স্বদেশ ডেস্ক:
জ্বালানি তেল ও পরিবহন ভাড়াসহ সব নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলায় ছাত্রদল নেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো: আব্দুর রহিমকে হত্যার প্রতিবাদে ধারাবাহিকভাবে সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। গত ২২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি দেশের সব মহানগর, জেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে পালন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে সাংগঠনিক জেলা কমিটিগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক কয়েকজন নেতা জানান, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবনে যে দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে তার প্রতিবাদে শক্তভাবে মাঠে থাকতে চান তারা। মূলত সরকারবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে দলের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি পালনের সময় সংশ্লিষ্ট জেলার সাবেক সংসদ সদস্য ও অতীতে দলের মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারাও মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও নিজ নিজ জেলার কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। তবে লাগাতার কর্মসূচিতে হাজার হাজার লোকসমাগম হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ফুরফুরে ভাব দেখা যাচ্ছে। তারা মনে করেন এবার চলমান আন্দোলনের সফলতা আসবে। এ বিষয়ে তারা আত্মপ্রত্যয়ী। বিএনপি মূলত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ-সমাবেশগুলোয় দলের নীতিনির্ধারকরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়টি বারবার জানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি সরকারের তরফে যত প্রলোভন দেয়া হোক তারা কোনো ফাঁদে পা দেবে না।
এ দিকে চলমান জেলা পর্যায়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমন্বয় এবং কর্মসূচি কতটা সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণের জন্য সব বিভাগে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে আলাদা টিমও গঠন করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে দলের বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা কমিটির কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়- ২২ আগস্ট থেকে প্রতিদিন প্রতিটি জেলা ও মহানগরের কমপক্ষে একটি উপজেলা বা থানায় কর্মসূচি পালিত হবে। উপজেলা, থানা ও পৌরসভার কর্মসূচির তালিকা ঠিক করবে জেলা কমিটি।
ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মসূচি ঠিক করবে উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটি। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো কর্মসূচিতে সহযোগিতা করবে। সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরা কর্মসূচির সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের জন্য ঢাকা বিভাগে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রামে ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান, খুলনায় শামসুজ্জামান দুদু, রাজশাহীতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, সিলেটে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরিশালে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, রংপুরে যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদ, ফরিদপুরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, ময়মনসিংহে যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার এবং কুমিল্লায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ এখন জেগে উঠেছে। বিএনপি জনগণের দল হিসেবে প্রতিবাদী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে। কর্মসূচিগুলো যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়, সেজন্য বিভাগীয় টিম করা হয়েছে। মূলত এই কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মীদের অবস্থান সরেজমিন দেখা, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি থাকলে তা চিহ্নিত এবং বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য কর্মীদের প্রস্তুত করাই হবে আমাদের লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, জ্বালানি খাতের অব্যবস্থাপনা ও সারা দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গত ৩১ জুলাই ভোলায় বিএনপির বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিম। এর প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। সর্বশেষ ১১ আগস্ট ঢাকার নয়া পল্টনে বড় সমাবেশ করে দলটি। ওই সমাবেশে কয়েক বছরের মধ্যে সর্বাধিক লোকসমাগম ঘটে। ফলে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনে স্বস্তি এসেছে। গত কয়েক মাস ধরে দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলো প্রতিবাদে সরব থাকছে। এভাবে জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতারা মনে করেন- গত ১১ আগস্টের জনসভা প্রমাণ করে যে, বিএনপি এখনো বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, শক্তিশালী ও উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।
নরসিংদী-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও দলের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহসম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল নয়া দিগন্তকে বলেন, দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিনই প্রস্তুত। তারা সরকারি দল ও পুলিশের হামলা মামলা উপেক্ষা করে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছে। এসব বিষয় তাদের কাছে এখন মামুলি ব্যাপার। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়ে তারা খুব উৎসাহী। তারা এখন আন্দোলনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। বিএনপি সঠিকভাবেই পথ চলছে বলে আজ সারাদেশে তৃণমূল নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে সংগঠন গোছানোর মাধ্যমে আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে সংসদ সদস্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা প্রকৌশলী আমিরুল মোমিন বাবলু নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বে সঠিকপথেই এগোচ্ছে বিএনপি। সম্প্রতি ঢাকায় বিএনপির বিশাল সমাবেশে অসংখ্য লোকসমাগমই প্রমাণ করে দেশের মানুষ বর্তমান ফ্যাসিবাদ থেকে পরিত্রাণের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম তথা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারেও প্রস্তুত। উপজেলা/ইউনিয়ন বা তৃণমূলে সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি আরো বেশি শক্তিশালী হবে। এভাবে চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী একপর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হবে। সেই পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে বিএনপির মনোনীত এমপি প্রার্থী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বর্তমান সরকারকে আর একমুহুর্তও ক্ষমতায় দেখতে চাননা। তারা আন্দোলনের জন্য সবসময় প্রস্তুত। দলের হাইকমান্ড যখনই ডাক দিবেন তারা সাড়া দিবে।
বরিশাল-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দমন-পীড়ন ও দু:শাসনে দেশের মানুষ অতীষ্ঠ। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ইনশ আল্লাহ গণআন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন ঘটবে। তিনি বরিশালের প্রত্যেকটি কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন বলে জানান।
ঝিনাইদহ-৪ (কালিগঞ্জ) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাজপথে ছিলাম এখনো আছি। তিনি যখন যা নির্দেশনা দিবেন, আমরা তা পালনে সদাপ্রস্তুত।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, উপজেলা/থানা/পৌর ও ইউনিয়ন/ওয়ার্ডে বিক্ষোভ সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে ঢাকা বিভাগীয় মনিটরিং সেল ইতিমধ্যে ঢাকা বিভাগের সকল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং অধীনস্থ সকল জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে প্রস্তুতি সভা করেছে। ইনশা আল্লাহ সব ইউনিটে সমাবেশ সফল হবে।