স্বদেশ ডেস্ক:
উন্নয়ন প্রকল্পের পরিবেশ, জমির শ্রেণি ও তার ব্যবহার এবং সামাজিক প্রভাব বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি গঠনের যে প্রস্তাব একজন ডিসি দিয়েছিলেন, তা নাকচ করে দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেন, এ ধরনের কমিটি ছাড়াই আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তদারকি চালিয়ে নিতে পারবেন ডিসিরা। তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন। গতকাল সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২২’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বৃহস্পতিবার সম্মেলন শেষ হবে। সব অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
ডিসিদের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে পরিকল্পনা বলেন, ‘বৈঠকে জেলা প্রশাসকরা চেয়েছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন জেলাপর্যায়ে কমিটি করা হয়। আমরা বলেছি- কমিটির প্রয়োজন নেই। এলাকার ভেতরে কাজ দেখার অধিকার ডিসিদের আছে। আমরা আপনাদের সঙ্গে ঘন ঘন যোগাযোগ করি, চিঠি দিই। সেগুলো অনুযায়ী আপনারা কাজ করবেন।’
অন্যদিকে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ভূমি ও গৃহহীনদের দীর্ঘমেয়াদি, টেকসই ও জমি সাশ্রয়ের জন্য বহুতল ভবন করার প্রস্তাবে সায় দেয়নি সরকার। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে ডিসিরা বহুতল ভবন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বহুতল ভবন হলে সেটি স্থায়ী হবে। তবে বহুতল ভবন করতে অনেক টাকা প্রয়োজন। এতে প্রধানমন্ত্রীর যে প্রত্যাশা, মুজিববর্ষে কেউ ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না, সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের জন্য এটি করার সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘বহুতল ভবন হলে তাদের সেখানে ৫০-১০০ বছর থাকতে হবে। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তারা নিজেদের অবস্থান থেকে উত্তরণ করতে পারবেন। বহুতল ভবন হলে যেটি অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
কায়কাউস বলেন, ‘ডিসিরা আরও কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। বাস্তবসম্মত প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন, যেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
মাঠ প্রশাসনে কাজ করতে গিয়ে ডিসিরা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘এমন কোনো বিষয় পাইনি। তবে মহামারীসহ বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসক ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা সমন্বয় করে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেটি নিয়ে আমি গর্বিত।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ডিসিরা তার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বাধীনতাকামী সংগঠন ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মানার্থে চট্টগ্রামে স্বাধীনতা চত্বর নির্মাণের যে প্রস্তাব ডিসিরা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য আমি জমিও দেখে এসেছি। কালুরঘাটের আশপাশে এ চত্বর হবে।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো ভূমিসংক্রান্ত কাজই করে। এ জন্য আমরা বলেছি- সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন আনা যায় কিনা, তা দেখতে। ‘বিজনেস অব এলোকেশন’ সংশোধন করে এ কাজটি করতে হবে।”
প্রথম দিন ৫টি অধিবেশন হয়। এসব অধিবেশনে অভ্যন্তরীণ সম্পাদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তারা ডিসিদের সঙ্গে প্রস্তাবিত বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। ডিসিদের যেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো বাস্তবায়নের আশ^াস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।