রাজধানীর ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। ওই তরুণীর অভিযোগ, ব্রণের ইনফেকশন দেখার ছলে পপুলারের চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার কসমেটিক সার্জন ডা. মো. শওকত হায়দার তার গালে চুমু দেওয়াসহ যৌন হয়রানি করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার। ঘটনার পরে ওই তরুণী এবং ডা. মো. শওকত হায়দারের একটি অডিও ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। গতকাল রোববার সময় টেলিভিশনে ওই অডিওটি প্রকাশ করেছে। সেই ফোনালাপে বার বার ওই চিকিৎসককে দুঃখিত বলতেও শোনা গেছে।
এই ঘটনার পর ওই তরুণী পপুলার হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পপুলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
যা আছে ফোনালাপে
ওই তরুণী ডাক্তারের কাছে ফোন করে চুমু দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডা. শওকত বলেন, ‘ওটা কিছু না, ইনফেকশন আছে কি না দেখছিলাম।’
পরে তরুণী বলেন, ‘এমন তো আমি কখনো দেখিনি, ইনফেকশন আছে কি না সেটা কোনো ডাক্তার কি ঠোঁট দিয়ে চেক করে?’ এ সময় ডাক্তার শওকত হায়দার ওই তরুণীকে বলেন, ‘দুঃখিত’।
যা ঘটেছিল সেই দিন
ঘটনার বিবরণে ওই তরুণী জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ত্বকে ব্রণের সমস্যা নিয়ে পরিচিত একজনের রেফারেন্সে প্রথমবার পপুলার হাসপাতালের ওই চিকিৎসকের কাছে যান তিনি। পরবর্তীতে চিকিৎসার প্রয়োজনে আরও কয়েকবার প্রায় বাবার বয়সী চিকিৎসকের কাছে যান তিনি।
ওই তরুণীর দায়ের করা অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়, কিছু দিন আগে থেকে ওই তরুণী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত শনিবার দুপুরে ওই তরুণী ডা. শওকতকে জানান তার ত্বকের সমস্যা আবার বেড়েছে, রাতে তিনি চেম্বারে বসবেন কি না? এ সময় ওই চিকিৎসক চেম্বারেই আছেন জানিয়ে মেয়েটিকে তখনই যেতে বলেন। পরে চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে ওই তরুণী জানতে চান তার সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান আছে কি না। এ সময় সেই ডা. শওকত বলেন, যদি সে চায় তবে একটা ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। তবে ইনজেকশনটি কোমরে দিতে হবে।
তখন ওই তরুণী একটু বিব্রতবোধ করেন। এরপর ওই ডাক্তার বলেন, ‘কাপড়ের ওপর দিয়েই ইনজেকশন দেওয়া যাবে।’
মেয়েটি তার অভিযোগে আরও জানায়, ইনজেকশন দিতে রাজি হয়ে রোগী দেখার টেবিলে শুয়ে পড়লে ওই চিকিৎসক মেয়েটির বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতে থাকেন। মেয়েটি প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, ‘কোথায় ইনজেকশন দিলে ভালো হয় তা চেক করে দেখছেন।’
ওই তরুণী অভিযোগ বলেছেন, চিকিৎসক ইনজেকশন দেওয়ার পর তুলা দিয়ে চেপে না ধরে না তার জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে দেন। এ অবস্থায় মেয়েটি তাড়াতাড়ি সরে এসে ডাক্তারের ফিস দিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এ সময় সেই ডাক্তার আরেকবার তার গালের ইনফেকশনটি দেখতে চান। গাল দেখার ছলে ডা. শওকত ওই তরুণীকে চুম্বন করেন।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. মো. শওকত হায়দারের মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার ফোন করা হলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
যা বলল পপুলার কর্তৃপক্ষ
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পপুলার হাসপাতালের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান অচিন্ত্যকুমার নাগ দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল ওই তরুণী আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ওই চিকিৎসক আমাদের স্থায়ী চিকিৎসক না। তাই আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি নাই। ঘটনার পরে আমরা ওই চিকিৎসকের সাথে ফোনে কথা বলেছি। ওই চিকিৎসকের দাবি, যে এই মেয়েটি তার বন্ধুর মেয়ের বান্ধবী। তাই তাকেও তিনি মেয়ের মতোই দেখতেন। আর তার সাথে আংকেলের মতোই সম্পর্ক ছিল। তবে কোনোভাবে যদি তার আচরণে ওই তরুণী কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে তার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। ফোনের রেকর্ডেও এমনটা জানা গেছে বলে জানিয়েছেন পপুলার হাসপাতালের এই কর্মকর্তা।