া হয়নি৷ যারা গরীব তাদের বিনামূলে কাপড়ের মাস্ক বিতরণ করা দরকার৷ যাতে তারা এটি ধুয়ে একাধিকবার ব্যবহার করতে পারেন৷”

তিনি বলেন, ‘‘করোনা পরীক্ষা না বাড়িয়ে তা আরো কমানো হয়েছে৷ ফলে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কখনোই সঠিক ধারণা পাওয়া যায়নি৷”

তার অভিযোগ, যে চিকিৎসকরা জীবন বাজী রেখে কাজ করেছেন তাদের প্রণোদনা দেয়া হয়নি৷ যারা মারা গেছেন তাদের পরিবার এখনো ক্ষতিপুরণ পায়নি৷ করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিতদের আবাসিক সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ ফলে চিকিৎকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877