স্বদেশ ডেস্ক: ‘আমার প্রাণের মানিক, বুকের ধনকে জেলে রেখে কীভাবে ঈদ করব? ওকে ক্ষুধার্ত রেখে কীভাবে খাবো কোরবানির মাংস? এবারের ঈদ আমাদের ভাগ্যে নেই।’
গতকাল শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরিফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
মিন্নির বাবা বলেন, ‘আর দুদিন পরেই ঈদ। আমার স্ত্রী আর ছোট দুটা বাচ্চার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। কান্নায় বুক ভেঙে যায় আমার। নিজকে অপরাধী মনে হয়। বাসায় রান্নাবান্না হচ্ছে না। পাশের বাড়ি এবং আত্মীয়-স্বজন তাদের বাড়ি থেকে যা কিছু খাবার দিয়ে যায় তা খেয়ে সবাই বেঁচে আছি। ঈদ-কোরবানি দূরে থাক, আমার বাসায় স্বাভাবিক যে জীবনযাপন তাও হচ্ছে না। একটি পরিবারের সদস্য মারা গেলে যেরকম অবস্থা হয়, আমার পরিবারের অবস্থাও সেরকম হয়েছে, মরুভূমির মতো।’
মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ে বর্তমানে জেল-হাজতে অসুস্থ অবস্থায় আছে। আট দিন পর পর তার সাথে দেখা হয়। মেয়ের কথা চিন্তা করলে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলি, বুক ফেটে কান্না আসে। কোথায় আমার ঈদ? ছোট দুটো বাচ্চার লেখাপড়া বন্ধ, ওদের ভেতরেও নাই কোনো ঈদের আগ্রহ। ওদের মুখ সব সময় মলিন, তা দেখলে অস্থির হয়ে যাই। আমিসহ আমার পরিবার সব সময় আতঙ্কের মধ্যে আছি, জানি না আমাদের কখন কি হয়ে যায়। পুলিশ সার্বক্ষণিক আমাদের ফলো করে। তাই এবারের ঈদ আমাদের কপালে নেই। ক্ষমতাসীনদের হাত এতই বড় যে, হাইকোর্ট পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করেছে তাই এখন বিধাতার কাছে আমি বিচারের ভার দিলাম, তিনিই বিচার করবেন।’
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। ওইদিনই বিকেল ৩টার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিফাতের মৃত্যু হয়।
পরে ১৬ জুলাই রিফাত হত্যায় সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়ে মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এরপর আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বর্তমানে তিনি জেল-হাজতে রয়েছেন।