শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

আরেক দফা বাড়ছে ব্যয়

আরেক দফা বাড়ছে ব্যয়

স্বদেশ ডেস্ক:

আরেক দফা খরচ বাড়ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের। মূলত ডলারের দাম বাড়ায় ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে। তবে এর সঙ্গে আরও কিছু খরচও যোগ হবে। এ ছাড়া চীনের এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের অর্থ ছাড়ের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরেই। এর মধ্যে কাজ শেষ না হলে খরচ করতে হবে সরকারি অর্থ। এ ছাড়া গাড়ি স্ক্যানারসহ নানা উপকরণও কিনতে হবে। থানা ভবনসহ ফায়ার স্টেশন নির্মাণ খরচও যোগ হবে প্রকল্পের সংশোধনীতে।

এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের মধ্যে। এখন সেটি করা হচ্ছে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। বর্তমানে কর্ণফুলী টানেলের সংশোধিত নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। নতুন করে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৭৫০ কোটি ৫৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা খরচ বাড়তে যাচ্ছে। প্রকল্পের প্রথম ডিপিপি প্রণয়নকালে খরচ ধরা হয় ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশিদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমছে। এটি সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া অর্থ ছাড়ের প্রভিশন, কেনাকাটা, প্রকল্পের নির্মাণকাজে সংশোধনী- এ রকম নানা খাতে পরিবর্তন করতে হচ্ছে। তাই কিছু খরচ বাড়বে।’

২০১৪ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে দুই দেশের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে (সরকারের সঙ্গে সরকারের) সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীন সরকারই ঠিকাদার সিসিসিসিকে এই টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে। এ বিষয়ে ২০১৪ সালের ৩০ জুন সেতু কর্তৃপক্ষ ও সিসিসিসির মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়।

প্রথম সংশোধনীতে ‘খরচ পরিবর্তনের জন্য সমন্বয়’- এ রকম কোনো খাত রাখা হয়নি। এতে করে শ্রমিকের বিল, পণ্যের দামসহ অন্যান্য কাজে অসুবিধা হচ্ছে। টাকার পরিমাণের সঙ্গে ডলারের দর সমন্বয় করা নিয়ে বেশ অসুবিধা চলছে। তাই ‘প্রাইস কনটিনজনেসি আইটেম’ যুক্ত করা দরকার। এ ছাড়া টানেলের প্রকল্পের ধরনে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে। টানেলের সঙ্গে অ্যাপ্রোচ রোডের ডিজাইনে পরিবর্তন এসেছে। স্থানীয় দাবির বিষয়টি মাথায় রেখে গাড়ির গতিসীমার ব্যাপারটিও যুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া আন্ডারপাস তৈরি করা হচ্ছে। এসব আন্ডারপাসের নকশায়ও পরিবর্তন আনতে হচ্ছে বেশ কয়েকটি স্থানে। কিছু জায়গায় নতুন করে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সার্ভিস রোডও নতুন করে নির্মাণ করা হবে। শুধু তাই নয়, আরেকটি নতুন রুট তৈরি করা হবে। এসব বিষয় প্রস্তাবিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হবে।

সূত্রমতে, বিদ্যমান ডিপিপি অনুযায়ী এক ডলারের দাম ৮০ টাকা। বর্তমানে এক ডলারে খরচ ৯২ টাকা ৫০ পয়সা। তার আগে ধরা হয়েছিল ৮৩ টাকা ৭৮ পয়সা। এ কারণে মুদ্রার হার পরিবর্তনে প্রকল্পের খরচ বাড়ছে। এদিকে এক্সচেঞ্জ রেট বৃদ্ধির কারণে ভ্যাট ও আইটি খাতেও খরচ বাড়ছে। এর বাইরে আরেকটি দিক হচ্ছে, বাণিজ্যিক চুক্তির সমন্বয়। চুক্তিমূল্য ৭০৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। ‘প্রিফারেনসিয়াল বায়ার্স’ ক্রেডিটের ঋণ চুক্তির কারণে এক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ছে। আছে প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির বিষয়টিও। ২০২২-এর ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদকাল নির্ধারণ আছে। এখন সেটি করা হচ্ছে ২০২৫ সালের ৩০ জুন। নতুন প্রস্তাবে, ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিফেক্ট নোফিকেশন পিরিয়ড পার হওয়ার পর আরও ৬ মাস ধরা হয়েছে। টানেলের প্রকল্প খরচের সঙ্গে থানা ভবন ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করার বিষয়টি যুক্ত করা হচ্ছে। টানেলের দুই পাশে থানা ভবন ও ফায়ার স্টেশন থাকবে। এজন্য খরচ ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। তা ছাড়া টানেলের নির্মাণ খরচে অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ; আর ঋণ প্রাপ্তির সময় আছে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত। ঋণের অর্থ ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো জরুরি। কিন্তু এক্সিম ব্যাংক বাড়াতে রাজি হয়নি এখনো। এতে প্রকল্পের কাজ প্রভাবিত হবে। এক্সিম ব্যাংকের এই ঋণ ‘প্রাপ্তির সময়কাল’ আরও ৬ মাস যোগ করে ২০২৩ সালের ৬ মে পর্যন্ত বর্ধিতকরণের কথা লিখিতভাবে চীনকে জানানো হয়েছে। এজন্য সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে দেশটির এক্সিম ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরও রাজি না হলে সরকারি ফান্ডে টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে। এজন্য ডিপিপিতে সংশোধনী আনতে হচ্ছে। এ ছাড়া সার্ভিস এরিয়ার সুবিধা বাড়াতে টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে। পূর্ত কাজের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সোফা, বেড, ফার্নিচার, টেবিল, চেয়ার এসব কেনার সংস্থান রাখা হচ্ছে। টানেলের নিরাপত্তার জন্য ৫৬টি ভেইকল স্ক্যানার কেনা হবে। এ জন্য লাগবে ২০০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার টানেলের সঙ্গে থাকবে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার টানেল অ্যাপ্রোচ রোড। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার ভায়া ডাক্ট/ব্রিজ থাকবে। টোল প্লাজার এলাকা হচ্ছে ৭ হাজার ৬০০ বর্গমিটার। ২০১২-১৩ সালে কর্ণফুলী টানেলের সমীক্ষা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর একনেক প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। ইআরডির সঙ্গে চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণচুক্তি হয়েছে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। আর এটি ইফেকটিভ হয়েছে ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর। ৫ বছরে নির্মাণ করা হবে দুই বছরের ডিফেক্ট নোটিফিকেশন পিরিয়ডসহ। এরপর ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর ডিপিপি সংশোধন করা হয় একনেকের মাধ্যমে। এরপর প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে ৫ শতাংশ অর্থাৎ, ৪৯৪ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করানো হয় পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে। ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর মিলে সেই অনুমোদন।

সেতু বিভাগের তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মিত হলে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো আরও গতি পাবে। এই টানেলের বহুমুখী সুবিধা নেওয়ার অপেক্ষায় দেশের সবাই। এতে করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের অর্থনীতি ও পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হার সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে এ প্রকল্পে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877