স্বদেশ ডেস্ক:
-শর্ত পরিপালনে বাড়তি ১২ হাজার
-কোটি টাকার সংস্থান করতে হবে
মূলধন সংরক্ষণে পিছিয়ে পড়েছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। খেলাপি ঋণের আধিক্যের কারণে ব্যাংকগুলো ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে সংরক্ষণ করতে হবে ৩০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো মার্চ শেষে সংরক্ষণ করেছে ১৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা পরিপালন করতে ব্যাংকগুলোর বাড়তি সংরক্ষণ করতে হবে ১২ হাজার কোটি টাকার উপরে।
জানা গেছে, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, বছরের পর বছর কোনো ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি থাকতে পারবে না। আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত মেনে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২ বছরের পর মূলধন ঘাটতি হলে ওই ব্যাংককে হয় মার্জার অর্থাৎ অন্য কোনো ব্যাংকের সাথে একীভূত হয়ে যেতে হবে, অথবা বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে কোনো ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হলে, তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কীভাবে মূলধন ঘাটতি পূরণ করবে তার পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে তা মনিটরিং করবে। এভাবে দুই বছর পর আইন অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ দিকে মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাংকগুলো ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়ে। ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়লে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়ে যায়। কারণ, মূলধন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকিং খাতের রেটিং খারাপ হয়। ফলে পণ্য আমদানিতে দেশীয় ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। এতে থার্ডপার্টি গ্যারান্টির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হয়। এতে ব্যয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণের হার আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে গত সোমবার ব্যাংকগুলোর নতুন এক নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার ৫০০ কোটি টাকা বা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ এ দুয়ের মধ্যে যেটি বেশি তা সংরক্ষণ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় অনেক ব্যাংকই বেকায়দায় পড়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়ে যাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীত মূলধন সংরক্ষণের হার নিয়ে তৈরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে ৬ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে জনতা ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেশি ৮৫ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণের কথা ছিল ব্যাংকটির ৮ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। ব্যাংকটি মূলধন সংরক্ষণ করেছে ৬ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যাংকের জুনভিত্তিক ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা বাড়তি প্রয়োজন হবে।
অগ্রণী ব্যাংকের ৭৪ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ৭ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকার মূলধন সংরক্ষণের কথা ছিল। মার্চ শেষে ব্যাংকটি মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত পরিপালন করতে ব্যাংকটির বাড়তি প্রয়োজন হবে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের ৭১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করার কথা রয়েছে ৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। কিন্তু মার্চ শেষে ব্যাংকটি মূলধন সংরক্ষণ করেছে ৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বাড়তি মূলধন সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন হবে আরো ২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের ৪৭ হাজার ৬০ কোটি টাকার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের কথা রয়েছে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি মার্চ শেষে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। ব্যাংকটির আরো প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। সমস্যা কবলিত বেসিক ব্যাংকের ১৮ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ১ হাজার ৮৬২ কোটি টাকার মূলধন সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু ব্যাংকটির আগে থেকেই ঘাটতি ছিল ৪৬৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকটির মূলধন সংরক্ষণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। তবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের মধ্যে সুবিধাজনাাক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। ব্যাংকটির কোনো মূলধন ঘাটতি নেই, বরং উদ্বৃত্ত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি উন্নতি করতে হলে ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্কতার সাথে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।