মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন

ঈদ কতটা আনন্দ নিয়ে এসেছে আফগানিস্তানে?

ঈদ কতটা আনন্দ নিয়ে এসেছে আফগানিস্তানে?

স্বদেশ ডেস্ক

আফগানিস্তানের লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধার কষ্ট নিয়েই রোববার ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই উৎসব এবার আফগানদের খুব বেশি আনন্দ দিতে পারেনি। কেননা, দেশটির ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ খাদ্যসংকটে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

৩৮ বছর বয়সী জামাল (ছদ্মনাম) সরকারি চাকরি করতেন। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তিনি সেই চাকরি হারিয়েছেন। তিনি বলছিলেন, এবারের ঈদ তার জীবনে খুব সামান্য আনন্দ নিয়ে এসেছে। কেননা, তার পরিবারের সদস্যদের সেহরি ও ইফতারে খাদ্য যোগান দিতে তিনি কাজ বা সহায়তা খুঁজছিলেন। ইসলামের এই পবিত্র মাসের বেশিরভাগ দিন উপবাসের পর তাদের ইফতার করতে হয়েছে রুটি ও পানি দিয়ে।

জামাল বলছিলেন, গত আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে শুরু হয়েছে একটি ‘মানবিক সংকট’। এরপর থেকে তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য লড়াই করছেন, যাতে পরিবারের ১৭ সদ্যসের জন্য কয়েক টুকরো রুটি সংগ্রহ করতে পারেন। সেই সামান্য খাবারের জন্যও তাদের অনেক সময় প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সহায়তার জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।

পাকিস্তানে শরণার্থী শিবিরে বড় হওয়া জামাল বলেন, ‘কে আমাকে টাকা বা খাবার দেবে? পুরো শহর দারিদ্র্যের নিচে বাস করছে। আমি যে শরণার্থী শিবিরগুলোতে বড় হয়েছি, সেখানেও আমি এমন কিছু দেখিনি।’

এর আগের রমজানে তাদের অবস্থা এতটা ভয়াবহ ছিল না বলে জানান জামাল। তিনি বলেন, ‘প্রতি রমজান ও ঈদে আমরা পরিবার ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ইবাদত করি। রমজান ও ঈদ সবসময়ই আমাদের কাছে একতা ও ক্ষমার বার্তা নিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল।’

আফগানিস্তানে মসজিদে সাম্প্রতিক হামলার কথা উল্লেখ করে জামাল বলেন, ‘এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে রমজান। আমরা শুধু ক্ষুধার্তই নই, ঐক্যও নেই, শান্তিতে উপাসনাও করতে পারছি না।’

কাবুলে পবিত্র রমজান মাসে আফগান জনগণ ইফতার করছেন

 

খাদ্য নিরাপত্তার মাত্রা কমে গেছে

গত মার্চে আফগানিস্তান সম্মেলনে জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি আফগানের (দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি) বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্য নিরাপত্তার মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। এতে করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর (এনজিও) পক্ষে সহায়তা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকায় আফগানিস্তানে কয়েকটি এনজিও সহায়তা ও সেবা বাড়িয়ে দিয়েছে।

দেশটির নানগারহার প্রদেশের সমাজকর্মী আব্দুল মানান মোমান্দ বলেন, ‘পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে খাদ্য অনুদানের জন্য আমরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এই রমজানেও তা করেছি। তবে এই বছরটি সবচেয়ে খারাপ গেছে।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা একটি প্রদেশের প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছি। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত আমরা ১২ হাজারের বেশি পরিবারকে সহায়তা প্রদান করেছি।‘

তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটির অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে এই এনজিওকর্মী বলেন, নতুন যেসব পরিবার তাদের কাছে সহায়তা চাচ্ছে, তাদের অনেকের অবস্থা আগে ভালো ছিল। কিন্তু তালেবান ক্ষমতা দখলের পর তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়েছে।

উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, ব্যাপক বেকারত্ব

অর্থসংকটের সঙ্গে দেশটিতে দেখা দিয়েছে চরম মুদ্রাস্ফীতি। এর সঙ্গে রয়েছে বেকারত্ব। এই পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আহমেদ জামাল সুজা বলেন, ‘এই অঞ্চলের দেশগুলোতে রমজানে সবসময়ই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। তবে এবারের রমজানে মূল্যবৃদ্ধি আফগানিস্তানে ইতোমধ্যে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হারকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।’

এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের একটি দল মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ২০২১ সালের আগস্টে মার্কিননিয়ন্ত্রণাধীন সরকার পতনের পর আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে সম্পদগুলো ফ্রিজ করা হয়েছে, তা যেন চালু করে দেওয়া হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877