স্বদেশ ডেস্ক: ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবী আজাদ বলেছেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে সরকার যে ছবি দেখাচ্ছে, তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। সেখানকার রাজনৈতিক নেতারা বন্দি, কিন্তু বিজেপি সেখানে নির্বাচন করছে। অবিলম্বে এসব বন্ধ হোক।’ সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে সম্প্রতি ছ’দিন জম্মু-কাশ্মীর সফরের মধ্য দিয়ে সেখানকার চলমান অবরুদ্ধ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সেরাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবী আজাদ ওই মন্তব্য করেছেন।
এ নিয়ে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও কোলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী সরদার আমজাদ আলী রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য গুলাম নবী আজাদ সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে কাশ্মীরের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে এসে যেকথা বলেছেন, সেই বিবরণকে অসত্য বলে মেনে নেয়া যায় না। সরকারপক্ষ থেকে কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থার যে দাবি করা হচ্ছে, যদি তাই হয় তাহলে কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতাকে সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তবে কাশ্মীরে যেতে হয় কেন? এরফলে সরকারের দাবির অসারতা প্রমাণিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের কাছে কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং কাশ্মীরের অত্যন্ত সম্মানীয় নেতা ডা. ফারুক আব্দুল্লাহকে গৃহবন্দি করে রেখে দেয়া হয়েছে। তার সঙ্গে কোনও মানুষ যোগাযোগ করতে পারছে না। তিনি কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। ওই অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের কাছে হেবিয়াস করপাসের আবেদন অর্থাৎ আদালতের সামনে ফারুক আব্দুল্লাহকে উপস্থাপিত করা হোক এই আবেদন পড়ে থাকা কাশ্মীরের স্বাভাবিক অবস্থা প্রমাণ করে না।’
সরদার আমজাদ আলী: গত (রোববার) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, ‘কাশ্মীরে কোনও বিধিনিষেধ নেই। বিধিনিষেধ কারও কারও মনের মধ্যে আছে। সেখানে তো এবার পঞ্চায়েতের নীচের স্তরে নির্বাচনও হবে।’ জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচন কমিশন এরইমধ্যে ব্লক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের (বিডিসি) নির্বাচনের ঘোষণাও দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গুলাম নবী আজাদ বলেন, আবদুল্লাহ-মুফতিদের (ফারুক আব্দুল্লাহ-ওমর আব্দুল্লাহ-মেহবুবা মুফতি) সঙ্গে কংগ্রেসের নেতাদেরও বন্দি রেখে আসন পুনর্বিন্যাস করে ফেলে বিজেপি যে নির্বাচন করাচ্ছে, তা বাতিল হোক। সব দলের নেতার সঙ্গে আলোচনা করে নতুনভাবে আসন পুনর্বিন্যাস করে পরের বছরে নির্বাচন করা হোক। তিনি সেখানে ছ’মাসের জন্য খাবার, ওষুধ বিনামূল্যে বিলি করাসহ স্কুল-কলেজ, ইন্টারনেট-মোবাইল চালু করারও দাবি জানিয়েছেন।
অমিত শাহ: আজাদ বলেন, ‘কাশ্মীরের অর্ধেক বাসিন্দাই শ্রমিক, কারিগর। সেখানে ব্যবসা, পরিবহণ বন্ধ থাকায় তাঁদের দিনমজুরিও নেই। শ্রীনগরের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত জম্মুরও ব্যবসা। সকালে যে এক/দেড় ঘণ্টা বাজার খোলা হয়, সেখানকার ছবি দেখিয়েই সরকার দাবি করছে ‘সব স্বাভাবিক, সব ভালো।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন অধিকাংশ জায়গায় যেতেই দেয়নি। যাঁরা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, গেস্ট হাউসের প্রধান দরজায় নিরাপত্তা চেকিং তো স্বাভাবিক। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভিজিল্যান্স ও সিআইডি’র লাগানো বড় ক্যামেরা দিয়ে যারা আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন তাঁদের ছবি রেকর্ড করা হয়েছে। এটা খুব বড় হয়রানির বিষয়। তাঁদের সঙ্গে কথোপকথনও ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। মুখ খুললে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয়েছে! সেখানকার মানুষ খেতে পাচ্ছেন না। কিন্তু তাঁরা প্রশাসনকে সমর্থন করছেন না।’
ইন্টারনেট-মোবাইল ফোন বন্ধ, স্কুল-কলেজ বন্ধ, ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। শুধু কাশ্মীর উপত্যকার নয়, জম্মুরও ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ও সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবী আজাদ।