স্বদেশ রিপোর্ট:
বন্দুকের গুলিতে ৫ দিনের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে আরেক বাংলাদেশী মেধাবি ছাত্রের প্রাণ গেল। লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কম্প্যুটার সিকিউরিটি বিষয়ে পিএইচডি ক্লাসের ছাত্র মো. ফিরোজ-উল-আমিন (২৯)কে ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার স্থানীয় সময় ভোররাত সাড়ে ৩টায় লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ব্যাটন রোজে একটি গ্যাস স্টেশনে কর্মরত অবস্থায় ছিনতাইকারিরা ফিরোজকে গুলি করে হত্যা করেছে। ব্যাটন রোজের পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশী শহিদের মালিকানাধীন ‘মি. লাকী’স ভ্যালারো গ্যাস স্টেশন’-এ রাতের শিফটে কাজ করছিলেন গাজিপুরের ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ সংলগ্ন এলাকার ফিরোজ। গত বছর এই সময়েই বাংলাদেশে তার বাবা মারা যান। তিনি ছিলেন একমাত্র পুত্র সন্তান। তার এ মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদ জেনে একমাত্র বোন এবং মা পাগলের মত হয়ে টেলিফোনে ফিরোজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অনুরোধ জানিয়েছেন ছেলের লাশ যেন পাঠিয়ে দেয়া হয়।
একই ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়া ড. রিয়াজ শনিবার রাতে এনআরবি নিউজের এ সংবাদদাতাকে জানান, ‘আসছে ডিসেম্বরেই বাংলাদেশে যাবার কথা ছিল। সে সময় ফিরোজের বিয়ে হবে এজন্যে সে গত কয়েক মাস যাবত ঐ গ্যাস স্টেশনে কাজ করছিলেন। গত সপ্তাহেই বিয়ের আংটি ক্রয় করেছেন ফিরোজ। পরিকল্পনা ছিল নবপরিনীতাকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যাবেন মধুচন্দ্রিমায়। এরপর কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে স্ত্রীকে এখানে আনতে চেয়েছিলেন জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে অনার্সসহ মাস্টার্স কারি ফিরোজ। কিন্তু ঘাতকের বুলেট সবকিছু তছনছ করে দিল। এ ঘটনায় লুইজিয়ানার সর্বস্তরের প্রবাসীকে শোকে আচ্ছন্ন করেছে। এ হত্যাকান্ডে ব্যথিত লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির গণসংযোগ কর্মকর্তা আর্নি ব্যালার্ড এনআরবি নিউজকে জানান, ইউনিভার্সিটির কম্প্যুটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে পিএইচডি করছিলেন ফিরোজ। ডিজিটাল ফরেনসিক, রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মালওয়্যারে এনালাইসিসে বিশেষভাবে পারদর্শী অধ্যাপক গোল্ডেন জি রিচার্ডের অধীনে ফিরোজ কাজ করছিলেন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক গোল্ডেন জানান যে, তার ল্যাবরেটরিতে মালওয়্যারে এনালাইসিস এবং সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে গবেষণা করতেন ফিরোজ। ফিরোজ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবি। তার এই কোর্স শেষ হবার কথা ২০২৩ সালে।
প্রায় একই এলাকা তথা নিউঅর্লিন্সের রিজিওনাল ট্র্যাঞ্জিট কমিশনার ড. মোস্তফা সারওয়ার মেধাবি ছাত্র ফিরোজের মৃত্যু সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এনআরবি নিউজকে বলেন, ‘ ময়না তদন্ত শেষে সোমবার নাগাদ তার লাশ পাওয়া যেতে পারে। এরপরই তার মায়ের ইচ্ছায় লাশটি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।’ড. রিয়াজ রোববার ভোর রাতে এ সংবাদদাতাকে আরো জানান যে, ফিরোজের ঘাতক গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্যাস স্টেশনসহ আশপাশের সিসিটিভি পরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, এর ঠিক ৫ দিন আগে অর্থাৎ সোমবার ভোররাত সাড়ে ৪টায় নিউইয়র্ক সিটির রিচমন্ড হীল এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. শাহেদ উদ্দিন (২৭) নামক এক বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় তার বাবা যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি আলহাজ্ব বাবরউদ্দিনের বাসায় কুলখানী অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় জানানো হয় যে, শাহেদের ঘাতক এখনও গ্রেফতার হয়নি। তবে পুৃলিশ নাকি সাড়াশী অভিযান চালাচ্ছে গ্রেফতারের জন্যে।