রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
রাজশাহীতে হাটে হাটে প্রচুর গরু, দাম বেশি

রাজশাহীতে হাটে হাটে প্রচুর গরু, দাম বেশি

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজশাহীর দুর্গাপুরের বাসিন্দা শহীদুল অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। করোনার প্রভাবে গত বছর চাকরি হারান তিনি। এরপর আর চাকরির খোঁজ পাননি। জীবিকার তাগিদে টুকটাক ব্যবসা করেন। কখনো ডিম কেনাবেচা আর কখনো ফুটফরমাশ খেটে কোনো রকমে চলছে তার সংসার। প্রতিবছর ভাগে কোরবানি দেন তিনি। কিন্তু এবার দিতে পারছেন না। শহীদুলের মতো অবস্থা আরও অনেকের। এদিকে রাজশাহীর হাটগুলোতে এবার প্রচুর পশুর সমাগম হয়েছে। দামও বেশি।

ঈদুল আজহা এলেই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই একটি গরু কয়েকজন মিলে কোরবানি করেন। সাধারণত সাতজনে মিলে একটি গরু কেনা হয়। এ ছাড়া তিনজন আবার পাঁচজনও ভাগিদার হন। কিন্তু এবার ভাগেও কোরবানির গরু কিনতে পারছেন না অনেকে। তারা বলছেন, সব জিনিসের দাম বাড়তি। তাই এবার মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের হাতে টাকা নেই।

বাগমারা উপজেলার কনোপাড়া গ্রামের কৃষক শামসুদ্দিন জানান, গত বছর তারা সাতজন মিলে একটি গরু কোরবানি দিয়েছিলেন। এবার নিজে গরুর একটা অংশ নেওয়ার জন্য ভাগিদার খুঁজেছেন। কিন্তু পাননি। গতবার যে সাতজন গরুর ভাগিদার হয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ এবার ছোট আকারের ছাগল কোরবানি দিচ্ছেন। কেউ দিতে পারছেন না।

মোহনপুর গ্রামের অটোরিকশা চালক রুবেল হোসেন জানান, তিনি গত বছর ১২ হাজার টাকা দিয়ে গরুর ভাগ নিয়েছিলেন। এবার তিনি কোরবানি দিতে পারছেন না। কারণ এবার একেকজনের ভাগে লাগছে ২০ হাজার টাকা করে। সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাতে বাড়তি টাকা থাকছে না।

এদিকে উত্তরাঞ্চলের বড় পশুর হাটগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজশাহীর সিটি হাট। গতকাল এ হাটে গিয়ে বিপুলসংখ্যক গরুর উপস্থিতি দেখা যায়। সেখানেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির গরু কেনার একই রকম চিত্র পাওয়া যায়।

নগরীর পূর্ব রায়পাড়া মহল্লার আশরাফুল ইসলাম পাঁচজন মিলে কোরবানি দেওয়ার জন্য একটি গরু কিনতে এসেছেন। তিনি জানান, তারা যেমন গরু পছন্দ করছেন, সেই গরুর দাম এক লাখ ১০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তাদের বাজেট ৮০-৮৫ হাজার টাকা।

সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বসেছে অস্থায়ী দৈনিক হাট। এসব হাটে চলছে পশু কেনাবেচা। তবে বাজারে মাংসের দাম যেমন বেশি, কোরবানির পশুর দামও তেমন। খামারি ও ব্যবসায়ীরা মাংসের দামের কেজি হিসেবে পশুর দাম নির্ধারণ করছেন। তারা বলছেন, পশুখাদ্যসহ সব কিছুর দাম চড়া, তাই গরুর দামও বেশি। আর দাম বেশি হওয়ায় পশু কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে গরু না কিনেই ফিরছেন বাড়ি। তবে যাদের সামর্থ্য রয়েছে- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারা পছন্দের পশুটিই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দাম বেশি-কমের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

হাট ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির জন্য সবাই ছোট ও মাঝারি গরুই বেশি খুঁজছেন। আর তাই বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। তবে এক লাখ টাকার নিচে গরু পাওয়াই কষ্টকর। আর হাটে বড় গরুগুলোর দামই শুরু হচ্ছে দুই লাখ থেকে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রাম থেকে সিটি হাটে কোরবানির জন্য নিজের পোষা গরু বিক্রি করতে আসা গোলাম মোস্তফা বলেন, বাজারে সব পণ্যের দামেই আগুন লেগেছে। গরুকে সব কিছুই বাজার থেকে কিনে খাওয়াতে হয়।

গরু নিয়ে হাটে আসা পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরের ব্যবসায়ী একরামুল হক জানান, তার কাছে ৩ মণ ওজনের গরু আছে দাম এক লাখ টাকা, ৪ মণ ওজনের গরুর দাম এক লাখ ২০ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর ৫ মণ ওজনের গরু দেড় লাখ টাকা দাম চাইছেন। এর চেয়ে বড় গরুর দাম দুই লাখ টাকা থেকে শুরু।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন জানান, গত বছর রাজশাহীতে কোরবানি করা হয়েছিল ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭৭টি পশু। এ সংখ্যাকেই এবার চাহিদা হিসেবে ধরা হয়েছে। এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫৭টি। চাহিদা অনুযায়ী উদ্বৃত্ত থাকছে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৯৮০টি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877