মিতবাক: সৌদি আরবে বিদেশী নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে বিরল এক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এর অধীনে বিদেশী কোনো নারী ও পুরুষ বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িত না থাকলেও একসঙ্গে হোটেলের একটি রুমে অবস্থান করতে পারবেন। এ জন্য তাদের মধ্যে কি সম্পর্ক তার প্রমাণ দিতে হবে না। অবকাশ যাপনকারীদের আকৃষ্ট করতে নতুন পর্যটন ভিসা চালুর পর রক্ষণশীল সৌদি আরবের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এখন থেকে সৌদি আরবের নারীসহ যেকোন নারী নিজেরাই হোটেল ভাড়া করে থাকতে পারবেন। আগের রেজুল্যুশনে তা বৈধ ছিল না। তা ভঙ্গ করে এবার নারীদের এই সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে কোনো নারী যদি একা একা সৌদি আরব সফর করতে চান তাহলে তার জন্য তা সহজ হবে। কারণ, তিনি সহজেই হোটেল বুকিং দিয়ে সেখানে অবস্থান করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অবিবাহিত বিদেশীরাও একসঙ্গে অবস্থান করতে পারবেন। এখানে উল্লেখ্য, পারস্য উপসাগরীয় দেশ সৌদি আরবে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ। সেক্ষেত্রে অবিবাহিত বিদেশী নারী-পুরুষ একসঙ্গে এক কক্ষে অবস্থান করা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আইনের এই সংস্কারের বিষয়টি প্রকাশ করেছে আরবী ভাষার পত্রিকা ওকাজ। এরপর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সৌদি কমিশন ফর টুরিজম এ্যান্ড ন্যাশনাল হেরিটেজ। তারা বলেছে, সৌদি আরবের সব নাগরিককে হোটেল বুকিং দেয়ার ক্ষেত্রে বা হোটেলে অবস্থানকালীন তাদের পারিবারিক পরিচয়পত্র অথবা সম্পর্কের প্রমাণ চাওয়া হবে। তবে বিদেশী পর্যটকদের জন্য তা বাধ্যতামূলক নয়। আইডি বা পরিচয়পত্র দেখিয়ে হোটেলে একা থাকার জন্য বুকিং দিতে পারবেন সৌদি আরবের যেকোনো নারী।
গত সপ্তাহে ৪৯ টি দেশের পর্যটকদের জন্য নিজের দরজা উন্মুক্ত করে দেয় সৌদি আরব। তারা এখন চেষ্টা করছে শুধু তেল রপ্তানির ওপর নির্ভর না করে পর্যটন খাতে অর্থনীতিকে বিস্তৃত করতে। অর্থাৎ পর্যটন খাত থেকে বড় অংকের অর্থ উপার্জন করতে চায় দেশটি। বিদেশীদের আকৃষ্ট করতে তারা পুরো শরীর ঢাকা বোরকা পরার নীতি শিথিল করেছে। তবে বলা হয়েছে, তাদেরকে শালীন পোশাক পরতে হবে। এ ছাড়া মদ পান নিষিদ্ধই থাকবে। এই দেশটির দরজা বহু দশক ধরে বিদেশীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। কোনো রকম সম্পর্ক নেই এমন নারী ও পুরুষ, বিদেশীসহ প্রকাশ্যে মেলামেশা করার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান ছিল। কিন্তু অর্থনীতির দিকে চোখ পড়ায় সরকার সেই নীতি শিথিল করছে। এতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সৌদি আরবে যেতে পারেন। এতে দেশটির যে রক্ষণশীল মর্যাদা আছে তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
গত বছর সরকার নারীদের গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। এ নিয়ে তারা ভীষণ সমালোচনার মুখোমুখি হয়। আগস্টে নারীদের বিদেশ সফরের নতুন করে অধিকার দেয়া হয়। জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে নারীদের অধিকার দেয়া হয়। এসব বিষয়ের কড়া সমালোচনা করা হলেও এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী অর্থনীতি ও সামাজিক সংস্কারের এজেন্ডা। তার এসব পরিকল্পনার ভূয়সী প্রশংসা রয়েছে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায়। কিন্তু তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসুলেটের ভিতরে ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা ও ইয়েমেনে বিধ্বংসী যুদ্ধের জন্য তার ভাবমূর্তিতে আঘাত লেগেছে।