বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গাদের জন্য কমছে আন্তর্জাতিক সহায়তা

রোহিঙ্গাদের জন্য কমছে আন্তর্জাতিক সহায়তা

স্বদেশ ডেস্ক:

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা মানবিক কর্মসূচির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ সরবরাহের ভাটা পড়তে শুরু করেছে এবং পর্যাপ্ত কিংবা প্রতিশ্রুত অর্থ না আসার জন্য কিছু বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি কমিয়ে আনতে শুরু করেছে।

বৈদেশিক সাহায্যের বিষয়টি যারা সমন্বয় করে সেই জয়েন্ট রেসপন্স প্লান বা জেআরপির হিসাবে ২০২২ সালে জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থা মোট ৮৮১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চাইলেও আগস্ট পর্যন্ত মিলেছিল মাত্র ২৮৫ মিলিয়ন ডলার।

শেষ পর্যন্ত গত বছর মোট কত অর্থ এসেছে তা নিয়ে হিসাব-নিকাশ এখনো চলছে।

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া শুরু করে। বারবার চেষ্টা করেও বাংলাদেশ সরকার তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করতে পারেনি।

জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থার হিসাবে, ভাসানচরসহ কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে প্রায় দুই লাখ পরিবারে ৯ লাখ ৩৮ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাস করছে। যদিও বাংলাদেশের হিসাবে রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি।

মূলত ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, জ্বালানি ও চিকিৎসার মতো বিষয়গুলোতে সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থা, জাতিসঙ্ঘ অভিবাসন সংস্থা ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। আর শিক্ষার বিষয়টির দেখভাল করে ইউনিসেফ।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তারা মূলত অর্থ ব্যয় করে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের হিসরব অনুযায়ী, প্রায় ১৫০টি সংস্থা রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য নিয়ে কাজ করে আসছে।

তবে সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কিছু সংস্থা যথেষ্ট ফান্ড পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাদের কিছু কর্মসূচি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় থাকা সরকারি সংস্থা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রত্যাশা অনুযায়ী আসছে না, যা এখন আরো কম আসছে।

সহায়তা কতটা চাওয়া হচ্ছে আর আসছে কতটা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক সহায়তার জন্য সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) তথ্য অনুযায়ী মূলত ২০১৯ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ সহায়তা।

২০১৯ সালে ৯২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চেয়ে পাওয়া গিয়েছিল ৬৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে ১০৫৮ মিলিয়ন ডলার চেয়ে পাওয়া গেছে ৬৮৪ মিলিয়ন ডলার।

আর ২০২১ সালে ৯৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চেয়ে পাওয়া গেছে ৬৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২০২২ সালে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ কত তা নিয়ে এখনো হিসাব-নিকাশ করছে আইএসসিজি।

তবে সেটি আগের বছরের চেয়ে কম হবে বলেই মনে করছেন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা।

আর চলতি বছরের শুরু থেকেই কিছু বেসরকারি সংস্থা মানবিক কিছু কর্মসূচি বন্ধ করার বিষয়টি নিজ নিজ কর্মীদের জানিয়েছে।

‘মূলত ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। কিছু প্রকল্পের জন্য দাতাদের অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই বন্ধ হচ্ছে কিছু কর্মসূচি,’ বলছিলেন একটি বেসরকারি সংস্থার একজন কর্মকর্তা। তবে তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ রেডক্রস, বাংলাদেশ-এর হেড অব ডেলিগেশন কাৎজা লরেঞ্জ বিবিসিকে বলেছেন, রেডক্রস ও এর পার্টনাররা ঝুঁকিতে থাকা মানুষের মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

‘বাংলাদেশে সংকটের শুরু থেকেই যেসব সংস্থা কাজ করছে আইসিআরসি তাদের মধ্যে অন্যতম। মিয়ানমার থেকে আসা বাস্তুচ্যুতদের ভবিষ্যতেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

দৃষ্টি কমছে ২০১৯ সাল থেকেই
২০১৯ সালের আগস্টে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য একদিকে বৈদেশিক সাহায্য কমছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে নিজেদের তহবিল থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা শরণার্থীদের জন্য খরচ করেছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। যদিও তার আগের দুই বছরে কক্সবাজার শহরজুড়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিস গড়ে উঠেছিল।

মূলত দেশে কর্মরত প্রায় সবগুলো আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার অফিস রয়েছে এই শহরে এবং একই সাথে কাজ করছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও।

অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, প্রথম রোহিঙ্গাদের জন্য যে অর্থ প্রত্যাশা করা হয়েছিল কখনোই সে অনুযায়ী অর্থ পাওয়া যায়নি।

‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব হারাচ্ছে এটি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। গত কয়েক বছর ধরেই এটা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ক্যাম্পগুলোতে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, তহবিল এভাবে কমতে থাকলে রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয়দের সংকট তৈরির আশঙ্কার বিষয়টিও সেখানে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দাতা দেশ ও গোষ্ঠীকে আগেই অবহিত করা হয়েছে।

এসব কর্মকর্তার মতে, রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি কমে গেলে সেটি ত্রাণ কাজকে বাধাগ্রস্ত করবে। এ ধরনের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে। যার প্রভাব পড়বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর।

ফারাহ কবির বলেন, এ সংকটকে এড়িয়ে না গিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বরং রোহিঙ্গাদের পাশে আরো শক্তভাবে দাঁড়ানো উচিত।

ওদিকে, পাঁচ বছর পার হলেও রোহিঙ্গারা কবে মিয়ানমারে ফিরে যাবে সে কথা কেউই বলতে পারছে না। এনিয়ে যে আলোচনা চলছিল তারও কোনো গতি নেই।

ফলে নিজ দেশে ফেরা অনিশ্চিত জেনেই অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশেই নিজেদের ভাগ্য অন্বেষণে ব্যস্ত। বৈধভাবে কাজের সুযোগ না থাকলেও জীবনের তাগিদেই তারা জীবিকা খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877