স্বদেশ ডেস্ক:
আবারও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এতে রীতিমতো উদ্বেগে বিশ্ব। এর মধ্যে আশা জাগিয়েছে করোনা চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার বড়িও। তবে এ বড়ির উচ্চমূল্যের কারণে এর সহজলভ্যতা নিয়ে শঙ্কায় ছিল নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে জাতিসংঘ ও মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মার্ক। জাতিসংঘের সংস্থা মেডিসিনস পেটেন্ট পুলের (এমপিপি) এক চুক্তির ফলে মার্কের করোনা বড়ি সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করা হবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এই সুবিধা পাবে বাংলাদেশসহ ১০৫টি দেশ। খবর সিএনএনের।
মার্ক তাদের করোনার বড়ি মলনুপিরাভির নামে বাজারজাত করেছে। গত অক্টোবরেই এক চুক্তিতে এমপিপিকে এই বড়ি উত্পাদনের আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছিল মার্ক। এরপর নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর হাতে ওষুধটি তুলে দিতে ওই চুক্তির আওতায় বিশ্বের ২৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে এমপিপি। গত বৃহস্পতিবার নতুন চুক্তির বিষয়টি সামনে আনে জাতিসংঘের ওই সংস্থাটি। চুক্তি অনুযায়ী কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এই বড়ি সরবরাহ আগামী মাসে শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এমপিপির একজন মুখপাত্র।
এমপিপির চুক্তির তথ্যমতে, বিশ্বের ২৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি মলনুপিরাভিরের কাঁচামাল উত্পাদনের বিষয়টি দেখভাল করবে। ১৩টি প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল তৈরির পাশাপাশি মার্কের ওই করোনার বড়িটি উত্পাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। বাকি ৯টি প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে ওষুধটি যথাযথভাবে উৎপাদন করা। এই বড়ি উৎপাদন করার জন্য বাংলাদেশ, চীন, মিসর, জর্ডান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে।
মার্কের তথ্যমতে, করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় পাঁচ দিনে এক কোর্স মলনুপিরাভির বড়ি (৪০টি) গ্রহণ করতে হয়। মার্কের সঙ্গে করা এমপিপির চুক্তি অনুযায়ী, কম দামে মলনুপিরাভির উৎপাদনে কোনো রয়্যালটি নেবে না মার্ক। ফলে দরিদ্র দেশগুলোর বাসিন্দারা কমবেশি ২০ মার্কিন ডলার খরচ করলেই এক কোর্স বড়ি পাবেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা। সম্প্রতি করোনা চিকিৎসায় মলনুপিরাভিরের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যেই মার্কের কাছ থেকে ১৭ লাখ কোর্স বড়ি কিনতে রাজি হয়েছে দেশটি। মার্কিন সরকারের কাছে মার্ক প্রতি কোর্স বড়ির দাম ধরেছে ৭০০ মার্কিন ডলার।
মার্কের মতোই করোনা চিকিত্সায় প্যাক্সলোভিড নামে মুখে খাওয়া বড়ি এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার। ফাইজারের করোনা টিকাও বাজারে রয়েছে। গত ডিসেম্বরে মার্কের মলনুপিরাভিরের পাশাপাশি প্যাক্সলোভিডের অনুমোদন দেয় মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজারের প্যাক্সলোভিড ও মার্কের মলনুপিরাভি বড়ি ভাইরাস পুনরুৎপাদনের সক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং একপর্যায়ে ভাইরাসের শক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। মলনুপিরাভি বড়ি ঝুঁকিতে থাকা করোনা রোগীর মৃত্যুঝুঁকি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে মার্কের চেয়ে ফাইজারের বড়ি কার্যকারিতায় এগিয়ে। করোনায় আক্রান্ত হওয়া উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার প্রায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে দেয় ফাইজারের প্যাক্সলোভিড।
এমপিপির এক মুখপাত্র বলেছেন, চুক্তি ঠিকঠাকভাবে সামনে এগোলে কম দামে মলনুপিরাভির সরবরাহ শুরু হবে আগামী মাসের শুরুর দিকে। ওষুধগুলো সরবরাহ করা হবে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, ফিলিপাইন, মিসরসহ ১০৫টি দেশে।
তবে মলনুপিরাভিরের তুলনামূলক কম কার্যকারিতার কারণে দ্বিধায় রয়েছে অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্র বড়িটির অনুমোদন দিলেও বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ এখনো এ পথে হাঁটেনি।