স্বদেশ ডেস্ক: স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে জিএস গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নূরুল হক নুর।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ডাকসুর নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। ডাকসুর অপরপক্ষের এক সংবাদ সম্মেলন শেষে তার মুখোমুখি হন সাংবাদিকরা।
এদিকে, যে ৩৪ জনের ভর্তির ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে ভিপি নুর বলছেন তারা জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন, অপরদিকে এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলছেন নিয়ম মেনেই তারা ভর্তি হয়েছেন।
ভিপি নুর বলেন, ‘আমরা জিএসকে বারবার আহ্বান করেছি তিনি যেন তার পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। তিনি তা না করলে তার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নুর বলেন, ‘ছাত্র সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে তার পদত্যাগের দাবি তুলেছে। ভিসিও বলেছেন বিষয়টি নিয়ে ডাকসুর গঠনতন্ত্র দেখে যে ধরণের ব্যবস্থা নেয়া যায় সে ধরণের ব্যবস্থা তিনি নিবেন।’
এজিএস যে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে তা ডাকসু থেকে ডাকা হয়নি দাবি করে নুর বলেন, ‘সাধারণ ছাত্রসহ আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করছি সে বিষয় নিয়ে তারা গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করছে।’
নুর জানান, ‘যে ৩৪ জন ছাত্র ডাকসু নির্বাচনের আগে তফসিল ঘোষণার পর ভর্তি হয়েছে তারা কোনো রকম ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি হয়েছে। যেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ নিয়মনীতি পরিপন্থী।’
ডাকসুর ভিপিকে প্রোগ্রামে পাওয়া যায় না- ‘এজিএসের এমন অভিযোগের জবাবে নুর বলেন, তাদের একটি প্রবণতা আছে আমাকে পাশকাটিয়ে প্রোগ্রাম করার। যে সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে তখন আমি রুমে উপস্থিত। তারা যদি ভিপিকে এভয়েড করে আমার কী বা করার আছে?
আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, যে ৩৪ জন ছাত্র ভর্তি হয়েছে তারা জালিয়াতি করে ভর্তি হয়েছে। সে ভর্তির সাথে জড়িত ডিন। ভিসি বলেছেন তিনি জড়িত নন। ডিনের অপসারণ এবং যে সাতজন ডাকসুতে ও একজন হল সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের অপসারণ চেয়ে আমি ভিসিকে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি; যেহেতু তিনি ডাকসুর সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক।
জিএসের বিষয়ে আমরা বলবো, তার অপকর্মের কারণে, দুর্নীতির কারণে তাকে একটা ছাত্র সংগঠনের পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় যেখানে দেশের সব মানুষের আশা ও ভরসার একটি জায়গা, সেখানে অভিযুক্ত সে ব্যক্তি কিভাবে প্রতিনিধিত্ব করে? তাতে করে ডাকসুকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে। সেই সাথে খারাপ একটি দৃষ্টান্তও হয়ে থাকবে।’
ভিপি নুর বলেন, ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম। সেখানে বলেছিলাম, এ বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ কি হবে? তারা আমাকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে না করেছেন। একটা ছাত্র সংগঠন থেকে ২৫ জনের মধ্যে যেহেতু ২৩ জন প্রতিনিধিত্ব করছেন ডাকসুতে, তাতে তাদের প্রাধান্যই বেশি। আর অভিযোগের আঙ্গুল তাদের দিকে হওয়াতে বিষয়টি নিয়ে তারা কথা বলতে চান না। আমি ভিপি হিসেবে ভর্তি জালিয়াতির বিষয়টির বিষয়ে চুপ থাকতে পারি না।
আর যে সংবাদ সম্মেলনটি ডেকেছে তা ডাকসুর সংবাদ সম্মেলন নয়। তারা ব্যক্তিস্বার্থের জন্য সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। সেখানে ডাকসুর কোনো বিষয় নিয়ে আলাপও হয়নি।
তিনি বলেন, তারা সেখানে বলেছে, ভর্তির বিষয়টি নিয়ে এক বছর আগে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সে ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেয়নি।
ডিন যেটা বলেছেন, চেয়ারম্যান্স কমিটিতে একটি মৌখিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি মৌখিক সিদ্ধান্তের উপর চলবে?
এখানে একাডেমিক কাউন্সিল আছে, সিনেট আছে। আর চেয়ারম্যান্স কমিটির কোনো এখতিয়ার নেই সিদ্ধান্ত নেয়ার। তারা সর্বোচ্চ সুপারিশ জমা দিতে পারে ডিনের কাছে। আমি যদি ভুল বলে থাকি তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, তারা শতভাগ অনৈতিকভাবে জালিয়াতি করে ভর্তি হয়েছে।
ডাকসুর প্রতিনিধি হিসেবে ১৫ আগস্ট, ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসগুলোতে পাওয়া যায় না- এমন অভিযোগের জবাবে নুর বলেন, ‘১৫ আগস্টে আমাদের ১১টি প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে ভিপি ও জিএসের স্বাক্ষরিত একটি প্রেস রিলিজও ছিল। সেই কর্মসূচির প্রতি আমার একমত ছিল। কিন্তু যখন ডাকসুর প্রোগ্রামে ইনভাইট করা হয় ছাত্রলীগের চার নেতাদের, সেখানে ভিপির নাম লেখা হয়নি হীনমন্যতার কারণে। তারা ডাকসুকে ছাত্রলীগের মুখপাত্র হিসেবে প্রেজেন্ট করতে চায়। সে জায়গায় তো ভিপি যাবে না। কোনো প্রোগ্রামেই তারা ভিপির নামটি লিখে না।’
‘বিজনেস অনুষদের ডিন, যিনি ভর্তি জালিয়াতির সাথে জড়িত, তাকে ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে। এধরণের প্রসাশন থেকে কীভাবে নৈতিকতা আশা করা যায়।’
‘একটি ছাত্র সংগঠন হল চালাবে এটা মেনে নেয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন যেখানে হলগুলো পরিচালনা করার কথা, তা না করে একটি ছাত্র সংগঠনকে এ ব্যাপারে নির্লজ্জভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এর থেকে উত্তরণেরও কোনো উপায় তারা বের করছে না। নিজেদের পদপদবি ঠিক রাখতে তারা এমনটি করছেন’, বলেন নুর।
তিনি বলেন, ‘আজ তিন দিন হয়েছে জিএসের বিষয়ে ছাত্ররা আন্দোলন করছেন। কিন্তু ডাকসুতে ভিপি ছাড়া আর কেউ তার বিষয়ে কথা বলছেন না। কিছু কাজ আমরা সময় নিয়ে করছি যাতে তারা বলতে না পারে যে তাদের বিষয়টি জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ভিসি বরাবর চিঠি দিব।’
সবাই নিয়ম মেনেই ভর্তি হয়েছেন : দাবি এজিএসের
এর আগে ডাকসুর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন ডাকসুর এজিএসসহ অন্যরা। যেখানে ভর্তি জালিয়াতির সাথে অভিযুক্তরাও উপস্থিত ছিলেন।
ঐতিহাসিক শিক্ষা দিবসে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্মরণ করে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের যেসব নেতা নির্বাচন করেছেন, তারা নিয়ম মেনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা সবাই নিয়ম অনুসরণ করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঐতিহ্য ও প্রথা রয়েছে, রীতি রয়েছে সে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ভর্তি হয়েছে। যেভাবে একটি সুনির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনকে দায়ী করে বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের নেতা বলেই তাদেরকে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, তা সঠিক নয়।’
সাদ্দাম বলেন, ‘আমরা সুস্পষ্ট করে ডাকসুর পক্ষ থেকে বলতে চাই, অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়নি। ভর্তি হয়েছে ঢাকা ভিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে। এ প্রক্রিয়ায় শুধু ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ভর্তি হননি, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন ও স্বতন্ত্র জোটের অনেকে ভর্তি হয়েছেন। দুঃখজনক যে, শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনকে দায়ী করা হচ্ছে।’
যারা ডাকসু নির্বাচনে প্রত্যাখাত হয়েছিল তারা বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাদেরকে আমরা বলবো, তিন দশক পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশ পেয়েছি। আপনাদের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে যেন পরিবেশ বিঘ্নিত না হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, ক্যাফেটরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।