স্বদেশ ডেস্ক:
জেলে থাকাকালীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কি করা হয়েছে সেবিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে কী করেছে, আজকে সেটি জানার বিষয় হয়ে গেছে। কেন আমাদের নেত্রীর, কেন দেশনেত্রীর, কেন গণতন্ত্রের মায়ের শারীরিক অবস্থা এই জায়গায় এসে পৌছেছে, তার পিছনে কারণ কি?’
তিনি বলেন, ‘একটা প্রশ্ন কিন্তু আজকে জেগেছে, তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, এর পেছনে কারণ কি? এর কারণ হিসেবে অনেকে দেখছেন যে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে জেলে রাখার সময় কি খাইয়েছে, তাকে ফুড পয়জনিং করেছে কিনা, কোনো স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা, বিদেশে নিয়ে গেলে পরীক্ষার মাধ্যমে সেসব বেরিয়ে আসতে পারে। এই প্রশ্নগুলো কিন্তু আজ জনমনে এসেছে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার আমিনবাজারে বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে দুপুর ২টা থেকে সাভারের আমিনবাজারে মিরপুর মফিদ ই আম কলেজ মাঠে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সরকার পতনের ১ দফা দাবিতে বিএনপির এই সমাবেশ শুরু হয়।
ঢাকা জেলা ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবার ও কল্যাণবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা: দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা, বিএনপির ঢাকা জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমিসহ জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসময় আরো বলেন, ‘স্বৈরাচারের প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করবে। আমরা দেখেছি তারা কত লোককে হত্যা করেছে, গুম করেছে। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিপক্ষকে জেলে ঢুকাতে হবে। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াই তার প্রধান প্রমাণ। কেননা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি বাইরে থাকে, এই স্বৈরাচার, এই ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হবে না।’
‘স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্টের আরেকটি চরিত্র হচ্ছে, মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, জেলে পাঠানো, বাড়িঘর আক্রমণ করা, যাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মতো করে তারা দেশটা দখল করে বসে থাকতে পারে,’ বলেন তিনি।
তিনি এসময় বলেন, ‘তারা বিচারবিভাগকে দখল করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দখল করেছে, আজকের সরকারি কর্মকর্তাদের দখল করেছে।’
তিনি বলেন, ‘২৫ তারিখে এইখানে সভা হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু হয়নি। পুলিশ আগের রাতে এখানে বানানো মঞ্চ ভেঙ্গে দিয়েছিল। পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগ ছিল, যুবলীগ ছিল- জয়েন্ট অপারেশন।’
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ‘আমি একটা কথা বলতে চাই, আজকে বাংলাদেশের বাইরে সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। আগামী নির্বাচনকে চুরি করার পথে যারা হাত বাড়াবে, তারা কেউই রেহাই পাবে না।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শুধু নয়, বিশ্ব আজকে বাংলাদেশকে বিশ্ব বিবেক বিশ্বের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো, দেশগুলো যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে, যারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে, যারা নির্বাচিত সরকারে বিশ্বাস করে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, প্রত্যেকে বাংলাদেশের উপর কঠিন নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে। সুতরাং সভা-সমাবেশ বন্ধ করার এই যে প্রক্রিয়া, মঞ্চ ভেঙ্গে দেয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত থাকবে, সবগুলো কিন্তু ডকুমেন্টেড হচ্ছে, রেকর্ড হচ্ছে নামসহ। কেউ বাদ যাবে না কিন্তু। শুধু বিদেশীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়বেন না, বাংলাদেশের মানুষের নিষেধাজ্ঞায়ও পড়বে।’
‘পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, পদত্যাগ করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন করতে হবে। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার হবে, সংসদ হবে, তারা জনগণের কাছে দায়ী থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। তার আগে কোনো রক্ষা নাই,’ বলেন আমীর খসরু।
এসময় ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১ লাখ কোটি টাকার উপরে শুধু বিদেশে পাচার করেছে, এর মধ্যে আমেরিকাতে সবচেয়ে বেশি। এই যে লোকজন, এখন ভিসানীতির ওপরে যে প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ভয়ভীতির কারণে আজকে অনেকে মুখ খুলছেন না, কিন্তু হৃদয় ফেটে যাচ্ছে। এখানে কেউ বাদ যাবে না, এমনকি বিচারকরাও বাদ যাবেন না। বিশ্বের কোনো দেশে ভিসানীতিতে বিচারকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, বাংলাদেশে হয়েছে। গণমাধ্যমও কিন্তু আজকে এর বাইরে নেই।’
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন গণমাধ্যম তো স্বাধীন মাধ্যম, এটা কেন ভিসানীতির মধ্যে আসবে। কেন মশাই, যারা সরকারি কর্মকর্তা ভোট চুরি করবে তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা ভোট চুরি করবে তাদের ওপর ভিসানীতি আসবে, বিচারক যারা ভোট চুরির সাথে জড়িত থাকনে তাদের উপর ভিসানীতি আসবে, আর আপনি সাংবাদিক হয়ে ভোট চুরিকে সাহায্য করবেন, আপনার ওপরে এই নিষেধাজ্ঞা আসতে অসুবিধাটা কোথায়?’
তিনি আরো বলেন, ‘একদিকে বিশ্ব গণতন্ত্র, আরেকদিকে বাংলাদেশের জনগণ, তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পরিষ্কার, এই সরকারের অধিনে কোনো নির্বাচন হতে পারবে না।’
সমাবেশের প্রধান বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘আজকের এই জনসভায় যেদিকেই তাকাই লোকে লোকারণ্য। জনগণ নিয়ে একত্রিত হয়েছি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী যত শক্তি আছে সবাই আজ একত্রিত হয়েছে, একটি মাত্র লক্ষ্যে। সেই লক্ষ্যটা হলো এই সরকারকে পদত্যাগ করানো। আমরা জানি, এই সরকার একটা ফ্যাসিস্ট সরকার, যারা আজ অবৈধভাবে জোর করে রাষ্ট্র চালাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা দেখি সাধারণ মানুষ অসহায়। একটি মা তার সন্তানকে একটা ডিম খেতে দিতে পারে না, তরকারি খেতে দিতে পারে না, কারণ সমস্ত জিনিস অগ্নিমূল্য হয়ে গেছে। কোনো জিনিস কেনার ক্ষমতা কারো নাই।’
‘বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যুবকেরা কর্মসংস্থান না পাওয়ার কারণে বেকার হয়ে পড়ছে। ছাত্র ছেলেরা, যুবক ছেলেরা আজ রিকশা চালাচ্ছে।’
‘আরোও দেখছি মিথ্যা মামলার বিএনপির নেতাকর্মীরা আদালতের দোরগোড়ায় ঘুরছে। কেউ গ্রেফতার হচ্ছে, কাউকে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে এবং কাউকে গুম-খুন-হত্যা করে শেষ করে দেয়া হচ্ছে। এটি করছে এই অবৈধ সরকার। জোর করে আবারো চেষ্টা করছে চক্রান্ত করে বিনাভোটে নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতায় থাকার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের জণগণ আর এটা হতে দিবে না,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি লড়াই করছে জণগণের মৌলিক অধিকারের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আর সেই লক্ষ্যে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে বিএনপি লড়াই করছে।’
গত এক বছরে বিএনপির ২২ জনকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি এখন থেকে জনগণ যা বলবে সরকারকে সেটিই মানতে হবে। আমরা জানি আমরা সঠিক পথে আছি। এই সরকার ভোট চোর। এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকার আর সুযোগ আমরা দিতে পারি না, আপনারাও দিবেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ব্যাংক লুট করে, আমাদের শেয়ারবাজার লুট করে, আমাদের জনগণের পেটে লাথি মেরে জনগণকে অর্থকষ্টে রেখে, জনগণের পকেট খালি করে এই সরকার তার সুবিধাভোগী সরকারদলীয় ব্যবসায়ীদের দিয়ে পাচার করছে। আর বিদেশে বাগান বাড়ি কিনছে। কেউ বেগমপাড়ায় কিনছে, কেউ যুক্তরাষ্ট্রের কিনছে, কেউ যুক্তরাজ্যে কিনছে, কেউবা দুবাইতে বিনিয়োগ করছে।’
‘আজকে আমেরিকার বাংলাদেশে ভিসানীতি প্রদান করেছে, যা আমাদের বাংলাদেশের জন্য লজ্জার,’ বলেন তিনি।
তিনি এসময় আরো বলেন, ‘আজ গুম-খুনের শিকার পরিবারের শিশুসন্তানেরা বাবাকে ফিরে পেতে চায় কিন্তু পায় না। যেখানে আমাদের রিজার্ভ শূন্য হয়ে গেছে, যেখানে ডলার সংকট সেই সময়ে তিনি তার দলবল নিয়ে বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাকে আজ মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। মৃত্যুর সাথে লড়াই করা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন, কিন্তু তারা তাকে পাঠাতে দিচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ আল্টিমেটাম দিয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা অবশ্যই মুক্তি দিয়ে যেভাবেই হোক আমরা বিদেশে প্রেরণ করবো। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায় করবো।’
সমাবেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।