স্বদেশ ডেস্ক:
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন আজ। মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথে বেড়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। গ্রামের সাথে তাই তার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তিনি পুরান ঢাকার মোগলটুলীর রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে আবাসস্থল স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলীর নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। এভাবেই শুরু হয় তার শহরবাসের পালা।
১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশী বাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। সে বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন।
বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনার বিয়ে হয় ১৯৬৮ সালে। বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় ১১-দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোরী বয়স থেকেই তার রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশ-মাতৃকার হাল ধরার। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সরকার গঠনের পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বার এবং স্বাধীন বাংলাদেশের চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। জন্মদিনে শেখ হাসিনা বর্তমানে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ ইতোমধ্যে তিনি মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। গত প্রায় ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার সরকারের স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আজ দৃশ্যমান। এরকম ছোট বড় বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে টুকিটাকি সমালোচনা থাকলেও গরিব ও নিঃস্ব মানুষের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের থাকার যে ব্যবস্থা করেছেন তা নজিরবিহীন। এছাড়াও শত ব্যস্ততার মধ্যে তিনি সাহিত্যচর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করবে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও আজ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বাদ জোহর দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। একইসাথে সারা দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দলটির গৃহীত কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আলোচনা সভা, আনন্দ র্যালি, শোভাযাত্রা, সারা দেশের সব মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার জন্য সব সহযোগী সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাগুলোর সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একইসাথে তিনি আওয়ামী লীগের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি পালন করার অনুরোধ জানান।