মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০১:২৭ অপরাহ্ন

পেঁয়াজ সিন্ডিকেট ঘোঁট পাকাচ্ছে

পেঁয়াজ সিন্ডিকেট ঘোঁট পাকাচ্ছে

স্বদেশ ডেস্ক:

পেঁয়াজের দাম নিয়ে গতবছর অনেক কা- হয়েছে। ৩০ টাকার পেঁয়াজের দাম হু-হু করে বেড়ে পৌঁছে যায় ২৫০ টাকায়। একটা সময় অবশ্য পেঁয়াজের দাম অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। পরে লম্বা সময় দাম স্থিতিশীল থাকলেও আবার অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজার। আর এর নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছে আগের সেই সিন্ডিকেট। গত দুসপ্তাহ ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মসলাজাতীয় এ পণ্যটির দাম।

দুমাস ধরে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীলই ছিল। দুসপ্তাহে কয়েক ধাপে দাম বেড়েছে। গত শুক্রবারও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে যায়। রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন মানভেদে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকায়। কোথাও কোথাও ৭০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে একই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫০ টাকায়। আড়াই সপ্তাহ আগে ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজের দামও কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের দাম এখন অর্ধশতক ছুঁয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে পাইকারিতে দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দাম বাড়ার ব্যবধানটাও বেশি। পাইকাররা বলছেন সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। পাইকার থেকে বেশি দামে কিনলে তা বেশি দামেই বিক্রি করতে হয় আমাদের। সুতরাং দাম বাড়ার ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই।

এদিকে শ্যামবাজার ও কারওয়ানবাজারসহ রাজধানীর পাইকারি বাজার ও আড়তগুলোয় পেঁয়াজের ছড়াছড়ি থাকলে ব্যবসায়ীরা বলছেন সরবরাহ ঘাটতির কথা। তাদের মতে, বৃষ্টি-বন্যা পরিস্থিতির কারণে মজুদ করা পেঁয়াজ ছাড়তে পারছেন না মজুদকারীরা। এতে বিপুল পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। সরবরাহ ঘাটতি থাকায় দামও বেড়ে গেছে।

মালিবাগ বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি প্রতিষ্ঠান খোরশেদ বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মো. শাহবুদ্দিন বলেন, পাইকারি পর্যায়ে ভালো মানের পাবনার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে। আর তুলনামূলক কিছুটা কম দামে ফরিদপুরের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। গত বৃহস্পতিবারও পাবনার পেঁয়াজের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ এবং তিন সপ্তাহ আগে ছিল ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। একইভাবে ভারতীয় পেঁয়াজ এখন পাইকারিতে ৪১ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারও ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা কেজি।

কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. জুয়েল মিয়া বলেন, গত সপ্তাহ থেকে কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজের ট্রাক কম আসছে। খুচরা ব্যবসায়ীরাও পাইকার থেকে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ পাচ্ছেন না। আড়তদাররা বলছেন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে।

শ্যামবাজারের পাইকারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাদিয়া বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মো. মিজান বলেন, গেল মৌসুমে দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমরা পেঁয়াজ পাচ্ছি না। আমি রাজবাড়ী ও নাটোর থেকে নিয়মিত পেঁয়াজ সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে পেঁয়াজ কম বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতে পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। তা ছাড়া আমদানিও কিছুটা কমেছে। তাই দামও বেড়ে গেছে।

কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজের পাইকারি প্রতিষ্ঠান বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মো. ফয়েজ বলেন, পেঁয়াজের সংকট নেই। ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে গেল বছরের মতো একটি চক্র বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। একশ্রেণির মজুদকারীরা কারসাজি করে কম দামে পেঁয়াজ ছাড়ছেন। এতে বাজারে দেশি পেঁয়াজ কমে আসছে। তাই দামও লাফিয়ে বাড়ছে।

ফয়েজ জানান, সরবরাহে বৃষ্টি বা বন্যার প্রভাব পড়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ দেশি পেঁয়াজ এখন মজুদকারীদের কাছে রয়েছে। যেভাবে মজুদ করা হয় তাতে বৃষ্টি-বন্যায় পেঁয়াজের ক্ষতি হওয়ার কথা না। পেঁয়াজ ছাড়তে না পারায় হয়তো কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সরবরাহ সংকট হওয়ার কথা নয়। আগেরবারের মতো এবারও কারসাজি করছেন কিছু মজুদকারী। তারা যোগসাজশ করে বাজারে কম করে পেঁয়াজ ছাড়ছেন। এতে বাজার অস্থির হয়ে উঠছে।

এদিকে লাগাতার পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় শঙ্কা প্রকাশ করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সংকট সৃষ্টি হওয়ার আগে শুরুতেই সংকট মোকাবিলা করা উচিত।

কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, উৎপাদন ভালো হওয়ায় পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়। এর আগে পেঁয়াজ নিয়ে কম কা- ঘটেনি। কারসাজিকারী সিন্ডিকেট চক্র বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পর সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিল। কিন্তু শুরুতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এবারও দাম যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে সাধারণ মানুষের মাঝে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের এখনই শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, এর আগে পেঁয়াজকা-ে আমরা দেখেছি কারসাজিবাজদের তালিকা করা হয়েছে। কিন্তু সবার বিচার হয়নি। এতে সিন্ডিকেট চক্র আরও সাহসী হয়ে উঠছে। সঠিক সময়ে তাদের রুখতে হবে। শুধু পেঁয়াজ নয়; আদা, রসুন, সবজিসহ সব ভোগ্যপণ্যের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। করোনায় মানুষের আয় কমে গেছে। তাই স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাপনের সুবিধার্থে সরকারের উচিত এখনই পদক্ষেপ নেওয়া।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877