স্বদেশ ডেস্ক:
জাতীয় সংসদের আসন্ন ৫টি আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ১৪১ জন। তারা সবাই নৌকায় ভর করতে চান। এ জন্য নানাভাবে নিজের পক্ষে লবিং গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন। নৌকার টিকিট প্রত্যাশীদের এ তালিকায় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতাও রয়েছেন।
রয়েছেন মধ্য সারির নেতা থেকে শুরু করে দলে কোনো পদ-পদবি নেই এমন ব্যক্তিও। কিন্তু ৫টি আসনে কোন ৫ জন নৌকার টিকিট পাবেন এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কাউকে চূড়ান্ত করা হয়নি। মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হওয়ার পরই প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। প্রার্থী বাছাই নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষমহলে ইতোমধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। কোন ৫ জনকে নৌকার মনোনয়ন দিলে সার্বিক দিক বিবেচনায় ভালো হবে তার নানা দিক খতিয়েও দেখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পাবনা-৪ আসনে ভোট হবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর। অন্য দুটি আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে ১৭ অক্টোবর। করোনার প্রকোপ ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন আসন দুটি শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তিনটি উপনির্বাচনের ভোটের তারিখ নির্ধারিত হলেও তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে শুধু পাবনা-৪ আসনের। বাকি দুটি আসনের তফসিল যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি। তফসিল অনুযায়ী, পাবনা-৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সসময় ২ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩ সেপ্টেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ সেপ্টেম্বর। আর ভোট নেওয়া হবে ২৬ সেপ্টেম্বর।
গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা প্রসঙ্গে হাসির ছলে একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলছিলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ বছর বন্যাও হয়েছে। যতদিন বর্ষার রেশ থাকে ততদিন নৌকার ওপর মানুষের ভরসা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অন্য একজন নেতার ভাষ্য, এত বড় একটা দল চালাতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন পড়ে। সেদিক থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ মনোনয়ন ফরম কিনলে দলীয় ফান্ডও বাড়বে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এই উপনির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাতারে নাম লিখিয়ে ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ সুগম করতে চান কেউ কেউ। তাদের কারও কারও লক্ষ্য নৌকার মনোনয়ন পাওয়া নয়, দলের সিনিয়র ও শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। তারা জানেন মনোনয়ন পাবেন না। তারপরও দলের ফরম কিনে জমা দিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ-১ ও পাবনা-৪ আসনে প্রয়াত এমপির পরিবার ও স্বজনের দাবি সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এ দৌড়ে পারিবারিক সম্পর্কের চেয়ে মুখ্য মনে করছেন মনোনয়ন। যেন পরিবার নয়, নৌকাই ভরসা। ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আসার হিড়িকটাকে কাজে লাগাতে চাইছেন দলীয় পদে না থাকা ব্যক্তিরাও। ঢাকা-১৮ ও ঢাকা-৫ আসনে এ চিত্র বেশি।
জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রার্থী বেশি হওয়া খুব স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগের মতো একটা দলে মনোনয়ন পাওয়ার মতো অনেক যোগ্য নেতা আছেন। সুতরাং এসব নেতা মনোনয়ন দাবি করতেই পারেন। তবে দলের প্রচলিত নিয়ম মেনেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। আগে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা থেকে প্রার্থীর জন্য সুপারিস আসবে। তারপর দলের মনোনয়ন বোর্ড সার্বিক বিবেচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত কবে। এবার কোভিড-১৯ এবং বন্যায় কে মানুষের পাশে ছিল, এলাকায় কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি কে বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এসব বিষয়কে বিবেচনায় এনেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
জানা গেছে, পাবনা-৪ আসনে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রয়াত ভূমিমন্ত্রীর স্ত্রী কামরুন্নাহার শরীফ, ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ, মেয়ে মাহজেবিন শিরিন পিয়া এবং জামাতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু মনোনয়ন পেতে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল আছেন। এ ছাড়া ২৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। সিরাজগঞ্জ-১ আসনে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় ও নাসিমের ভাতিজা ড. আবদুস সেলিমের পুত্র শেহরিন সেলিম রিপনসহ মোট ৩ জন মনোনয়ন চান। ঢাকা-৫ আসনে মনোনয়ন পেতে ২০ জন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। এ আসনে প্রয়াত এমপির ছেলে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রার্থী রয়েছেন। দলে পদ নেই এমন দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীও রয়েছেন। নওগাঁ-৬ আসনে ৩৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন, সেখানেও হেভিওয়েট প্রার্থীর সংখ্যা কম। ৫৬ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন ঢাকা-১৮ আসনে। সেখান ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নেতারাও ফরম নিয়েছেন। ফরম নিয়েছেন দলের বাইরে থাকা ব্যবসায়ীরাও।