ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে (ইইউ) থাকা না থাকা নিয়ে এখন দুই ভাগে বিভক্ত যুক্তরাজ্য। একদল চাইছে যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে যাক, যাকে অভিহিত করা হচ্ছে ব্রেক্সিট নামে। আরেক দল চাইছে ইইউর সঙ্গেই পথ চলতে। এ নিয়ে দোলাচলে এরই মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। তবু বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছতে পারেনি দেশটির সরকার ও জনগণ
যদিও এই ব্রেক্সিট ইস্যুর ওপর ভর করেই যুক্তরাজ্যের একশ্রেণির রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী ঠিকই নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম নতুন রাজনৈতিক দল ব্রেক্সিট পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ। সম্প্রতি দলটি যুক্তরাজ্যে শুরু করেছে ‘লিভ ডট ইইউ’ নামে নতুন এক প্রচার, যার সমর্থনে তহবিল সংগ্রহে বিক্রি করা হচ্ছে ‘লিভ ডট ইইউ’ লেখা টি-শার্ট। বাংলাদেশে তৈরি এসব টি-শার্টের প্রতিটির দাম রাখা হচ্ছে ২০ পাউন্ড। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এসব টি-শার্ট তৈরির বিনিময়ে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ঘণ্টায় মজুরি পাচ্ছেন মাত্র ৩৯ পেন্স।
মূলত ব্রেক্সিট পার্টি নেতা নাইজেল ফারাজের প্রচারে তহবিল সংগ্রহের জন্য এই টি-শার্ট বিক্রি করা হচ্ছে। দলটি বলছে, এই প্রচারের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে কর্মসংস্থান ব্রিটিশদের কাছে ফিরিয়ে আনতেই তারা জনমত গঠন করতে চাইছে। ইউরোপীয় নির্বাচনে নাইজেল ফারাজ ভালো ফল করার পর ব্রেক্সিট বিষয়ে জনমত এগিয়ে নিতে তাকে ৪ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড তহবিল দেন বিতর্কিত ধনকুবের অ্যারোন ব্যাংকস। আর সেই তহবিল পেয়েই তিনি শুরু করেন ‘লিভ ডট ইইউ’ নামে এই প্রচার।
নাইজেল ফারাজের এই প্রচারের কঠোর সমালোচনাও হচ্ছে। লেবার পার্টির এমপি ভিরেন্দ্র শর্মা বলেন, এসব ব্যক্তি আসলে ব্রিটিশদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে না, তারা ব্রেক্সিটকে ব্যবহার করে কেবল নিজেদের মতাদর্শিক স্বপ্ন পূরণ করবে। তাদের দুর্ভাগ্য যে ব্রিটিশ জনগণ দেশের সমৃদ্ধি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকার একটি কারখানায় তৈরি হয় এই টি-শার্টগুলো। দারিদ্র্যবিরোধী প্রচারকারীরা বলছেন, এসব কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয় জীবনধারনের মানের চেয়ে কম। একজন জুনিয়র মেশিন অপারেটর মাসে সর্বনিম্ন মজুরি পান প্রায় ৭৩.৮৫ পাউন্ড। এই মজুরিতেই তারা সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করেন। অর্থাৎ প্রতিঘণ্টায় তাদের মজুরি দাঁড়ায় ৩৯ পেন্স। অথচ এসব শ্রমিকের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের জন্য মাসে অন্তত ১৪৯ পাউন্ড দরকার। কিন্তু তারা পাচ্ছেন অনেক কম।
শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে বেশি দামে টি-শার্ট বিক্রি নিয়ে অবশ্য কোনো অপরাধবোধ নেই ‘লিভ ডট ইইউ’ প্রচারকারীদের। তাদের মুখপাত্র অ্যান্ডি উগমোর বলেন, তাতে কী হয়েছে? আমরা আন্তর্জাতিকবাদে বিশ্বাসী, ক্ষুদ্র ইউরোপিয়ান নই। আমরা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে সমর্থন করতে ভালোবাসি।
একই বিষয়ে গিলাদানের এক মুখপাত্র বলেন, ঢাকায় যে কারখানায় তাদের পোশাক উৎপাদন হয়, তার উন্নয়নে ২০১০ সাল থেকে তারা প্রায় ২ কোটি পাউন্ড খরচ করেছে। এ কারখানায় অন্তত ৩৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। এই কারখানায় শুধু শিক্ষানবিশরা যে সর্বনিম্ন মজুরি পান, তা গোটা পোশাকশিল্প খাতের সর্বনিম্ন বেতনের সামান্য বেশি। এ ছাড়া কারখানার প্রত্যেক্যেই ইনক্রিমেন্টাল সুবিধাও পান।