শরিফুজ্জামান:
অনলাইনে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে নিতে শিক্ষা টিভি চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার। এ আলোচনা বেশ আগের। সর্বশেষ গত বছরের ১৫ জুলাই জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কয়েকজন জেলা প্রশাসকের আলোচনার সূত্র ধরে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শিক্ষা টিভি চালুর কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে তখনকার গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হয়। এরপর এক বছরের বেশি সময় ধরে এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য হয়নি।
সংসদ টিভি ও বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে এখন শ্রেণিপাঠ সম্প্রচার করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শেষ হলেও অনলাইন শিক্ষা চালিয়ে নিতে শিক্ষা টিভি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা চ্যানেল করার এই পরিকল্পনা। সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে, একটি কমিটিও কাজ শুরু করেছে।
পাকিস্তান আমাদের চেয়ে শিক্ষাসহ নানা সূচকে বেশ পিছিয়ে। কিন্তু গত ১৩ এপ্রিল দেশটি শিক্ষা টিভি চালু করেছে, এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘টেলিস্কুল চ্যানেল’। এর উদ্বোধন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
পাকিস্তানে ৪০ শতাংশের বেশি শিশু স্কুলের বাইরে। সরকারি হিসাবে, দেশটিতে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে ৩৬ শতাংশ মানুষের। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে পাকিস্তানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষামূলক টিভি চ্যানেলগুলো শিশুসহ সব বয়সের মানুষের জন্য একাডেমিক প্রোগ্রামের পাশাপাশি ডকুমেন্টারিসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম সম্প্রচার করে। দেশটির কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দূরশিক্ষণ কোর্সে টেলিভিশন ব্যবহার করে। জার্মানিতে বিআর টিভির মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল এডুকেশন প্রোগ্রাম ও ইউনিভার্সিটি এডুকেশন প্রোগ্রাম সম্প্রচার করা হয়। বিআর আলফা হচ্ছে জার্মানির স্বতন্ত্র শিক্ষামূলক চ্যানেল। সেখানে শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীর জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম সম্প্রচার করা হয়। হংকংয়ের এডুকেশন চ্যানেলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।
দীর্ঘদিন নানা কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় টেলিভিশন ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকা দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। মরক্কো সরকার সে দেশের একটি ২৪ ঘণ্টার স্পোর্টস চ্যানেলের কার্যক্রম স্থগিত করে তার মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। নিউজিল্যান্ডে চালু করা হয়েছে ‘পাপা কাইনগা’ নামক শিক্ষা সম্প্রচার কার্যক্রম।
বাংলাদেশে শিক্ষা টিভির আলোচনা বেশ আগেই শুরু হয়েছে, সেই আলোচনায় এখন মাত্র গতি পেয়েছে। অ্যাপসভিত্তিক অনলাইন ক্লাসসহ বেতার-টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি খুব একটা সফল হয়নি। প্রস্তুতিতে গলদ ছিল, শিক্ষক নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল এবং অডিও-ভিডিওতে নানা রকম ঝামেলা আছে। বলা হচ্ছে, এসবের স্থায়ী সমাধান দিতে পারে ‘শিক্ষা টিভি’। এর মাধ্যমে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রচার করা সম্ভব।
করোনা পরিস্থিতিতে সংসদ টিভিতে প্রাথমিক পর্যায়ের রেকর্ড করা ক্লাস চালু করা হয়।
তবে এখনো ক্লাসের বাইরে আছে ৪০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ২১ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন ভার্চ্যুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পেরেছে। বাকি ৭৯ ভাগ ভার্চ্যুয়াল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে।
বিটিভি ও সংসদ টিভির জন্য বরাদ্দকৃত ফ্রিকোয়েন্সি দিয়েই শিক্ষা টিভি চালু করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১–এর মাধ্যমে ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়ার ঝামেলা মিটবে। তবে শিক্ষা টিভিকে বিটিভির নিয়ন্ত্রণে রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিটিভির নিয়ন্ত্রণে গেলে এটার ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটি বলা কঠিন। এটা স্বতন্ত্র চ্যানেল হোক, এর ব্যবস্থাপনা আলাদা হোক। দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিরা নেতৃত্ব দিলে শিক্ষা টিভি জাতির জন্য কল্যাণকর একটি চ্যানেল হয়ে উঠতে পারে।
শরিফুজ্জামান: সাংবাদিক