বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাঁশ শিল্পেই জীবিকা চলে বীরগ্রামের শত পরিবারের

বাঁশ শিল্পেই জীবিকা চলে বীরগ্রামের শত পরিবারের

স্বদেশ ডেস্ক:

বগুড়ার ১২টি উপজেলায় বাঁশের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন শ্রমজীবী নারী-পুরুষ। এর মধ্যে হারিয়ে যেতে বসা বাঁশশিল্পকে আঁকড়ে ধরে এখনো জীবন ধারণ করছে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম এলাকার অন্তত একশ পরিবার।

 

বাঁশ থেকে তৈরি পণ্যগুলোর মধ্যে চাটাই, ঘরের ধারাই (সিলি), ডালা, মোড়া, ঝুড়ি, কুলাসহ হরেক রকমের পণ্য বিক্রি করে দেশীয় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছে পরিবারগুলো।

সম্প্রতি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শাজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পুরুষ ও নারীরা। দিনের সিংহভাগ সময় বাঁশের বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটে তাদের। 

জানা গেছে, শাজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম, কামারপাড়া ছাড়াও শেরপুর উপজেলার মাঝিপাড়া, জোড়গাছা, তালপট্টি, সীমাবাড়ী, বিনোদপুর, কাশিয়াবালা, সুঘাট, গাবতলী উপজেলার নিশোপাড়া, ধুনট উপজেলার পাকুড়িহাটা, নলডাঙা, সোনাহাটা, বাঁশহাটা, কান্তনগর, আদমদীঘি উপজেলার সান্দিরা ‘বাঁশশিল্প খ্যাত গ্রাম’ বলেই সর্বাধিক পরিচিত। এসব গ্রামে হাজারো নারী-পুরুষ বাঁশশিল্পের সঙ্গে জড়িত।

বীরগ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কেউ কেউ দা’ দিয়ে বাঁশ কাটছেন। আবার কেউ ‘বেতি’ তৈরি করছেন রকমারি পণ্য তৈরির জন্য। নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে এ কাজটি করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের এ কাজ। এভাবে একটি সময় দক্ষ হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়ে যায় নিত্যব্যবহার্য ও আকর্ষণীয় পণ্য। 

বীরগ্রাম হিন্দুপাড়ার তন্ময় শীল বাংলানিউজকে জানান, আগে গ্রামগঞ্জে বাঁশের তৈরি পণ্যের কদর ছিল। এসব পণ্য শোভা পেতো প্রত্যেক বাড়িতে। ঘরের বেশির ভাগ তৈজসপত্রই ছিল বাঁশের তৈরি। কিন্তু কালক্রমে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশশিল্পে ভাটা পড়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন প্লাস্টিক পণ্যের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশের পণ্য। তবুও পূর্ব পুরুষদের ব্যবসাকে এখনো ধরে রেখেছেন উপজেলার বীরগ্রাম, বীরগ্রাম কামারপাড়া, হিন্দুপাড়ার মানুষ। তাদের গ্রামে প্রায় ১০০টি পারিবার বাঁশের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এ গ্রামের সিংহভাগ মানুষই বাঁশের চাটাই ও ধারাই তৈরির কাজ করেন। তাদের জমিজমা নেই বললেই চলে। সহায় সম্পদও তেমন একটা নেই। আছে মাথা গোঁজার সামান্য ঠাঁই এবং হাড়ভাঙা খাটুনি খাটার শরীর।

তিনি বলেন, বাঁশের তৈরি এসব সামগ্রী জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলার ব্যাবসায়ীরা কিনে স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। বাঁশশিল্পের এ পেশার সঙ্গে বংশ পরম্পরায় জড়িত তাদের সন্তানরা। তারা জীবিকা নির্বাহে এটিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। 

ললিতা রানী, পূর্ণিমা রানী, রতন শীল বাংলানিউজকে জানান, বাঁশের তৈরি চাটাই, ধারাই, ডালা, ঝুড়ি, কড়পা, মাছ ধরার চাই, দারকিসহ বাঁশ দিয়ে মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী বানিয়ে থাকেন তারা। এসব সামগ্রী বুনোনের সিংহভাগ কাজ নারীরাই করে থাকেন। অন্যসব প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগাড় ও প্রস্তুতির কাজে যোগ দেন বাড়ির পুরুষরা। কিশোর-কিশোরীরাও এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করেন। তাদের ছেলে-মেয়েদের অনেকেই স্কুলে লেখাপড়া করে। আবার স্কুলে যাওয়ার বয়স হলেও অর্থাভাবে অনেকে যেতে পারে না। অভাব-অনটনের কারণে ইচ্ছে থাকলেও পরিবারের পক্ষে তাদের স্কুলে পড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। নতুন প্রজন্মের অনেকে এ পেশা থেকে বেরিয়ে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন বলেও জানান তারা।

তারা বলেন, একজন কারিগর দিনে দুই থেকে সর্বোচ্চ চারটি চাটাই তৈরি করতে পারেন। পাইকারদের কাছে এ চাটাই বিক্রি করা হয় ২০০ টাকা করে। আর খোলা বাজারে এ চাটাই বিক্রি হয় ২৫০-২৭০ টাকায়। এসব পণ্য গ্রামের হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়।

বাঁশ বিক্রেতা আজাহার মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বাঁশ বিক্রি অনেক কমে গেছে। লোহার পাইপ ব্যবহারের ফলে বাড়ি-ঘর বানানোর কাজে বাঁশ ব্যবহার দিন দিন কমছে। তার সংগ্রহে থাকা কিছু সবুজ রঙের বাঁশ এখন শুকিয়ে সাদা হয়ে নষ্ট হওয়ার পথে। বর্তমানে দিনে হাজার টাকার বাঁশও বিক্রি করা কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে দিনে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বাঁশ বিক্রি করেছি। তবে বাঙালির ঐতিহ্য বাঁশের কিছু পণ্য এখনো এলাকার ঘরে ঘরে ব্যবহার হয়ে আসছে। বাঁশের তৈরি বাহারি পণ্য তৈরির কাজে কারিগরদের কাছে বাঁশ বেচাকেনা হচ্ছে। 

বগুড়ায় বাঁশশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় নানান সামগ্রীর সঙ্গে সঙ্গে বাঁশের দামও বেড়েছে। প্রতিপিস বাঁশ কখনো ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় কিনতে হয় তাদের। বাঁশের পণ্যগুলোর মধ্যে বাজারে চাটাই বিক্রি হয় পিস প্রতি ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, ঘরের ধারাই (সিলি) স্কয়ার ফিট প্রতি ২০০-২৫০ টাকায়। বাঁশের তৈরি মাঝারি কুলা ১০০ টাকা, খৈ-চালনা ১৫০-২০০ টাকা, চাক ডালা ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ পেশাটাকে ধরে রাখতে তাদের ব্যাংক ঋণ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিকের পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। এ কারণে বাঁশের পণ্য দিন দিন কমে আসছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877