শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ অপরাহ্ন

গণপরিবহনে করোনায় আক্রান্তের হওয়ার ঝুঁকি কতটা?

গণপরিবহনে করোনায় আক্রান্তের হওয়ার ঝুঁকি কতটা?

স্বদেশ ডেস্খ:

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো দেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, আবার কোনো দেশে ভ্রমণকারীদের ব্যক্তিগতভাবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে উপদেশ দেয়া হচ্ছে।

এরকম অবস্থায় বিমানে ভ্রমণ করা, প্রমোদতরীতে সমুদ্রভ্রমণ কিংবা গণপরিবহন ব্যবহার করা কতটা নিরাপদ, স্বাভাবিকভাবেইএ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে।

ট্রেন ও বাস

করোনাভাইরাস ঠিক কীভাবে ছড়ায় তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও, এটা জানা যাচ্ছে যে এই ভাইরাসের মত অন্যান্য ভাইরাসগুলোর মতই ছড়ায়।

অর্থাৎ আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির হাঁচি বা কাশি থেকে নির্গত ক্ষুদ্র কণাগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বা কোনো সমতলে পড়ে থাকলে সেখান থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

আমাদের ধারণা, ফ্লু’র ভাইরাস যেমন বাতাসে ভেসে থাকে, করোনাভাইরাস সম্ভবত একইভাবে বাতাসে ভেসে থাকে না। কাজেই মানুষ একে অন্যের যথেষ্ট কাছাকাছি থাকলেই কেবল এটি দ্বারা সংক্রমিত হওয়া সম্ভব।

করোনাভাইরাস বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের নির্দেশনা মাফিক ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির দুই মিটারের মধ্যে থাকাকে ‘কাছাকাছি’ থাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

অর্থাৎ ট্রেন এবং বাসে সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটুকু, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে সেই ট্রেন বা বাস কতটা জনবহুল তার ওপর।

অপেক্ষাকৃত খালি ট্রেন বা বাসে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে আবার আপনার ঝুঁকির মাত্রা ভিন্নরকম থাকবে।

এক্ষেত্রে নির্ভর করবে যানবাহনগুলো কতটা নিখুঁতভাবে বায়ুনিরোধক করা রয়েছে এবং আপনি কতক্ষণ যানবাহনের ভেতর থাকছেন তার ওপর। বাহনের পরিচ্ছন্নতাও এক্ষেত্রে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।

ইনস্টিটিউট অব গ্লোবাল হেলথের গবেষক ডক্টর লারা গোসচের ২০১৮ সালে প্রকাশিত হওয়া এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে গণপরিবহন ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ফ্লু জাতীয় ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ডক্টর গোসচে বলেন, ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে গণপরিবহন ব্যবহারে ‘পিক আওয়ার’ বা সবচেয়ে ব্যস্ত সময়গুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

প্লেন

স্বাভাবিকভাবে বহুল প্রচলিত একটি ধারণা হলো, বিমানে ভ্রমণের সময় আপনার অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, কারণ সে সময় আপনি প্রবাহমান নয় এমন বায়ু শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করেন।

তবে বাস্তবতা হলো, বিমানের ভেতরে থাকা বাতাস প্রায় যে কোনো অফিসের ভেতরের বাতাস থেকেও (এবং প্রায় নিশ্চিতভাবে বাস ও ট্রেনের বাতাসের চেয়েও) বেশি নিরাপদ।

সাধারণত যাত্রী বোঝাই একটি বিমানে প্রতি বর্গফুট জায়গায় গড়ে ট্রেন বা বাসের চেয়ে বেশি মানুষ থাকে, যার ফলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু বিমানের ভেতরের বাতাস পরিবর্তনও করা হয় অপেক্ষাকৃত দ্রুত হারে।

বিভিন্ন যানবাহনে বায়ুর মান নিয়ে গবেষণা করা যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুইঙ্গান চেনের ধারণা অনুযায়ী, একটি বিমানের ভেতরের বাতাস সম্পূর্ণ প্রতিস্থাপিত হয় ২ থেকে ৩ মিনিটে, যেখানে সম্পূর্ণভাবে এয়ার কন্ডিশনড একটি বিল্ডিংয়ের বাতাস প্রতিস্থাপিত হতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ মিনিট।

বিমানে থাকার সময় আপনি যে বাতাস নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করেন, তা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফিল্টারের মাধ্যমে পরিশোধন করা হয়।

এই ফিল্টারে সাধারণ এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমের চেয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পদার্থ আটকে যেতে পারে। আর ভাইরাসও আটকে যেতে পারে এই ফিল্টারে।

ভাইরাস আক্রান্ত কারো হাঁচি বা কাশিতে থাকা জীবাণু শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে যেমন ভাইরাস আক্রান্ত হওয়া সম্ভব, তেমনি আক্রান্ত ব্যক্তির হাতে থাকা বা দরজার হাতলের মতো কোনো সমতলে পড়ে থাকা জীবাণুর মাধ্যমেও ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

তবে প্লেনের মতো বাহনের ক্ষেত্রে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে বা কমতে পারে বিবিধ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।

দীর্ঘ সময়ের ফ্লাইটে ভাইরাস আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি থাকলে ঐ ফ্লাইটে অবস্থিত মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেহেতু ঐ ধরণের ফ্লাইটে যাত্রীরা অপেক্ষাকৃত বেশি ঘোরাফেরা করে থাকেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সংক্রমিত ব্যক্তির সামনে, পেছনে বা পাশের দুই সারিতে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।

তবে ২০০৩ সালে সার্স প্রাদুর্ভাবের সময় সংক্রমিত এক ব্যক্তি যখন বিমানে ভ্রমণ করছিলেন, তখন তার কাছ থেকে যাদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তাদের ৪৫ শতাংশই তার আশেপাশের দুই সারির বাইরে বসেছিলেন।

তবে হাত ধোয়া, সম্ভব হলে নিজের অবস্থানের আশপাশ পরিস্কার রাখা এবং হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করার উপদেশগুলো সবারই মেনে চলা উচিত।

বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, এর মাধ্যমে সংক্রমণের শিকার হওয়া মানুষ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পৌঁছাতে পারে।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877