শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন

ফোনের কললিস্ট স্বামীকে দেখতে না দেওয়ায় খুন হন শিমু

ফোনের কললিস্ট স্বামীকে দেখতে না দেওয়ায় খুন হন শিমু

স্বদেশ ডেস্ক:

ফোনে কথা বলতে থাকায় সকালে স্বামীকে চা বানিয়ে না দেওয়া এবং ফোনের কল লিস্ট স্বামীকে দেখতে না দেওয়ায় নির্মম ভাবে খুন হন চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু। ঘটনাক্রমে ওই সময় উপস্থিত হয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন শিমুর স্বামীর বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদও (৪৭)।

গতকাল শুক্রবার পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে তিন দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনেই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন নোবেল ও ফরাহাদ।

পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন সকালে নোবেলের কাছে দুই হাজার টাকা ধার নিতে রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসায় যান ফরহাদ। এসময় নোবেল ও শিমুর মধ্যে ঝগড়া চলছিল। নোবেলের অনুরোধে শিমুকে জাপটে ধরে ফরহাদ আর নোবেল গলা টিপে হত্যা করে শিমুকে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নোবেল ও ফরাহাদ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহের জেরে সেদিন শিমুকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তার স্বামী নোবেল। হত্যা করার কথা আদালতে স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। আবার হত্যা ও লাশ গুমের কাজে নানাভাবে সহযোগিতা করেন তার বন্ধু ফরহাদ। তিনিও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। দুজনই এখন কারাগারে।

এদিকে শিমু হত্যার ঘটনায় পুলিশ প্রথমে জানিয়েছিল ফরহাদ বন্ধু নোবেলের অনুরোধে শুধু লাশ গুমে সহায়তা করেছে। পুলিশ সদরদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতেও এমন দাবি করা হয়।

ফরহাদকে নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঢাকা জেলার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাবউদ্দিন কবীর গতকাল শুক্রবার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি ফরহাদ লাশ গুমে সহায়তা করেছে। মূলত ফরহাদ যেহেতু সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে সেহেতু নোবেল বন্ধু ফরহাদকে বাঁচাতে দায়টা নিজের ঘাড়ে নেয়। পরে তাদের মোবাইল রেকর্ড, ঘটনাস্থলের প্রমান ও তথ্য প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি ফরহাদও হত্যায় অংশ নেয়। প্রথমে তাদের দুজনকে আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করি। পরে একসঙ্গে সামনাসামনি করে ক্রস এক্সজামিনেশন করি। তখন নোবেল জানিয়েছে, এটা (হত্যা) প্রথমে একা চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নাই। পরে ফরহাদ আমাকে সহায়তা করেছে। দুজন মিলেই কাজটা (হত্যা) করা হয়েছে।

হত্যায় ফরহাদের কি স্বার্থ ছিল জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ফরহাদের কোনো স্বার্থ নেই। ফরহাদ পরিস্থিতির শিকার। সে একজন অভাবগ্রস্থ লোক। চার থেকে পাঁচ বছর ধরে সে বেকার, একটা মেসে থাকে। নোবেলের সঙ্গে তার ৪০ বছরের বন্ধুত্ব। মাঝে মধ্যেই নোবেলের কাছ থেকে টাকা পয়সা ধার নিয়ে সে চলে। ওইদিনও সে দুই হাজার টাকা ধার নিতে নোবেলের বাসায় গিয়েছিল।

হত্যার সময় নোবেল ও ফরহাদ ছাড়া অন্য কেউ উপস্থিত ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, থাকতে পারে। তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত তৃতীয় কারও উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

ঘটনার আগে শিমুর সঙ্গে নোবেলের কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাবউদ্দিন কবীর বলেন, ঘটনার দিন সকালে নোবেলকে চা বানিয়ে না দিয়ে শিমু মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছিল। এসময় নোবেল শিমুর কাছে মোবাইল ফোনটি চেয়ে বলে, কার সঙ্গে কথা বলছ, ফোনটা দাও। কিন্তু শিমু দেয়নি। নোবেল ফোনটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসময় ড্রয়িং রুমে বসে থাকা ফরহাদ বেডরুমে গিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করে। ঠিক তখনই শিমু নোবেলকে ধাক্কা দেয়। এসময় নোবেল ফরহাদকে বলে, ‘দোস্ত তুমি ধরো।’ ফরহাদ তখন শিমুকে ধরে। আর নোবেল শিমুকে হত্যা করে।

শিমু কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। রাতে তাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা দুজনে (শিমু ও নোবেল) লেট নাইটে বাসায় আসেন। রাতে তাদের মধ্যে ঝামেলা হওয়ার কোনো তথ্য এখনো তদন্তে পাওয়া যায়নি। তবে আমরা জানতে পেরেছি শিমুর রাতে নিদ্রাহীনতার সমস্যা আছে, সহজে ঘুম আসে না। এজন্য নিয়মিত ঘুমের টেবলেট খেয়ে ঘুমায়। ঘটনার আগের রাতেও সে ঘুমের টেবলেট খেয়ে ঘুমায়। তবে সকালে শিমু নোবেলের আগে ঘুম থেকে ওঠে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (অপরাধ দক্ষিন) মো. হুমায়ূন কবীর বলেছেন, নোবেলের বন্ধু ফরহাদ সরাসরি খুনের সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। এ হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ঝোপের ভেতর থেকে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। পরে পুলিশ জানতে পারে লাশটি চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে শিমুর স্বামী নোবেল ও নোবেলের বন্ধু ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877