স্বদেশ ডেস্ক:
আমেরিকায় অন্যান্য সংখ্যালঘুর তুলনায় মুসলমানদের সম্পর্কে খুব বেশি নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে। মিডলবারি কলেজের সংখ্যালঘু প্রকল্প গবেষণায় ‘গণমাধ্যম চিত্রায়ন’ বিভাগের গবেষকরা এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন। গবেষণার জন্য তারা নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং ইউএসএ টুডে এই চারটি প্রভাবশালী গণমাধ্যমে প্রকাশিত মোট ২৬৬২৬টি নিবন্ধ নির্বাচিত করেন।
২০১৮ সালে পুরো বছরজুড়ে আমেরিকার এই চারটি জাতীয় সংবাদপত্রে থাই সংখ্যালঘু, আফ্রিকান আমেরিকান, এশিয়ান আমেরিকান, ল্যাটিন, ইহুদি ও মুসলমানদের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সেসব সংবাদ সংগ্রহ করা হয়। ইতিবাচক ও নেতিবাচক এই দুই ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে গবেষণাকারী দলটি স্কোরের মাধ্যেমে অবস্থান নির্ধারণ করেছেন। ০.৫ এর উপরে স্কোর হলে সংবাদটি ইতিবাচক ধরা হয়েছে এবং ০.৫ এর নীচের স্কোর হলে তাকে নেতিবাচক সংবাদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে যে, ল্যাটিনদের -০.১৩ এবং এশিয়ান আমেরিকানদের +০.১৭ স্কোরের তুলনায় মুসলমানদের গড় রেটিং-.০৯২ ধরা হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক খবরের পরিমাণ তুলনামূলক অনেক বেশি।
গবেষণার নেতৃত্বদানকারী এরিক ব্লিচ বলেছেন, ‘আপনি যদি এই সমস্ত নিবন্ধ আপনার সমীকরণের বাইরে নিয়ে গিয়েও বিশ্লেষণ করেন, তবুও মুসলমানদের সম্পর্কে খবরগুলো অন্য যেকোনো পক্ষের খবরের চেয়েও নেতিবাচকই পাবেন। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, গত পাঁচ বছরে মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের গড় হার কিছুটা কমেছে। এর কারন হিসেবে ব্লিচ সিরিয়ার শরণার্থী সঙ্কট ও সন্ত্রাসী দায়েশ গোষ্ঠীর খবর তুলনানামূলক কম প্রচারের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
সংস্কৃতি ও শিক্ষা সম্পর্কিত নিবন্ধগুলো বিশেষত রাজনীতির তুলনায় অনেক বেশি ইতিবাচক ছিল। তবে, ব্লিচ বলেন যে, নিবন্ধনগুলোতে মুসলমানদের সংস্কৃতি বা শিক্ষা সম্পর্কে প্রচার সম্ভবত কম ছিল, বরং রাজনীতি এবং অপরাধের বিষয়গুলোই বেশি প্রচার করা হয়েছে। মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদনের একটি প্রধান উৎস ছিল বিদেশীদের সাথে দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত বিষয়। কারণ নিবন্ধগুলোর প্রায় ৯২ শতাংশ অভিবাসী এলাকা সম্পর্কিত ছিল।
খবরে বলা হয়েছে, ‘সংস্কৃতি, শিক্ষা, ঘরোয়া রাজনীতির মতো মুসলিম জীবনের অন্য বিষয়গুলোতে তুলনামূলকভাবে কম মনোযোগ দেয়ার মাধ্যমে পত্রিকাগুলো পাঠকদের দৃষ্টিভঙ্গিতে মুসলমানদের মূলধারার আমেরিকান সমাজের অংশ হিসাবে দেখার বিষয়টি কঠিন করে তুলেছে।’
গবেষণায় আরো প্রকাশিত হয়েছে যে, মুসলমানদের সম্পর্কে নিবন্ধগুলোর মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ ইসলামভীতি বা মুসলিমবিরোধী মনোভাবের বিষয়ে খবর ছেপেছে। ৩ শতাংশ মুসলিমবিরোধী ঘৃণ্য অপরাধের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। অথচ নিবন্ধনগুলোতে ইহুদি সম্প্রদায় সম্পর্কে যে বিদ্বেষ তা প্রায় ১৭ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি ইহুদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে অন্য সংখ্যালঘুদের তুলনায় গবেষকরা বেশি ‘নিরপেক্ষ’ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছেন।