স্বদেশ ডেস্ক:
পেরিয়ে গেছে চার বছর। অথচ অডিট হয়েছে মাত্র ৮টি জেলায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে মোট ৩৪টি জেলায়। এখনো বাকি আছে ২৬ জেলা। প্রায় ৭৭ শতাংশ জেলায় কোনো অডিটই হয়নি। তবে যেসব জেলায় অডিট হয়েছে সেগুলোর প্রতিটিতেই পাওয়া গেছে আপত্তি। এছাড়া প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ‘রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ শীর্ষক চলমান প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন চিত্র। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
প্রতিবেদনটি চলতি মাসের শেষদিকে চূড়ান্ত করা হবে। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য কাগজপত্রাদি অডিট অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। ক্রয় কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য বাকি জেলাগুলোতে অডিট কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে পরিচালনার তাগিদ দিয়েছে আইএমইডি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব (আইএমইডির সাবেক সচিব) প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সোমবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প চলমান থাকা অবস্থায় অডিট হওয়াটা জরুরি। তাহলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। এ প্রকল্পে মাত্র ৮টি জেলায় অডিট হয়েছে। এখন বেশিরভাগ জেলাই বাকি আছে। এটি ঠিক হয়নি। অডিট না করাটাও একটা অনিয়ম। এলজিইডির প্রকল্পে এ রকম সমস্যা হয়। তারা অনেক সময় বলে এলজিইডির অভ্যন্তরীণ অডিটের সঙ্গে চলমান প্রকল্পেরও অডিট হয়ে যায়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কেননা প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরের প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা অডিটের তথ্য থাকা উচিত।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী যুগান্তরকে বলেন, যথাসময়ে অডিট না হওয়ায় অবশ্যই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কেননা এতে দুর্নীতি উৎসাহিত হয়। যে উদ্দেশ্যে অডিট করা হয় সেটি যদি সময়মতো না হয় তাহলে পূরণ হয় না। দেরি হলে কোনো অনিয়ম বা অসঙ্গতি থাকলে তা সংশোধনের সুযোগ থাকে না। তাই চার বছরের এতগুলো জেলায় অডিট না হওয়াটা প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় অন্যতম বড় দুর্বলতা। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
সূত্র জানায়, রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ১৭২ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য। গত মার্চ মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অবকাঠামোগত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ শতাংশে। তবে সার্বিকভাবে প্রকল্পটির কাজের মান সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আইএমইডির প্রতিবেদনের খসড়ায় বলা হয়েছে, চলমান প্রকল্পটির আওতায় ৫টি বিভাগের ৩৪টি জেলায় ২ হাজার ১১০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়নের কথা বলা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৮৫২ কিলোমিটার বা ৩৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৪৯৫ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়কের মধ্যে এখন পর্যন্ত উন্নয়ন করা হয়েছে ১১০ কিলোমিটার সড়ক। যা ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখ করা মোট ইউনিয়ন সড়কের ২২ শতাংশ। সেই সঙ্গে ২৫০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কে বৃক্ষরোপণের সংস্থান থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম করা হয়নি। সামনের বর্ষায় শুরু হবে বলে জানা গেছে। ডিপিপিতে চার একর ভূমি অধিগ্রহণের সংস্থান থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। এছাড়া যানবাহনের
মধ্যে ১৮০টি মোটরসাইকেল কেনা এবং প্রকল্প এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় পিকআপ কেনা যায়নি। সরকারের গাড়ি কেনাকাটায় নিষেধাজ্ঞার ফলে জিপ কেনার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
প্রকল্পের দুর্বল দিক সম্পর্কে বলা হয়েছে, অবৈধ স্থাপনা, ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে বাউন্ডারি ওয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি এবং সড়কের গাছ অপসারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সরু সড়কে গাড়ি ঘুরানোর জায়গার অভাব, বাজার অংশে কাজ বাস্তবায়ন করা কঠিন, পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের অভাব এবং উন্নয়ন করা সড়কগুলোর জমির মালিকানা না থাকা। সেই সঙ্গে সংকীর্ণ ও কম প্রশস্ত সড়ক অন্যতম দুর্বল দিক। প্রকল্পের ঝুঁকি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ইলেকট্রিক পোল ও রাস্তার পাশের গাছ অপসারণে দেরি হওয়ায় সড়কের কাজ যথাসময়ে শেষ করার ঝুঁকি রয়েছে।
এছাড়া একই প্যাকেজের আওতায় বিভিন্ন দুর্গম উপজেলায় একাধিক সড়কের কাজ করা। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে কাজের গতি মন্থর হওয়া। আকস্মিক বন্যা, সড়কগুলো নিয়মিত মেরামত না করা এবং বর্ষা মৌসুমে সড়ক মাটি নরম থাকায় যে কোনো সময় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি এবং নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ নাও হতে পারে।
আইএমইডির সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, শুধু প্রতিবেদন তৈরিই আমাদের কাজ নয়। এগুলো চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যেসব ক্রুটি-বিচ্যুতি আছে সেগুলোর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার ফলোআপ করা হবে।