শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন

আত্মশুদ্ধি অর্জনে বায়াতের প্রয়োজনীয়তা…

আত্মশুদ্ধি অর্জনে বায়াতের প্রয়োজনীয়তা…

ফিরোজ আহমাদ: বায়াত অর্থ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া৷ আারও সহজভাবে এভাবে বলা যায়, গোনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখার শপথ করা৷ বায়াত বা পীর-মুরিদির কথা শোনামাত্রই অনেকে নাক ছিটকানো শুরু করেন৷ এসব বেদাত ভেবে বায়াত বা পীর-মুরিদি নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন৷ বায়াত বা পীর-মুরিদি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছুই নেই৷ অতীতের ছোট-বড় গোনাহ সম্পর্কে অনুতপ্ত হয়ে, অতীতের ভুলের জন্য নিজের নফসকে তিরস্কার করা এবং একজন আল্লাহওয়ালা লোকের কাছে গিয়ে ভুলত্রুটির জন্য তওবা করাই হলো বায়াত৷ এরশাদ হয়েছে-‘আরও শপথ করি সেই নফসের, যে নিজেকে ধিক্কার দেয়৷’ (সূরা কিয়ামাহ: ২)৷

আল্লাহ তায়ালা মানুষ েতাঁর ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য পাঠিয়েছেন৷ এ ইবাদত-বন্দেগির উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দি হাসিল করা৷ আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দি হাসিল করতে হলে নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ রাখতে হবে৷ অর্থাত্ সবধরনের ছোট-বড় গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে৷ এর কোনো বিকল্প নেই৷ রাসুল (সা.) এর জমানায় মানুষ অতীতের সব পাপ কর্ম পরিত্যাগ করে, এক আল্লাহর রেজামন্দি লাভের উদ্দেশ্যে রাসুল (সা.) এর কাছে বায়াত গ্রহণ করত৷ সে সময়ে তারা অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, রাসুল (সা.) কে সাক্ষী রেখে আল্লাহর কাছে তওবা করত৷ এরপর রাসুল (সা.) তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন৷ এরই ধারাবাহিকতায় আজও বায়াতের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে৷ এরশাদ হয়েছে-‘নিঃসন্দেহে আজ যারা আপনার কাছে বায়াত গ্রহণ করেছে, তারা তো প্রকারান্তরে আল্লাহর কাছে বায়াত গ্রহণ করেছে; (কেননা) আল্লাহর হাত ছিল তাদের হাতের ওপর, তাদের কেউ যদি এ বায়াত ভঙ্গ করে, তাহলে এর পরিণাম তার নিজের ওপরই এসে পড়বে, আর আল্লাহপাক তার ওপর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা যেন পূর্ণ করে, তিনি শিগগিরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন৷’ (সূরা ফাতহ: ১০)৷

পুরুরে পাশাপাশি নারীদেরও আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হবে৷ কারণ আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ উভয়কে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ অনেকে মনে করে থাকেন, নারীদের বায়াত গ্রহণের প্রয়োজন নেই৷ এরশাদ হয়েছে-‘হে নবী! যখন কোনো ঈমানদার নারী আপনার কাছে আসবে এবং এই বলে আপনার কাছে আনুগত্যের কসম করবে, তারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদের হত্যা করবে না, নিজ হাত ও নিজ পায়ের মাঝখান সংক্রান্ত মারাত্মক অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে আসবে না এবং কোনো সত্কাজে আপনার নাফরমানি করবে না, তাহলে আপনি তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন৷’ (সূরা মুমতাহিনা: ১২)৷

যারা গোনাহ কর েকরতে নিজের নফসকে অধিক পরিমাণ কলুষিত করে ফেলেছে, পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা তাদেরও হতাশ হতে নিষেধ করেছেন৷ গোনাহগার বান্দাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা আত্মশুদ্ধির পথ খোলা রেখেছেন৷ এরশাদ হয়েছে-‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের (নফসের) প্রতি জুলুম করেছ, তারা আল্লাহপাকের রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; অবশ্যই আল্লাহপাক সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু৷’ (সূরা জুমার: ৫৩)৷

বান্দা যখন নামারে মুসল্লায় দাঁড়িয়ে সিজদা আরজ করে, তখন সাধারণত সিজদারত অবস্থায় মানুষের কপাল মুসল্লাকে স্পর্শ করতে দেখা যায়৷ কিন্তু নামাজে সিজদারত অবস্থায় কপাল মুসল্লাকে স্পর্শ করলেও, সিজদা আল্লাহ তায়ালাই পেয়ে থাকেন৷ এক্ষেত্রে মুসল্লাকে উদ্দেশ্য করে সিজদা আরজ করা হয় না৷ আল্লাহকে উদ্দেশ্য করেই সিজদা আরজ করা হয়৷ এজন্য রাসুল (সা.) এর আনুগত্য করলে, আল্লাহর আনুগত্য করা হয়ে যায়৷ আল্লাহর বিধানই রাসুলের বিধান৷ রাসুল (সা.) এর আলাদা কোনো পথ বা বিধান নেই৷ এরশাদ হয়েছে-‘যে ব্যক্তি রাসুলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহরই আনুগত্য করে৷’ (সূরা নিসা: ৮০)৷ সুতরাং যারা আল্লাহ ও রাসুরে সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বায়াত গ্রহণ করবে, তারা মূলত আল্লাহর কাছেই বায়াত গ্রহণ করে৷ আল্লাহর বিধান ও রাসুলের সুন্নাহই হলো পীর-মুর্শিদের বিধান৷ পীর-মুর্শিদের আলাদা কোনো বিধান দেওয়া হয়নি৷

ঈমান আনার পর সঙ্গদোষে ঈমান হারানোর সম্ভাবনা থাকে৷ যারা কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল-ইবাদত করার পাশাপাশি কোনো কামেল পীর-মুর্শিদের সংস্পর্শে থাকবে, তারা কখনও ঈমান হারাবে না৷ এরশাদ হয়েছে-‘হে ঈমানদাররা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং কোনো অবস্থায় শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, কেননা শয়তান হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্যতম দুশমন৷’ (সূরা বাকারা: ২০৮)৷ আল্লাহ আমারে বায়াতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝার তৌফিক দান করুন৷ আমিন৷

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877