স্বদেশ ডেস্ক: দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মধ্যেও চিকিৎসা নিয়ে ব্যবসার ফাঁদ পাতার অভিযোগ উঠেছে৷ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনিস্টক সেন্টার এবং ওষুধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উঠেছে এই অভিযোগ৷ রোগ পরীক্ষার দাম ঠিক করে দেয়ার পরও তা মানা হচ্ছে না৷
ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে এক ডেঙ্গু রোগীর ২২ ঘন্টার চিকিৎসায় বিল ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৪ টাকা৷ এটা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হলেও চুপ আছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ ওই রোগী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবীর স্বাধীন৷ ২৬ জুলাই রাতে মারা যান তিনি৷ আরো একটি হাসাপতালের বিলের কপি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল৷ সেখানে পাঁচ দিনের চিকিৎসা খরচ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা৷ মুখ বন্ধ রেখেছে ওই হাসপাতালটিও৷
ডেঙ্গু পরীক্ষা ফি পাঁচ শ’ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও মানছে না ঢাকার বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ল্যাবএইড স্পেসালাইজড হাসপাতাল, পপুলার ডায়গনিস্টিক সেন্টার ও ইবনে সিনা হাসপাতাল৷ দ্বিগুনের বেশি অর্থ আদায়ের কারণে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর৷
২৮ জুলাই ডেঙ্গুর তিন ধরনের পরীক্ষার দাম বেঁধে দেয় সরকার৷ অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পাঁচ শ’, সিবিসি চার শ’ টাকা৷ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘‘প্রাইভেট হাসপাতালের জন্য সরকার যেটা নির্ধারণ করে দিয়েছে তাও অনেক বেশি৷ অ্যান্টিজেন হলো ডেঙ্গু নির্ণয়ের টেস্ট৷ তিন দিনের মধ্যে করতে হয়৷ এর একটি কিটের দাম মাত্র এক শ’ ৪৫ টাকা৷ সিবিসি প্লাটিলেট কাউন্টের পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ এক শ’ টাকার বেশি লাগে না৷ আর অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে হয় ছয় দিন পর৷ এটার টেস্ট কিটও ১৪৫ টাকা৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় হাসপাতালে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের বেশি থাকতে হয় না৷ বেসরকারি হাসপাতালে কেবিনে সব মিলিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকার বেশি চিকিৎসা খরচ হওয়া উচিত না৷ সরকারি হাসপতালে সাধারণ বেডে চিকিৎসা ফ্রি৷ আর কেবিনে পাঁচ দিনে সর্বোচ্চ সাত-আট হাজার টাকা লাগে৷ ডেঙ্গু চিকিৎসায় তেমন কোনো ওষুধ লাগে না৷”
‘‘এখন প্রাইভেট হাসপাতালগুলো এই সুযোগে অতিরিক্ত মুনাফা করতে চাইছে৷ শুধু তাই নয় বাজারে স্যালাইন সংকট তৈরি হওয়ায় এটা নিয়েও ব্যবসা করা হচ্ছে৷”, জানালেন উত্তম কুমার বড়ুয়া৷
চিকিৎসা শেষে সুন্থ হওয়া কয়েকজন ডেঙ্গু রোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে মধ্যম মানের বেসরকারি হাসপাতালে পাঁচ দিন ভর্তি থাকলে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়৷ তবে প্রতিবেদনে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম আছে সেখানে ৬০-৭০ হাজার টাকা নেয়া হয়৷
এদিকে, পরীক্ষা না করেও রিপোর্ট দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে৷ এই অপরাধে উত্তরার একটি হাসপাতালকে ১৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে৷ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মাসুম আরেফিন বলেন, ‘‘আমরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেউ বেশি দাম নিচ্ছে কিনা তা দেখছি৷ অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালাচ্ছি৷ আবার নিজেরা উদ্যোগী হয়েও অভিযান চালাচ্ছি৷ টেস্টের দাম বেশি নেয়ায় বুধবার পুরান ঢাকার দুটি ক্লিনিককে জরিমানা করা হয়েছে৷”
এদিকে বেসরকারি হাসপাতালের বেড, কেবিন ভাড়া ও চিকিৎসক ফি’র ব্যাপারে কোনো নীতিমালা নেই৷ ফলে এখানে কোনো আইন প্রয়োগ করা যাচ্ছেনা৷ কোনো কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীকে চিকিৎসকের ভিজিটিং দিতে হয় তিন হাজার টাকা৷ বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷